প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে’

‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে’

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলিটেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানান তারা।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আকতার মাহমুদ। সেমিনার সঞ্চালনা করে বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তরিক নয়। জলাবদ্ধতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় না। বরং যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তাতে জলাবদ্ধতা আরো বাড়ে। রাজধানী থেকে পানি অপসারণের পথ পরিষ্কার রাখতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তবেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।

সেমিনারে বলা হয়, নগরীতে প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু মাত্র ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

জলাবদ্ধতার বেশকিছু কারণ উল্লেখ করা হয় সেমিনারে। এসব কারণ হচ্ছে- রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারা। ভূ-উপরিস্থ ড্রেন পরিষ্কার না থাকা। ড্রেনেজ চ্যানেল ডি-লিঙ্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা। শক্ত নগর পরিসর ও রান-অফ ওয়াটার না থাকা। খাল ও পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়া।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বেশকিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের পূর্ণ বাস্তবায়ন। লেক সংরক্ষণ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বারিপাত ধারণ করা। সকল বক্স কালভার্ট ভেঙে উন্মুক্ত করে দেওয়া। সকল খাল, স্টর্ম ড্রেন ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখা। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা। সিএস বা আরএস ম্যাপ অনুযায়ী সকল ধরনের দখল উচ্ছেদ করা। খালগুলো সংরক্ষণ করে সকল ধরনের বর্জ্য অপসারণ করা। দুই পাড় বাধাই করে স্থানীয় জনগণের জন্য পায়ে হাঁটার রাস্তা করা। যেখানে খাল প্রশস্তকরণ সম্ভব নয়, সেখানে রিটেইনিং ওয়াল করে হাঁটার পথ তৈরি করা।

অনুষ্ঠানে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর শহরকে বাঁধ দিয়ে ঢেকে গামলা তৈরি করে দেওয়া হলো। এখন পাম্পিং করে পানি অপসারণ করা হচ্ছে। রাস্তা থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত পানি জমে। মাত্র ৩৫ মিলিমিটারের পানি হজম করতে পারে না। প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে খাল-ড্রেন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। খালকে আগের চিত্রে ফিরে আনতে হবে। শুধু পাম্প দিয়ে পানি সেচে সেচে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, ১৬ জুন জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেমিনারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিকে কেন আজও কার্যকর করা হলো না তার বিচার হওয়া উচিৎ।

ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাস্তার লেভেল এক নয়। এ কারণে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যাগুলো কমে আসবে। আর যারা খাল, পুকুর ও নদী দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মামলা হয়েছে।’

ঢাকা ওয়াসার পরিচালক শহীদ উদ্দিন বলেন, ২০১১ সাল থেকে আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে এক হাতে নেওয়ার জন্য বলে আসছি। একাধিক সংস্থা কাজ করায় একটু সমস্যা হচ্ছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্তের প্রাক্তন প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি বলেন, ‘ওয়াসার দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কথা দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। নগরীর যেসব সংস্থা রয়েছে তাদের কাজে মনে হচ্ছে, কারো চেয়ে কেউ কম না।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটিতে আরো ১০টি জোন বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাজে সমন্বয়হীনতা আছে। প্রতিটি খালের সীমানা নির্ধারণের জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। আর রাজউক তার সিদ্ধান্তগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে না।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাছের খান বলেন, আমরা যারা পরিবেশবাদী বা পরিকল্পনাবিদ দাবি করছি, তারাই বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে সড়কের অবস্থা খারাপ করে ফেলছি। কোনো উন্নয়ন কাজে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। এসব কারণেই জলাবদ্ধতা বাড়ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর ও ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্য হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ওয়াসার কারণেই ঢাকায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। ওয়াসাকে ড্রেন পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত ১০ জন করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখতে হবে।

অপর কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, ‘সরকারের একার পক্ষে কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। এজন্য সেবা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আমরা যারা জনপ্রতিনিধি ও নগরবাসী রয়েছি তাদেরকেও নগর সেবায় সচেতন হতে হবে।’

শুরুতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল স্বাগত বক্তব্য দেন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডিএসসিসির কাউন্সিলর ও ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্য হাসিবুর রহমান মানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক, বিআইব্লিউটিএর প্রাক্তন নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমদ প্রমুখ।