প্রচ্ছদ জাতীয় উন্নত চিকিৎসা বিদেশে কেন?

উন্নত চিকিৎসা বিদেশে কেন?

আমাদের দেশে কোনো বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ বা যে কোনো সেলিব্রেটি গুরুতর অসুস্থ হলেই প্রথমে যে চিন্তা মাথায় আসে, সুচিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসলেন সিঙ্গাপুর থেকে। আমাদের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকও যখন অসুস্থ হয়েছিলেন, তখন তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী, বিপুল জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলেন। প্রথিতযশা ঔপন্যাসিক, কথা-সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদের কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন সিঙ্গাপুরে ক্যান্সারের চিকিৎসা করিয়েছিলেন।

এই চিত্র দিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, যারা সমাজে সুপরিচিত, তারা অসুস্থ হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশে যান। কিন্তু এমন বিত্তবানের সংখ্যা কমই যারা অসুস্থ হলে দেশে চিকিৎসা করান।

এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল হকিকত নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রায়ই বলা হচ্ছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন মানে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি নয়, উন্নয়ন মানে হলো সামগ্রিক জীবন মানের উন্নয়ন। সেখানে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। নবজাতকের মৃত্যু রোধ, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনা, টিকাদান কর্মসূচী শতভাগ সফলতার ব্যাপারে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। এ সব বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু এ সব অগ্রগতির সবই প্রথমিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে। কিন্তু উন্নত বা বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় আমরা এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি।

সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটা স্বাভাবিক চিত্র হলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা যখন ভালো হয়, তখন বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকি বাড়ে। গড় আয়ু বাড়লে বার্ধক্যজনিত রোগ বাড়বে। অপুষ্টিজনিত রোগ কমলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্থূলতার মতো সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বাড়বে।

আমাদের যেভাবে বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবার দিকে নজর দেয়ার দরকার ছিল, আমরা সেভাবে নজর দিতে পারিনি।

বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ এখনও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও বাংলাদেশ হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেটা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও বিত্তবানদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তারা এ ধরনের চিকিৎসার জন্য বিদেশেই যায়। বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে চিকিৎসার জন্য কতো টাকা ব্যয় করে সেটাও একটা গবেষণার বিষয়।

ওবায়দুল কাদেরের এই ঘটনাটি আমাদের আবার দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের জাতীয় নেতা নেত্রীরাও আমাদের বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন। আমাদের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার মানের উপর আস্থা রাখতে পারেন না।

আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। সে লক্ষ্যে আমরা যদি উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের দাঁড় করাতে চাই, তাহলে বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপের মতো বিষয়গুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তবতা বলছে, বাংলাদেশ এসব বিষয়গুলোতে কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাতে পারেনি। উন্নয়ন একটি সমন্বিত ব্যবস্থা। কাজেই সামগ্রিক উন্নয়নের মাইলফলক স্পর্শ করতে হলে এখনই বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবার দিকে নজর দিতে হবে এবং ন্যূনতম মান অর্জন করতে হবে।