প্রচ্ছদ জাতীয় সাংবাদিককে আত্মহত্যা করতে বললেন সচিব : খবর সময় টিভির

সাংবাদিককে আত্মহত্যা করতে বললেন সচিব : খবর সময় টিভির

ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা প্রতি চেয়ার আসনের জন্য নিজেদের অজান্তে ৬৮ টাকা করে বেশি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। যাত্রীদের দাবি, তারা না বুঝেই প্রতারিত হচ্ছেন। যদিও অতিরিক্ত টাকা কোন খাতে নেয়া হচ্ছে, তা যেমন টিকিটে উল্লেখ নেই, তেমনি তা কোথায় জমা হচ্ছে সে বিষয়ে জানাতে পারেননি রেল কর্মকর্তারা। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবিন আর চেয়ার এই দুই ক্যাটাগরিতে ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে কমলাপুর রেলস্টেশন। চেয়ার প্রতি আসন ২ হাজার ৫০০ টাকা। চেয়ার আসনের গায়ে লেখা হিসাব থেকে দেখা যায়, ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ টাকা, ভ্যাট বাবদ ২৫২ টাকা আর ভ্রমণ কর বাবদ নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। মোট ২ হাজার ৪৩২ টাকা। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে টিকিটে লেখা ২৫০০ টাকা।

যাত্রীদের অভিযোগ, এই বাড়তি টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে চাইলে সে ব্যাপারে কোনো কিছুই বলতে পারছেন না টিকিট বিক্রেতা।

কমলাপুর রেলস্টেশন টিকিট বুকিং সহকারী সাইফুল ইসলাম বলছেন, এ ব্যাপারে রেল ভবনে আলোচনা করলে তারা বিষয়টা ভালো বলতে পারবেন।

সপ্তাহে চারদিন ঢাকা-কোলকাতা যাত্রী বহন করে মৈত্রী এক্সপ্রেস। কমলাপুর রেলস্টেশনের তথ্য বলছে, প্রতি ট্রেনে ৪৫৬টি আসনের মধ্যে চেয়ারের জন্য বরাদ্দ থাকে ৩১২ চেয়ার। সেই হিসাবে প্রতি মাসে চেয়ারের যাত্রী ৪ হাজার ৯৯২ জন। আর বছরে ৫৯ হাজার ৯০৪ জন। প্রতি আসনে ৬৮ টাকা বেশি হলে বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪২ লাখ টাকা।

বিপুল পরিমাণ এই টাকা কোন খাতে আদায় করা হচ্ছে? কিংবা তা জমা হচ্ছে কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি রেলের ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মাহবুবুর রহমান ও মার্কেটিং বিভাগের উপ-পরিচালক কালিকান্ত ঘোষ।

সবশেষে রেলসচিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে, বিষয়টি শুনেই রেগে ওঠেন তিনি। রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এই বিষয়ে আপনার এত উৎসাহ কেন! যে লোকটা জানতে চাচ্ছে সে নিয়মিত কলকাতা যায়। সে জানতে চাইলে আমরা বলে দিবো। কারণ এই জন্য আমাদের কাছে একটা ব্যাখ্যা আছে। তবে আপনাকে আমরা কেন ব্যাখ্যা দিবো। আপনার কি কোনো প্রয়োজন আছে? আপনি তো যাত্রীরা না।’

সচিব পরে ডেকে পাঠান রেলের অপারেশন বিভাগের উপ-পরিচালক মিয়া জাহানকে। তাঁর কাছেও মেলেনি কোনো ব্যাখ্যা। কিন্তু পরদিন মিয়া জাহান কৌশলে প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান। আর এ বিষয়টি জানাতে গেলে রেল সচিব ক্যামেরা ছাড়া তাঁর কক্ষে ঢোকার অনুমতি দিয়ে এই প্রতিবেদকে আত্মহত্যার পরামর্শ দেন।

রেল সচিব বলেন, ‘আপনি এখন আত্মহত্যা করেন। একটা স্টেটমেন্ট লিখে যান যে, রেলের লোকেরা আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না এ মর্মে ঘোষণা দিলাম যে তারা কথা না বলার কারণে আমি আত্মহত্যা করলাম।’

তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এখানে যদি অনিয়ম থাকে অবশ্যই দূর করবো আমরা। আর যদি দেখা যায় আমাদের নিয়ম মতো আছে, তাহলে আর কিছু করতে হবে না। তা শুনে আপনিও সন্তুষ্ট হবেন।’

আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিবেন বলেও জানান রেলমন্ত্রী।