প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ সংসদ নির্বাচন: ইসির সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার পরিষদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক

সংসদ নির্বাচন: ইসির সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার পরিষদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান কিংবা মেয়ররা স্বপদে বহাল থেকে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

গত ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ৪০তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি সুবিধাভোগীরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে তাঁদের পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

তবে স্থানীয় সরকার আইন বলছে, স্থানীয় সরকার পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়ররা স্বপদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। কিন্তু সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র বা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দিতে হবে।

জানতে চাইলে গত ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত সময়ের সংসদ নির্বাচনগুলোতে স্থানীয় সরকার পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা স্বপদে বহাল থেকে অংশ নিয়েছিল। তবে বর্তমান কমিশন চিন্তায় নিয়েছে যে স্থানীয় সরকার পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের পদ লাভজনক। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী সরকারের লাভজনক পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে না। মূলত এই বিষয়টি মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের লিখিত আকারে নির্দেশনা দেওয়া না হলেও মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে। লিখিত আকারে নির্দেশনা দেওয়া হলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য কেউ আদালতে গিয়ে মামলা করতে পারে। মামলা করলে নির্বাচনের পথ বিঘ্নিত হবে, যেটা কমিশন কখনো চাইবে না।’

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি সুবিধাভোগীরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিলেও পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইন ইসির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সিদ্ধান্ত বলছে, জনপ্রতিনিধিরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। আইন বলছে, পারবে।

পৌরসভা আইনের ১৯/২ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি মেয়র পদে থাকার অযোগ্য হবেন। ৩৩ ধারায় বলা আছে, কোনো মেয়র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মেয়রের পদ শূন্য ঘোষিত হবে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ আইনে বলা আছে, নির্বাচিত চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে চেয়ারম্যান পদে থাকার যোগ্য হবেন না।

পৌরসভা আইনের ১৯/২ ধারা ও ৩৩ ধারার অর্থ হলো, নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁদের চেয়ারম্যান বা মেয়রের পদ ছেড়ে দিতে হবে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেই মেয়র পদে থাকার অযোগ্য হবে।

একই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ আইনের অর্থ হলো, চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চেয়ারম্যান পদে থাকতে না পারলেও সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ইউপি, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত চেয়রম্যান ও মেয়রেরা স্বপদে থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকাসহ বেশ কয়েকজন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ না মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হন। পরে আদালত সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থেকে নির্বাচন করা যাবে না বলে রায় দিলেও পৌর মেয়ররা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন বলে রায় দেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে চারজন পৌর মেয়র পদে থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।