প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ করোনা সংক্রমণ রোধে কতটা প্রস্তুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো

করোনা সংক্রমণ রোধে কতটা প্রস্তুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পর্যটন শহরসহ পুরো কক্সবাজার জেলা গত ৮ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ওই সময়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোও লকডাউনের আওতায় থাকবে বলে জানান। কিন্তু কয়েকটি ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে সেখাতে যেন করোনা ভাইরাসের কোনো আতঙ্কই নেই।

এখনো ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনা ভাইরাস নিয়ে কোনো সতর্কতা দেখা যায়নি। গতকাল সর্বশেষ তথ্যমতে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ছয়জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজন টেকনাফের বাসিন্দা। লকডাউন এবং অবস্থিত এলাকায় করোনা ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা এখনো অসতর্ক অবস্থায় কঠিন সময় পার করছেন।

টেকনাফের নোয়াপাড়া, শালবাগান, লেদা, উখিয়া উপজেলার বালুখালী, জামতলী, থাইংখালী, কতুপালংয়ের ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা এখনো গাছের ছায়ায়, বাজার ও দোকানপাটে গল্প-আড্ডায় মেতে থাকেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের আড্ডা ও গল্পের আসর। এসব ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মধ্যে যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে কোনো অনুভূতিই নেই।

উখিয়ার উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর বেগম বলেন, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে ক্যাম্পে এসে সিআইসির (ক্যাম্প ইনচার্জ) পক্ষ থেকে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর পরও আমরা সেটি মানছি না।

এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য মার্চের শুরু থেকেই ক্যাম্পগুলোতে সাধারণ চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ ছড়াও রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব দেশি ও বিদেশি বেসরকারি সংস্থা কাজ করে তাদের পরিবহন ক্যাম্পে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘রেশনিং পদ্ধতি’ চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ এক সঙ্গে কেবল একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিবহনই ভেতরে যেতে পারবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহজাহান আলী বলেন, সতর্কতার জন্য ইতোমধ্যেই ৪৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প লকডাউন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ঘোষিত লকডাউন যাতে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা মেনে চলে তা মনিটর করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে বার্মিজ ভাষায় প্রচারের পাশাপাশি মসজিদের ইমামদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরও বলেন, কেউ সংক্রমিত হলে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে জাতিসংঘের সহায়তায় নতুন একটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে। ওই হাসপাতালে কেবল রোহিঙ্গা নয়, স্থানীয়রাও চিকিৎসা নিতে পারবেন।

এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে ৭৭০ শয্যার একটি হাসপাতাল স্থাপন করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। হাসপাতালে ২১২টি বিশেষ শয্যা থাকবে, যেখানে গুরুতর রোগীদের জরুরি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে।

এদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভয়াভয় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন কক্সবাজারে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়া বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে পাওয়া যাওয়ায় ওই আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরিসর ঘরে রোহিঙ্গাদের গাদাগাদি করে থাকা এবং ভেতরকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে এর আগেও জাতিসংঘসহ বহু বিদেশি সংস্থা উদ্বেগ জানিয়েছ।

টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. ইদ্রিস বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মূলত আমাদের বেশ ঠাসাঠাসি করে বসবাস। এ ছাড়া পানির জন্য কলসি হাতে এবং টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকের সংস্পর্শে আসতে হয়।