প্রচ্ছদ রাজনীতি আমাদের অনেক নেতাকর্মীর তালিকা করা হয়েছে: মওদুদ

আমাদের অনেক নেতাকর্মীর তালিকা করা হয়েছে: মওদুদ

বর্তমানে সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে সরকার মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

এই অভিযানে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের তালিকা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ এবং মাহমুদুর রহমান ও শওকত মাহমুদসহ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মওদুদ আহমদ এসব কথা বলেন।

বিএনপির মাদক ব্যবসায়ীদেরও খোঁজা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘তাহলে এত দিন যাদের ধরলেন আর মারলেন তারা কি আওয়ামী লীগের লোক? আসলে আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম, এই অভিযানের দূরভিসন্ধি রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীর তালিকা করা হয়েছে। আমি বলব এসব অবিলম্বে বন্ধ করুন। প্রকৃতপক্ষে, যারা মাদকব্যবসায়ী তাদের শীর্ষ নেতাদের ধরুন।’

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার এত দিন কোথায় ছিল? হঠাৎ করে কেন মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করল? আসলে এর মাধ্যমে সরকার মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দিছে। সংবিধানের কোথায় আছে যে বিচারবহির্ভূত মানুষ হত্যা করা যাবে? আসলে দেশে আইন নেই। এ জন্যই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। কারণ এই সরকার আইনের শাসনে, জনগণের মতামতকে বিশ্বাস করে না। মাদকবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত যারা ক্রসফায়ারে মারা গেছে, তাদের ৮০ থেকে ৯০ ভাগই মাদকের সঙ্গে জড়িত নয়। ৭৯ জনের যে তালিকা করা হয়েছিল তাদের তো কেউ ধরা পড়েনি। অন্যদিকে, কক্সবাজারের বদিকে বিদেশ যেতে সহায়তা করা হলো!’

দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে সরকারের দূরভিসন্ধি রয়েছে মন্তব্য করে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গত নয় বছরে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার লাভ করেছে। মাদকের সাথে সরকারের সবাই জড়িত। এই সরকারই মাদকের সুযোগ করে দিয়েছে। আজকে তরুণদেরকে মাদকের মাধ্যমে চেতনা থেকে দূরে রেখেছে সরকার। মাদকবিরোধী অভিযানে প্রত্যেক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রাক্তন বিচারক দিয়ে এই কমিটি করতে হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করেছে। উচ্চ আদালত জামিন দিলেও নিম্ন আদালত জামিন দিচ্ছে না। তারা সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ সত্যিকার অর্থে আর নেই। আপনারা খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত করতে পারেন। কিন্তু তিনি মুক্তি পাবেন। আমাদের দলের নেতৃত্ব দেবেন। বিএনপি বেগম জিয়ার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে এবং বাংলাদেশে আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে ইনশাল্লাহ। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা প্রত্যাশা করি আগামীতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। কোনো সমস্যা থাকবে না। এর বাইরে কোনো নির্বাচন জনগণ মানবে না, হতেও দেবে না।’

আলোচনা সভায় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, বর্তমান দখলদার সরকারের আমলে অসংখ্য সাংবাদিক মিথ্যা মামলার শিকার। প্রবীণ সাংবাদিক ও সম্পাদক শফিক রেহমান, আবুল আসাদকেও কারাগারে নিয়েছে তারা। মামলা হয়েছে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধেও। আর এক শ্রেণির সাংবাদিক-সম্পাদক দখলদার প্রধানমন্ত্রীর তেলবাজিতে ব্যস্ত। মনে হয় আমরা কাল্পনিক সেই ‘বিগ ব্রাদার’ রাষ্ট্রে বাস করছি। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকার ভিন্ন মত দমন করতে চায়।

এ ছাড়া সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘আজকে একটি দল বাংলাদেশের মালিকানা দাবি করছে। বর্তমান সরকার অনির্বাচিত। তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বসী নয়। অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে আবারও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হবে। আমাদের জনগণের মুক্তির জন্য গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে হবে। আইন করে মুক্ত চিন্তা ও বাকস্বাধীনতা বন্ধ করা যাবে না।’

এ ছাড়া বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান অনির্বাচিত সরকার মানুষ খুন আর মামলা সন্ত্রাস করছে। যার প্রমাণ মিথ্যা মামলায় বন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অনেক গণমাধ্যমকে বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের আজ দুর্বিষহ অবস্থা।’

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বন্ধ সব গণমাধ্যম খুলে দেওয়া, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার, গোয়েন্দা খবরদারি বন্ধ এবং নিবর্তনমূলক আইন বন্ধের দাবি জানান। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আলোচনা সভার আয়োজন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

সভা পরিচালনা করেন ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ। অন্যদের মধ্যে কথা বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সহসভাপতি আহমদ মতিউর রহমান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সহীদুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি বাছির জামাল, ডিইউজের প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, বিএফইউজের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।