প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক সমরাস্ত্রে চীনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে পেন্টাগনের উদ্বেগ

সমরাস্ত্রে চীনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে পেন্টাগনের উদ্বেগ

গত কয়েক বছরে চীন বেশ কয়েকটি উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপে সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করেছে এবং এতে নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করেছে। তাইওয়ানের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক বিরোধের ক্ষেত্রে যুদ্ধের জন্য তারা এসব পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএস ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি নামের একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা।

‘দীর্ঘদিন ধরে চীন তাইওয়ানকে তাদের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হতে বাধ্য করতে চাইছে। একই সঙ্গে তাইওয়ানের স্বাধীনতা ঘোষণা করার যে কোনও চেষ্টা ব্যর্থ করতে তারা সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে,’ বলা হয় ‘চীনের সামরিক শক্তি (China’s Military Power)’ নামের প্রতিবেদনটিতে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘বিদেশি শক্তি তাইওয়ানে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বেইজিং। একারনে দেশটির সেনাবাহিনী সেখানে বিদেশি রাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগের পথ বন্ধ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।’

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানায়, আগে মঙ্গলবারই চীন তাদের ইংরেজি ভাষার ওয়েবসাইটে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা তাইওয়ানে কোনও ধরনের মার্কিন হস্তক্ষেপ চায় না ।

‘কেউ চীনকে তাইওয়ানকে চীনের কাছ থেকে আলাদা করতে চাইলে চীনের সেনাবাহিনী জাতীয় সার্বভৌমত্ব, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা, এবং পুনরায় একত্রীকরণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে,’ জেনারেল লি জুয়োচেং জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডমিরাল জোন রিচার্ডসনকে। চার দিনের সফরে বর্তমানে চীনে রয়েছেন অ্যাডমিরাল রিচার্ডসন।

মার্কিন সামরিক গোয়েন্দা দফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর সব থেকে উন্নত এবং অত্যাধুনিক বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে চীন। সামরিক শক্তির বিচারে সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ এবং ইন্টারনেট, সব ক্ষেত্রেই নিজেদের অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে তারা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে  ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বেইজিং।

মার্কিন রিপোর্টে বলা হচ্ছে, শেষ কয়েক দশকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করে ফেলেছে চীন। ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর অর্থাৎ উৎপাদন শিল্পে চীন সারা পৃথিবীর ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা থেকেই এই এগিয়ে যাওয়ার শুরু। কম খরচে এবং ভাল পরিকাঠামোতে উৎপাদনের আকর্ষণে সারা পৃথিবীর বড় বড় সব কোম্পানির গন্তব্য এখন চীন। তাতে কোম্পানিগুলির মুনাফা হলেও চীনের কাছে চলে যাচ্ছে প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তির বলে বলীয়ান হয়েই এখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিভিন্ন যু্দ্ধাস্ত্রের অধিকারী হয়ে গিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের দ্রুত গতিতে সামরিক উত্থানের পিছনে এই যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছেন মার্কিন সামরিক গোয়েন্দারা।

পেন্টাগন প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির হাতে এখন আছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা সব যুদ্ধাস্ত্র। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ওরাই শ্রেষ্ঠ। সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ এবং ইন্টারনেট, সব ক্ষেত্রেই নিজের এলাকায় শ্রেষ্ঠ এখন বেইজিং।’

একই সঙ্গে যুদ্ধবিমান বানানোর ক্ষেত্রেও অভাবনীয় উন্নতি করেছে চীন। মাঝারি এবং দূরপাল্লার বোমারু বিমান তৈরিতেও এখন একেবারে প্রথম সারিতে চীন। ২০২৫ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এখন কাজ করছেন চিনা প্রযুক্তিবিদেরা। সেই লক্ষ্যে সফল হলে আকাশের লড়াইতেও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে ফেলবে চীন।

মার্কিন সামরিক গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ, গত ৪০ বছর ধরে সামরিক ক্ষেত্রে শুধুই অগ্রগতি হয়েছে চীনের। কিন্তু সত্যিকারের যুদ্ধের কোনও অভিজ্ঞতা নেই পিপলস লিবারেশন আর্মির। সেই কথা খুব ভাল করেই জানেন চীনা সামরিক কর্তারা। সেই কারণে সত্যিকারের যুদ্ধের মহড়া হিসেবে তারা বেছে নিতে পারে তাইওয়ানকে। এমনটাই আশঙ্কা মার্কিন গোয়েন্দাদের। কারণ, চীন  সাগরে আমেরিকার অন্যতম বন্ধু দেশ তাইওয়ান। দক্ষিণ চীন  সাগরে নিজেদের উপস্থিতির জন্য তাইওয়ানের উপর নির্ভরশীল মার্কিন নৌ সেনা।

অন্য দিকে পূর্ব আর দক্ষিণ চীন সাগরের মাঝে এই দ্বীপের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেয় না বেইজিং। এই মুহূর্তে তাইওয়ান স্বায়ত্বশাসিত। নিজেদের আলাদা পতাকা, মুদ্রা এবং সরকার থাকলেও তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ বলে স্বীকৃতি দেয়না জাতিসংঘও।

এর আগে বেইজিং প্রকাশ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাইওয়ান স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তারা যুদ্ধ করতে পিছপা হবে না। তাই নিজেদের সামরিক শক্তির সক্ষমতা যাচাই করতে তাইওয়ানকেই প্রথম যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতে পারে চীন। মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে সেই সময় প্রায় আগত।