বাংলাদেশের নতুন কোচ জেমি ডে

ব্রিটিশ ফুটবল কোচের সঙ্গে কথা পাকা হয়ে গেছে। তাই আর নাম প্রকাশে দ্বিধা নেই বাফুফের। নাম তার জেমি ডে, আগামী জুন থেকে তার হাতে উঠছে বাংলাদেশ ফুটবল দলের দায়িত্ব। গত বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ন্যাশনাল টিমস কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ।

অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যান্ড্রু ওর্ড অধ্যায় শেষ হয় গত মাসে। মাত্র দশ মাসের কার্যকাল। এই অস্ট্রেলিয়ান চাকরি ছেড়ে যাওয়ার পরের মাসেই জাতীয় দল কমিটি চূড়ান্ত করেছে নতুন কোচ জেমি ডে-কে। খুব হাইপ্রোফাইল কোচ নন, ইংল্যান্ডে নিচের সারির দলে কাজ করেন। ওর্ডের মতো এটাই হতে যাচ্ছে ইংলিশ কোচের প্রথম জাতীয় দল। তার বড় কোচ হওয়ার ইচ্ছাটাকেই বেশ মনে ধরেছে কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদের, ‘খুব কম বয়সে কোচ হয়েছেন ডে। অত বড় দল সামলানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও তার মধ্যে বড় হওয়ার ইচ্ছা দেখেছি। কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আশা করছি, খুব আন্তরিকভাবেই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ভালো করার চেষ্টা করবেন তিনি।’

মাত্র ২৯ বছর বয়সেই ডে ফুটবল কোচিং শুরু করেন ওয়েলিং ইউনাইটেডের কোচ কাম খেলোয়াড় হিসেবে। ওয়েলিং ইউনাইটেড ইংলিশ ফুটবল কাঠামোর ষষ্ঠ বিভাগের দল, সেখানে ২০০৯ সালে শুরু করার পর মনোযোগী হন কোচিং লাইসেন্সে। ফুটবল কোচিংয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন মাঠের কোচিং। কয়েকটি ক্লাবে প্রধান কোচের ভূমিকায় কাজ করার পর এ বছর সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন ব্যারো অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল ক্লাবে।

সেখানে কয়েক মাস কাজ করে উয়েফা এ লাইসেন্সধারী এই ব্রিটিশ নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব। অর্থাৎ ইংলিশ ফুটবলের পঞ্চম বিভাগের দল থেকে সোজা জাতীয় দল! ক্লাব আর জাতীয় দলের প্যাটার্ন কিন্তু এক নয়। ক্লাবে দীর্ঘ সময় ধরে খেলোয়াড়দের পাওয়া যায়, সুবাদে ফুটবলারের সামর্থ্য-দুর্বলতাও থাকে কোচের নখদর্পণে। জাতীয় দলের বেলায় ব্যাপারটা ভিন্ন, শেখানোর সুযোগ খুব কম পান কোচ। জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান এটাকে বড় সমস্যা মনে করছেন না, ‘এই অফ সিজনে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা তার হাতেই থাকবে। ২০ মে থেকে ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, একদম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত চলবে এই ট্রেনিং। তত দিনে খেলোয়াড়দের সম্পর্কে তার ধারণা হয়ে যাবে এবং খেলার একটা স্টাইলও তিনি দাঁড় করিয়ে ফেলবেন।’ এ বছর সেপ্টেম্বরে ঢাকায় হবে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, তার আগে আছে এশিয়ান গেমস। সাফকে লক্ষ্য ধরেই বাফুফে তার সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করেছে। তার আগে কোনো পক্ষ চুক্তি থেকে বের হতে চাইলেই বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে।

পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির এই মিডফিল্ডার ইংল্যান্ডের জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬, ১৭ ও ১৮ দলে খেলেছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত গোল করেছেন ২৬টি। ১৯৯৭-৯৯ সালে আর্সেনালে থাকলেও একাদশের বাইরে ছিলেন। পরবর্তীতে বর্নমাউথে গিয়ে ২০ ম্যাচে এক গোল পান। ক্যারিয়ারে ডোভার অ্যাথলেটিক, ওয়েলিং ইউনাইটেডের মতো দলে খেলেছেন।

ম্যানেজার হিসেবে পরিসংখ্যানও খুব একটা খারাপ নয় জেমির। ২০০৯ সালে ওয়েলিং ইউনাইটেডে যোগ দিয়ে ২৪৫ ম্যাচের ১১৭টিতে জয়, ৭১টিতে ড্র করলেও হেরেছেন ৫৭ ম্যাচে। ২০১৪ সাল থেকে ’১৫ পর্যন্ত এবসফ্লিট ইউনাইটেডে ২৫ ম্যাচে ১০ জয়, পাঁচটিতে ড্র করলেও হেরেছেন ১০টিতে।

২০১৬ সালে এক বছরে ব্রেনট্রি টাউনে ১২টি ম্যাচে ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন। যেখানে তার সাফল্য দু’জয়, তিন ড্র ও সাত ম্যাচে হার। পরের বছর ফের ওয়েলিং ইউনাইটেডে যোগ দিয়ে শতভাগ সাফল্য পান জেমি। ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন। ক্যারিয়ারে তার সাফল্যের হার ৪৬.৮৮ ভাগ।

অভিষেক নাকি প্রিয়াঙ্কার স্বামী, জায়রা মেয়ে!

আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছবিতে গীতা কুমারীর ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় জায়রা ওয়াসিমকে। এরপর থেকেই জায়রা এখন বলিউডের চেনা মুখ। ভালো অভিনয়ের জন্য প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। সেই ১৬ বছরের জায়রা নাকি বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মেয়ে! হ্যাঁ, ঘটনা সত্যি! তবে তা রিয়েল নয়, রিল লাইফে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর, ক্ষীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে জন্মানো এক তরুণীকে নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করবেন পরিচালক সোনালী বোস। ওই সিনেমায় আইশার চরিত্রে অভিনয় করবেন জায়রা ওয়াসিম। আর সেখানেই জায়রার বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন প্রিয়াঙ্কা এবং অভিষেক।

জায়রা বলেন, সোনালী বোসের স্ক্রিপ্ট তিনি দেখেছেন। এবং স্ক্রিপ্ট দেখে পছন্দ হওয়াতেই তিনি ওই সিনেমার জন্য রাজি হয়েছেন। এখন দেখা জায়রা, প্রিয়াঙ্কা এবং অভিষেকের জুটি কতটা পছন্দ করেন দর্শকরা।

সাহরি খেতে ডাকায় ইমামকে পিটিয়ে আহত

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ভোররাতে মসজিদের মাইকে সাহরি খাওয়ার জন্য ডাকায় ইমামকে পিটিয়ে আহত করেছে মোশারফ নামে প্রবাস ফেরৎ এক যুবক। এতে তার ঘুমের ব্যঘাত হয় বলে সে ক্ষুব্ধ হয়। এ ঘটনায় এলাকার মুসুল্লিদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে আগত মুসুল্লিদের নিয়ে এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধান ইমাম না থাকায় সমাধান করা যায়নি। আগামী শুক্রবার বিষয়টি সমাধান করা হবে।
স্থানীয় মুসুল্লিরা জানায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের সাদকপুর নোয়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সহকারী ইমাম মোঃ মাসুম (৩০) শুক্রবার ভোর রাতে প্রথম রমজানের সাহরি খাওয়ার জন্য মাইকে মুসুল্লিদের ডাকেন। ভোর সাড়ে ৩ টায় ইমাম সেহেরি খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এসময় মসজিদের পূর্ব পার্শ্বের বাড়ির আবদুল বারেকের ছেলে মোশারফ হোসেন (৩৫) ইমামের উপর হামলা চালায়। ইমামের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে ওই মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, গত ৬/৭ মাস পূর্বে সহকারী ইমাম হিসেবে মোঃ মাসুমকে নিয়োগ দেয়া হয়। মোঃ মাসুম মসজিদে থেকে মুসুল্লিদের প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। পবিত্র রমজান মাসে সাহরির সময় মাইকে ডেকে মুসুল্লিদের জাগিয়ে দেয়ার জন্য ইমামকে বলা হয়েছিল। শুক্রবার ভোর রাতে ইমাম সাহেব ঘুম থেকে উঠার জন্য মাইকে ডাকতে থাকেন। এসময় মসজিদের পাশের বাড়ির মোশারফ নামে এক যুবকের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে ওই অভিযোগে সে ইমাম সাহেবকে মারধর করে। মোশারফ গত এক মাস পূর্বে সৌদি আরব থেকে দেশে আসে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মোশারফের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে বলেন, এবিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিআইএ প্রধান হিসেবে জিনা হ্যাসপেলের নিয়োগ চূড়ান্ত

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক হিসেবে বিতর্কিত জিনা হ্যাসপেলের নিয়োগ শেষ পর্যন্ত অনুমোদন দিয়েছে সিনেট। সিআইএ’র ইতিহাসে প্রথম নারী পরিচালককে বৃহস্পতিবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর থাইল্যান্ডে সিআইএ’র আটককেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন জিনা। ওই সময় বন্দীদের ওপর নির্যাতনে ব্যবহৃত বিতর্কিত ওয়াটার বোর্ডিংয়ের সমর্থক ছিলেন তিনি। তার সামনেই বন্দীদের ওপর এই নির্যাতন চালানো হতো।

গত মাসে সিআইএ’র পরিচালক মাইক পম্পেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাম্প। এরপরই সংস্থাটির প্রধানের পদ শূন্য হয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার সিনেটে ৫৪-৫৫ ভোটে জিনা হ্যাসপেলের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। ডেমোক্র্যাট দলের ছয় সদস্য পক্ষত্যাগ করে জিনার পক্ষে ভোট দেন। এদেরই একজন মার্ক ওয়ার্নার।

তিনি বলেছেন, সিআইএ আর কখনো তথাকথিত সেই নির্যাতন পদ্ধতি প্রয়োগ করবে না। এমনকি স্বয়ং প্রেসিডেন্টও যদি দাবি করেন তারপরেও সংস্থা আর এ কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

রমজানে শুধু খাবার নয় মন্দ থেকেও বিরত থাকতে হবে

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। বিশ্বের সকল মুসলিম প্রতি বছর এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। মাহে রমজান, আস্-সালাম, স্বাগতম হে রমজান’ এসব বলে মুসলমানরা বরণ করে নেন রমজানকে। রমজান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত সুপরিচিত এক নাম। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

হযরত আদম (আ.), নূহ (আ.), মূসা (আ.), দাউদ (আ.)সহ সমস্ত নবীর উপর এ মাসে রোজা ফরজ ছিল। এটা নতুন কোন বিষয় নয়। বাইবেলেও রোজা রাখার নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ মাস সকল জাতির জন্য হাদিয়াস্বরূপ। এতে রয়েছে আনন্দের বার্তা, তাকওয়া অর্জনের উত্তম পন্থা, নেকীর প্রেরণা, পরের মঙ্গল কামনা, দান খয়রাত, তিলাওয়াত, তারাবিহ্, সাহরী, ই’তিকাফ, শবে কদর, ইফতার, দোয়া অগণিত ও অফুরন্ত নেয়ামতরাশি এবং কঠিন সাধনার মাধ্যমে ইসলাহে নাফস বা আত্মসংশোধনমূলক শিক্ষা।

কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, যে তার নাফসকে সংশোধন করতে পেরেছে সে সফলকাম হয়েছে। হাদীসে এসেছে, তোমাদের শরীরের ভিতরে একটা টুকরা রয়েছে। যখন ওই টুকরাটা ভাল থাকবে, তখন পুরো শরীর বা মানুষটাই ভাল থাকবে। যখন ওই টুকরাটা মন্দ হয়ে যাবে, তখন পুরো মানুষটাই মন্দ হয়ে যায়। জেনে রাখ, ইহা হলো ক্বালব। এগুলো সংশোধন করার একটা উপায় হলো, রোজা রাখা।

প্র্যাক্টিকেল ক্লাস বা বিশেষ ট্রেনিং নেয়ার মাধ্যমে ওই ক্বালব, নাফস বা আত্মাকে সংশোধন করতে হবে। এজন্যে বিশেষ করে আল্লাহ পাক যে সময় বা তারিখ দান করেছেন এর নাম মাহে রমজান। রমজানের প্রত্যেক সুবহি সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল বালেগ নারী-পুরুষ কোন কিছু না খেয়ে কোন প্রকার অশ্লীল বা মন্দ কাজে নিজেকে না জড়িয়ে মাওলাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে রোজা রাখার নিয়্যাতে সারা দিনমান উপবাস থাকাকে সাওম বলে। সাওমের বহুবচন হলো সিয়াম। এটা একটা সাধনার নাম। বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে প্রকৃত রোজা রাখতে হলে বিশেষ সাধনা বা তপস্যা ব্যতিত আদৌ সম্ভব নয়। কারণ, যেদিকে তাকানো যায়, সেদিকেই অশ্লীল বেহায়াপনা, অনিয়ম আল গুনাহ। গুনাহ ভাইরাস বা ঈমানের জন্য ক্যানসারস্বরূপ। যা রোজাকে আক্রমণ করে এর এ্যাকশান নষ্ট করে দেয়। এসব থেকে বাঁচতে হলে সিয়াম সাধনার বিকল্প নেই।

এর প্রকৃত অর্থ হৃদয়াঙ্গম করতে হবে। খানা পিনা থেকে পেটকে বিরত রাখা পাশাপাশি মন্দ দেখা থেকে চোখকে, মন্দ শোনা থেকে কানকে, মন্দ চিন্তা থেকে মাথাকে এভাবে প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে শুধু রমজান মাসে নয়, সারা বছরঅবধি মুমিনকে মন্দ থেকে বিরত রাখার আমরণ সাধনা করে যেতে হবে। তাহলেই মাহে রমজানের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপলব্ধি বা এর মধ্যে থাকা ধনভান্ডার উদ্ধার করতে পারবে।

রমজানের ফজিলত সম্বন্ধে হুজুর (সা.) অনেক বাণী রেখে গেছেন। এক হাদীসে কুদসীতে নাবী কারীম (সা.) বলেন, আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমলের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, কিন্তু রোজা ব্যতিত। কেননা, এটা আমার জন্য। আর এর পুরস্কার আমিই দিব। রোজার মাসকে শাহরুল্লাহ বা আল্লাহর মাস বলা হয়। অতএব, বুঝাই যাচ্ছে যে, এর গুরুত্ব কতটুকু।

তারাবীহের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হুজুর (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তারাবীহের বিশ রাকায়াত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাকে প্রতি সিজদার পরিবর্তে ১ হাজার ৫শ নেকী দান করবেন। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তির জন্য বেহেশতের মধ্যে লাল ইয়াকুত পাথর দিয়ে এমন একটি বাড়ি তৈরি করে দিবেন, যাতে ৬০ হাজার দরজা থাকবে এবং প্রত্যেক দরজায় লাল ইয়াকুতমন্ডিত একটি করে স্বর্ণের প্রাসাদ থাকবে। আরো যেসব হাদীসে হুজুর (সা.) বলে গেছেন শুনলে এসব নিয়ামতের প্রতি লোভ হয়। কিন্তু তা হাদসিলের জন্য আমল করতে যেন লোভ হয় না। এ রোগ থেকে আল্লাহ পাক আমাদেরকে সুস্থ্যতা দান করুন।

আজ এ রমজানে বিধর্মীদের কথা বলে হোটেল খোলা রেখে পর্দার আড়ালে যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। মানুষ মুখে যা বলছে তা করছে না। এই যে অমিল, এর কারণ কি? প্রকৃতপক্ষে যদি যথাযথভাবে সিয়াম সাধনা করা হতো তবে এমনটি হবার কথা নয়। কেন হচ্ছে? শিক্ষক, অফিসার বা যে কোন কর্মচারী তার পুরো ডিউটি না করে পুরো বেতন নিয়ে যাচ্ছেন, মাদরাসার সুপারের কাছে সুন্নাত পর্যুদস্ত হচ্ছে, দাঁড়ির উপর আযাব চলছে। আমল ঠিক নেই। তাহলে স্কুলের হেড মাস্টার কি করবেন? আর তাদের ছাত্রই বা কেমন হবে? কিছু সংখ্যক টাইটেল পাস প্রিন্সিপাল হুজুরদের নামাজ দেখে ভ্রাম্যমান স্কুলের ছাত্র অর্থাৎ তাবলীগ পাস অশিক্ষিত হুজুরদের কেবল হাসি পায়। দাওরা মাদরাসার মুহতামিম হয়েও রুকু থেকে সোজা না হয়ে সিজদায় চলে যায়। বড় মসজিদে ইমামতি করছেন কিন্তু ক্বিরাত সহীহ না।

দোয়ার আগে পরে দরুদ শরীফ পড়তে শোনা যায় না। পড়লেও দরুদ শুদ্ধ হয় না। এমন কেন হয়? এগুলো কি তাকওয়া বা রমজানের শিক্ষার পরিপন্থী নয়?  রমজানের প্রকৃত শিক্ষা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি বলেই এসব হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। আল্লাহ সব দেখেন, একথা মুখে স্বীকার করলেও কার্যত: মানা হচ্ছে না। রমজানের এ শিক্ষা যিনি নিয়েছেন তিনি কিভাবে এসব মন্দ কাজে জড়িত হন? অশিক্ষিত লোকেরা চেয়ে থাকেন শিক্ষিত বা আলিমের দিকে। কিন্তু তাদের এসব ভুল হলে কেমনে চলে? ছাত্রকে বলা হয় সিগারেট এনে দিতে। ডাক্তার চেম্বারে বসে ধুমপান করেন। টাখনুর নিচে প্যান্ট পরেন। এদের নিকট থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি আদর্শ শিখবেন? এগুলো রমজানের শিক্ষা নয়। আসলে আমরা রমজানের রোজা রাখছি ঠিকই কিন্তু এ থেকে শিক্ষা নিচ্ছি না।

বলা হয়, এ মাস আসলে মুসলিম পরিবারগুলোতে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। কিন্তু কেন? এর উত্তর হয়তো অনেকেরই জানা নেই। তবে মূল কারণ হালো, রমজান এমন এক মাস যা রোজাদারের গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। এর প্রভাবে মালিকরা শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেন।
মসজিদগুলোতে মুসল্লি বেড়ে যায়। ইফতারের সময় বিরাট আনন্দঘন পরিবেশের অবতারণা হয়। সর্বোপরি, গুনাহ ছারখার হয়ে যাওয়ার কারণে ওই রোজাদার ব্যক্তি ওলীতে পরিণত হয়ে যান। আর যে ওলী হয়ে গেল, তার সব হয়ে গেল। আমার মনে হয়, এটাও একটা কারণ। যাক, যার উসীলায় আমরা এসব পাচ্ছি তাকে নিশ্চয়ই কদর করা উচিৎ, তার দাবি পূরণ করা উচিৎ। করব, ইনশা-আল্লাহ। রমজানের দাবি পূরণ করতে হবে। মানুষ বলে, কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। মূলত: কিছু দেয়ার মাধ্যমেই কিছু পাওয়ার অধিকার সৃষ্টি হয়। কাজেই আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে রমজানকে মূল্যায়ণ করব। রমজানের হক আদায় করব আমাদেরই স্বার্থে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: খতীব, দিউ বায়তুস সালাম জামে মসজিদ, কলেজ রোড, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।

আত্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম

‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ আরবি শব্দ। বাংলা ভাষায় এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত রোজা মূলত ফারসি শব্দ। সাওম অর্থ বিরত থাকা, কঠোর সাধনা, অবিরাম চেষ্টা ও আত্মসংযম। ইসলামী পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সঙ্গে পানাহার ও সব ধরনের যৌন-সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর সেখানকার ইহুদিদের মধ্যে আশুরার রোজা পালন করতে দেখে মুসলমানদের ওই দিনের রোজা পালন করতে নির্দেশ দেন। হিজরতের আঠার মাস পর, কেবলা পরিবর্তনের পরে শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার নির্দেশসংবলিত আয়াত নাজিল হয়। তখন থেকে আশুরার রোজা পালনের অপরিহার্যতা নাকচ হয়ে যায়। প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত, শারীরিক ও মানসিকভাবে মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ। সংগত কারণে এ মাসে রোজা না রাখতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করা ফরজ। তা ছাড়া কাফ্ফারা আদায়েরও বিধান রয়েছে। মানুষের আত্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রোজা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

পবিত্র কোরআনে সিয়াম বা রোজা পালন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ ও বৈশিষ্ট্য জাগ্রত হবে।’ সূরা বাকারা : ১৮৩।

রমজান হলো সেই মাস, যে মাসে আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত জীবন-বিধান এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে সে যেন এ মাসের রোজা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। যাতে তোমরা এ সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তোমাদের হেদায়াত দানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পারো। সূরা বাকারা : ১৮৫।

সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে বহুসংখ্যক হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ইমান ও চেতনাসহকারে (সওয়াবের আশায়) তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যায়। বুখারি, মুসলিম।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে লোক এক দিন আল্লাহর পথে রোজা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডল জাহান্নাম থেকে ৭০ বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাহে রমজানে রোজা পালনের তাওফিক দান করুন।

১২ জুন পবিত্র শবে কদর

বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে হিজরিপঞ্জীর বিধান মতে চলমান শাবান মাস বৃহস্পতিবার ৩০ দিনে পূর্ণ করে শুক্রবার থেকে পবিত্র রমজান মাস গণনা শুরু হবে।
সে মোতাবেক আগামী ১২ জুন মঙ্গলবার ২৬ রমজান দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত হবে।
গতকাল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম মন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।
জাতীয় বায়তুল মুকাররমস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন, ধর্মসচিব মোঃ আনিছুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস-এর গভর্নর অ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আবদুল্লাহ, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল প্রফেসর সিরাজ উদ্দিন আহমদ, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতীব মাওলানা শেখ নাঈম রেজওয়ান ও লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব ক্বারী আবু রায়হান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নাজিবের ঘর থেকে ২৮৪ বাক্স-১২টির বেশি ব্যাগ ভর্তি গয়না-অর্থ উদ্ধার

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের একটি বিলাসবহুল বাসভবন থেকে ২৮৪ বাক্স ও ১২টির বেশি ব্যাগ ভর্তি অর্থ ও গয়না উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার কুয়ালালামপুরে ওই ভবনে অভিযান চালানো হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ৭০ কোটি ডলার সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগ আনা হয়। ওই অভিযোগের তদন্ত অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিচালক অমর সিং জানান, দামি হাতব্যাগ, অলংকার, ঘড়িসহ আরও দামি জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কী পরিমাণ অলংকার পাওয়া গেছে তা বলতে পারছি না। অলংকারের ব্যাগগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলছেন, ‘নাজিবের বিরুদ্ধে বিলিয়ন ডলারের কেলেংকারির ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও ছয়টি দেশ এই দুর্নীতির তদন্ত করছে।’

নাজিব রাজাক যদিও এই দুর্নীতির কথা প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী হারপাল সিং এই অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে বলেছেন, ‘হয়রানি করার জন্য এই অভিযান চালানো হচ্ছে।’

অভিযোগ উঠেছে নাজিবের স্ত্রী রোশমা মানসুরের বেহিসাবি খরচ করতেন। আর জনগণের তহবিল থেকে এসব অর্থ নেওয়া হত। রোশমা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। সেই সময় দামি ব্যাগ, ঘড়ি, অলংকার কিনে আনতেন। যদিও এসব ব্যাপারে কখনও কিছুই বলেননি নাজিবের স্ত্রী।

গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৯৫৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল ফ্রন্টের পতন হয়। ওই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোট ‘অ্যালায়েন্স অব হোপ’ জয়লাভ করে। এক সময় এই জোট থেকেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহাথির।

নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক তাঁর দল এবং জোটের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

গত শনিবার মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ ছাড়া সরকারি এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, নাজিবের বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির তদন্ত পুনরায় শুরু করা হবে।

বিএনপিকে বিকল্প ভাবলে ভুল হবে : ওবায়দুল কাদের

আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই বলেই উচ্চ আদালতও খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। বিএনপি নেতাদের জানতে হবে খালেদার মামলা কয়টা, জামিন নিয়েছে কয়টায়।

খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে সরকার কারাগার থেকে মুক্তি দিচ্ছে না -বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে এসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিকী সম্মেলেন ২০১৮ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মামলা নিয়েও বিএনপি নেতারা মিথ্যাচার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এ মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। এসময় মিথ্যাচার না করে মামলা নিয়ে বিএনপি নেতাদের আদালতে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

কাদের বলেন, নেতিবাচক রাজনীতির কারণে বিএনপির ভোট কমে গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভের আশা হারিয়ে ফেলেছে। তাই জাতীয় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে। তাদের জনগণের ওপর ভরসা কম। কথায় কথায় তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করে।

সভায় মাইনরিটি নিপীড়ন বিএনপির পলিসি বলে অভিযোগ করে ওয়াদুল কাদের বলেন, নির্বাচন আসলে মাইনরিটিদের জন্য মায়া কান্না দেখায় দলটি (বিএনপি)। ২০০১ থেকে ২০০৩ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন মাইনরিটিদের অনেক নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে। এটা ছিল তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের পলিসি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ভুলত্রুটি আমাদেরও (আওয়ামী লীগ) আছে। আমাদের সরকারের সময় মাইনরিটিদের ওপর দুই-একটি বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে। এটা আওয়ামী লীগের পলিসি নয়। দুর্বৃত্তরা এটা ঘটিয়েছে। দুর্বিত্তদের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স।

আওয়ামী লীগের চেয়ে মাইনরিটিদের আর কোনো ভালো বন্ধু নেই বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের এ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আমাদের (আওয়ামী লীগ) কেনো বিকল্প নেই। বিকল্প পাকিস্তানের দোসররা। আমাদের বিকল্প তাদের ভাবলে আপনাদের ভুল হবে। শেখ হাসিনা আপনাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের যোগ্যতার অবমূল্যায়ন করেনি। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়াসহ দলের বিভিন্ন কমিটিতে আপনাদের রেখেছেন।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, মৎস ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ঢাবির ২৫ শিক্ষার্থীকে শোকজ

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান ইশার বিরুদ্ধে রগ কাটার খবর ফেসবুকে ছড়ানোর ঘটনায় ২৫ ছাত্রীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীর সই করা ওই শোকজ নোটিশের জবাব ছাত্রীদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

নোটিশে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা, অসত্য ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এনে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে ওই ছাত্রীদের কাছে। ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, পরিকল্পিতভাবে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান ইশাকে মারধর ও জুতোর মালা পরিধান করানোর অভিযোগের’ ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে এতে।

কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বিগত ১০ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাতে আপনি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অসত্য রটনা ও গুজব ছড়িয়েছেন যে, উক্ত হলের আবাসিক ছাত্রী ইফফাত জাহান ইশা, মোর্শেদা আক্তার নামক একজন আবাসিক ছাত্রীর রগ কেটে দিয়েছে এবং তাকে মারধর করেছে।’

‘আপনি অন্যান্য আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করেছেন ও তার আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার এ ধরনের পূর্বপরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা হলের ছাত্রীদের ভীষণভাবে উত্তেজিত ও আতঙ্কিত করে। তাছাড়া আপনি পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে সংঘবদ্ধ হয়ে ইফফাত জাহান ইশাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন এবং জোরপূর্বক ইফফাত জাহান ইশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং তার বস্ত্র হরণ করেন।’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংঘটিত উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সাথে আপনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। একজন শিক্ষার্থী কর্তৃক এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও আইনের সুস্পষ্ট পরিপন্থি।’

গত ১৮ এপ্রিল শৃঙ্খলা পরিষদের সুপারিশ ও ৩০ এপ্রিলের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ঘটনায় ওই ছাত্রীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার কারণ চিঠি পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রক্টরের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।

‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো জবাব না পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে একতরফাভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

কারণ দর্শানোর এই নোটিশ ছাত্রীদের হলের ঠিকানা, বিভাগের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান।

তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার কারণ দর্শানোর এই নোটিশগুলো এসেছে। গতকাল হাউজ টিউটরদের মাধ্যমে চিঠিগুলো ছাত্রীদের দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টিই এখন প্রক্টর অফিস দেখছে।’

এ নোটিশ পেয়ে ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া একাধিক ছাত্রী বলেন, আমরা হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইশার লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তারপরও তালিকায় আমাদের নাম দেওয়া হয়েছে। হল থেকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সেটার উত্তর দিয়েছি। এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা নতুন করে হয়রানির আশঙ্কা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তাদের বক্তব্য জানার জন্য এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রক্রিয়া। কাউকে হয়রানি করা হবে না।’

গত ১০ এপ্রিল রাতে সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি ইফফাত জাহান ইশার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। এ সময় তার বিরুদ্ধে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোর্শেদা খানমের পায়ের রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ অভিযোগ ওঠার পর উত্তেজিত ছাত্রীরা ইশাকে লাঞ্ছিত করে। অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পেয়ে ছাত্রলীগ থেকে ওই রাতেই ইশাকে বহিষ্কার করা হয়। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

পরে রগ কাটার অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। পরে তাকে হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে প্রশাসন।