প্রচ্ছদ রাজনীতি ভোটের মাঠে আ.লীগের এক ঝাঁক তরুণ নেতা

ভোটের মাঠে আ.লীগের এক ঝাঁক তরুণ নেতা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ৫০ জনেরও তরুণ নেতা নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয়। ঈদকে সামনে রেখে তারা এলাকায় সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন।

চলতি বছরের ডিসেম্বরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকার বেশ বড় একটা অংশে থাকবে তরুণদের নাম। নতুন মুখগুলোর বেশির ভাগই সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও রয়েছেন এই দলে।

এসব নেতা নির্বাচন সামনে রেখে অনেক দিন আগে থেকে এলাকায় যাওয়া-আসা করছেন। রাজধানী বা অন্যান্য শহরে বসবাসরত এসব নেতা একটু সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিয়মিত এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে। ঈদ উপলক্ষে নিম্ন আয়ের মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব আলোচিত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোণা-৩), আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন (পটুয়াখালী-১), সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪) ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), সাংগঠনিক সম্পাদক আহমাদ হোসেন (নেত্রকোণা-৫), সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধরী নওফেল (চট্টগ্রাম-৯)।

ফরিদপুর-১ আসনে রীতিমতো জাগরণ তৈরি করেছেন সাবেক ছাত্রনেতা এবং কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান দোলন।

আলোচিত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর-৫), নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, হাসান আলী (সিরাজগঞ্জ-১), হাবিবুর রহমান স্বপন, চয়ন ইসলাম (সিরাজগঞ্জ-৫) নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ এইচ এম মাসুদ দুলাল, ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরীন (বরগুনা-১), কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর-৪)। পিরোজপুর-১ আসনে আলোচিত হয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।

গাইবান্ধা-৫ আসনে দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জন নওগাঁয়-৫ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নড়াইল-১ আসন কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নারী সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, শাহে আলম (বরিশাল-২), মনিরুজ্জামান মনির (ঝালকাঠি-১), শফি আহমেদ (নেত্রকোণা-৪), ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুল হক রানা কিশোরগঞ্জ-৫, নিয়াজ মোর্শেদ এলিট চট্টগ্রাম-১ আসনে আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

ঢাকার আসনগুলোতে নতুনদের মধ্যে আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১), আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, যুবলীগের ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট (ঢাকা-৮), সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন (ঢাকা-১৪), যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক (ঢাকা-১২), যুবলীগের মঈনুল হোসেন খান নিখিল, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু (ঢাকা-১৫)।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেকোনো একটি আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। আর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা-১৩ আসনে।

এ ছাড়া আলোচনায় আছেন শেখ সোহেল রানা টিপু (রাজবাড়ী-১), নারী সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন, রোকেয়া প্রাচী (ফেনী-৩), সাইফুদ্দীন নাসির (ফেনী-১)।

সাবেক ছাত্রনেতা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান (পিরোজপুর-৩), নারী সংসদ সদস্য সেলিনা আক্তার লিটা, এমদাদুল হক (ঠাকুরগাঁও-৩), জামালপুরের ইসলামপুর থেকে নারী সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ, বিশ্বনাথ সরকার বিটু (রংপুর-২), সাফিয়া রহমান (রংপুর-৩), জাকির হোসেন সরকার (রংপুর-৫), কামাল আহমেদ তালুকদার (নীলফামারী-২) মাজহারুল হক প্রধান, আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়-১), আব্দুল মালেক চিশতি (পঞ্চগড়-২)।

নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান দিপু (নারায়ণগঞ্জ-৫), ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের সাবেক ভিপি সাজ্জাদ হোসেন শাহীন (ময়মনসিংহ-৪)। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারীও (শরীয়তপুর-৩) সক্রিয় এলাকায়।

মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা সবাই নিজের যোগ্যতা ও বিজয়ের ব্যাপারে আস্থাশীল। তারা বলছেন, এলাকার মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের কারণে তাদের একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলে তারা নিজের আসনটি দলীয় সভাপতিকে উপহার দিতে পারবেন।

সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, ‘দলের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। দল যদি ভালো মনে করে তাহলে আগামী নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেবে। নেত্রী যেই সিদ্ধান্ত দিবে সেই অনুযায়ী কাজ করব।’

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, ‘আমি নিয়মিতই এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক করতেছি। এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে সবসময়ই থাকার চেষ্টা করি। দলের জন্যই কাজ করি, নেত্রীর যেই দায়িত্ব দিবেন সেই অনুযায়ী কাজ করব।’

এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউসার বলেন, ‘এলাকার প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখার চেষ্টা করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি জায়গায় আমার পদচারণ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক রয়েছে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে। তরুণদের এগিয়ে নিতেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই। তবে নেত্রী আমাকে যেই দায়িত্ব দিবেন সেই অনুযায়ী কাজ করবো।’

অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণের জন্য। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সেই কল্যাণের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। আর সংসদীয় রাজনীতিতে একজন রাজনীতিবিদের পরিপূর্ণতা আসে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। দলের কাছে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, ‘লক্ষীপুরের রামগতি ও কমলনগরের মানুষ উন্নয়ন চায়। তাঁরা চায় আমি যেন আগামীতে নির্বাচন করি। মনোনয়ন দেয়া না দেয়া নেত্রীর বিষয়। তিনি যাকেই মনোনয়ন দেবেন আমি তাঁর জন্য কাজ করব।’