প্রচ্ছদ জাতীয় করোনায় মৃতদের দাফনে মানিকগঞ্জে জমি দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা

করোনায় মৃতদের দাফনে মানিকগঞ্জে জমি দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম : 

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে দিনে দিনে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যু। সঙ্গে নতুন নতুন ঘটনাও ঘটছে। সংক্রমণের গুজবে কোথাও করোনা বা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে দাফনেও দেয়া হচ্ছে বাধা। কোথাও আবার স্বজনরাও জানাজায় হাজির হচ্ছেন না। বাবার লাশ রেখে পালিয়ে যাচ্ছে সন্তানরা। মারা যাওয়া ব্যক্তিকে বহন করতে খাটিয়া দেয়া হচ্ছে না, হরহামেশাই এমন খবর আসছে গণমাধ্যমে।

তবে এমন অবস্থার মধ্যে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তি কোথাও বাধা পেলে দাফন করতে নিজের জমি দিয়ে দিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের সিআইডিতে সিনিয়র এএসপি হিসেবে কর্মরত মো. এনায়েত করিম রাসেল নিজের এলাকা মানিকগঞ্জে এই জমি দিয়েছেন। জমিটি নিজেদের পাশাপাশি বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য এক বছর আগে কিনেছিলেন।
আরও ২২ শতাংশ জমি কেনার প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজন দেখা দিলে সেখানেও মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা।

ইতিমধ্যে বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ পুলিশের উর্ধর্তন কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছেন তিনি। এক বছর আগে কেনা দশ শতাংশ জমিতে শুধু মানিকগঞ্জ বা আশপাশের এলাকাই নয়, দেশের কোথাও কেউ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় দাফনে বাধা পেলে তাকে এখানে সমাহিত করা যাবে।

করোনায় মারা যাওয়া মানুষের দাফনের জন্য নিজের এমন উদ্যোগের কথা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন এনায়েত করিম রাসেল। নিজের ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে রাসেল বলেন, মানিকগঞ্জে বাসা/ মানিকগঞ্জে বাসা কিন্তু বসবাস অন্য জায়গায় বা বাংলাদেশের যে কেউ আল্লাহ না করুক করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে বিনাসংকোচে নিয়ে আসুন। গংগাধরপট্টি চকে উত্তর-পূর্ব কোণে (নওখন্ডা) আমাদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে। আশেপাশে কোনো জনবসতিও নেই। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এখানে কবর দেয়া সবার জন্য উন্মুক্ত।

এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা এনায়েত করিম রাসেল বলেন, ‘গত বছর আমি জমিটা কিনেছি। যেখানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে পারবে এমন চিন্তা ছিল। কিন্তু করোনার আক্রমণের পর দেখতে পাচ্ছি অনেক জায়গায় লাশ দাফন করতে দেয়া হচ্ছে। এটা দেখে খুব কষ্ট লাগলো। পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখানে চাইলে যে কেউ করোনার রোগী বা বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে পারবে।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘যারা কবর দিতে বাধা প্রদান করে তারা যেন আজীবন জীবিত থাকেন।’ তিনি জানান, তার দেয়া কবরস্থানে এখনো কোনো লাশ দাফন করা হয়নি। তবে সেখানে একটি খাটিয়ার ব্যবস্থা করা আছে, যাতে মরদেহ বহন করতে সুবিধা হয়।’

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক অথবা মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। পাশাপাশি নিজের মোবাইল নম্বর (০১৭৩০৩৩৬২২৩), ও তিন বন্ধু ডিএফএম লোটাস (০১৭৭৭৩০৫০১৬), ও শুভ (০১৭১২২৯২৯২২), মোস্তফা (০১৭১২৫৫৭০৮৬) যে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেছেন এনায়েত রাসেল।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস এ বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আসলে সচেতন হতে হবে। কারণ মৃতদেহ থেকে করোনা ছড়ায় না। তারপরও কোথাও সমস্যা হলে আমরা এসব জায়গায় দাফন করবো। পুলিশ কর্মকর্তা এনায়েত করিম রাসেল ছাড়াও আরও দুই একজনের কাছ এমন প্রস্তাব পেয়েছি। তারা জমি ছেড়ে দেবেন।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, যেখানো করোনার উপসর্গ নিয়ে মানুষ মারা গেলে নানা ধরনের প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে সেখানে এমন উদ্যোগ অবশ্যই মানবিকতার বড় উদাহরণ।