প্রচ্ছদ সারাদেশ ঢাকা বিভাগ শিবালয়ে সিসিডিবি’র বায়োচার প্রজেক্ট পরিদর্শনে ভারতের জেসমিট সিং

শিবালয়ে সিসিডিবি’র বায়োচার প্রজেক্ট পরিদর্শনে ভারতের জেসমিট সিং

শাহজাহান বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ ঃ মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সিসিডিবি’র বায়োচার প্রজেক্টের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ভারতের ফেয়ার ক্লাইমেট ফান্ডের বিজনেস ডেভোলপমেন্ট প্রতিনিধি জেসমিট সিং।
সোম ও মঙ্গলবার দু’দিন ধরে সিসিডিবি’র দশচিড়া কার্যালয়ে অবস্থান করে বায়োচার প্রজেক্টের সকল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।
এসময় তার সাথে ছিলেন, বেসরকারী সংস্থা আইসিসিও কোপেরেশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আহসানুল কবির, বায়োচার প্রজেক্টের টিম লিডার এম মাহবুবুল ইসলাম, সিসিডিবি’র এরিয়া ম্যানেজার রুহী রহমান, বায়োচার প্রজেক্টের মার্কেট ফ্যাসিলেটেটর মো. আবু সুফিয়ান, সিনিয়র কিচেন কাউন্সিলর মো. মিলন হোসেন, কিচেন কাউন্সিলর দিপালী সরকার, এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের সভাপতি মুক্তা বেগম। সোমবার বিকালে মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আশরাফউজ্জামান, শিবালয় উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. কালন আলী জেসমিট সিংয়ের সাথে পরিদর্শনে যোগ দেন।
পরিদর্শনের প্রথম দিন সকালে দশচিড়া সিসিডিবির কার্যলয়ে জেসমিট সিংকে শিবালয়ে বায়োচার প্রজেক্ট সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় এবং স্থানীয় বায়োমাস ও আঁখা দেখানো হয়। এরপর আমডালা বায়োচার গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে আঁখার ব্যাবহার ও বায়োচার উৎপাদনে নির্জলা সাহার বাড়িতে উপস্থিত গৃহীনিদের অভিজ্ঞতা শুনা হয়। চঞ্চলা রানীর বাড়িতে আয়রন এবং আর্সেনিকমুক্ত পানি পানের জন্য বায়োচার দিয়ে বানানো ফিলটার পরিদর্শন। আমডালা বাজারে বায়োচার বিক্রেতা সোহেলের দোকান পরিদর্শনে গিয়ে উপস্থিত ক্রেতাদের সাথে আলোচনা করেন জেসমিট সিং।
এরপর বায়োচার সংগ্রহ এবং বিক্রি কিভাবে প্রসারিত করা যায় সে বিষয়ে দশচিড়া সিসিডিবি কার্যালয়ে বায়োচার এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি।
বিকালে গোয়ালখালী গ্রামে লাভলু হোসেনের পিঁয়াজের প্রদর্শনি খামার পরিদর্শন শেষে, সন্ধ্যায় নবগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কৃষকদের সাথে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জেসমিট সিং।
এসময় কৃষকরা বায়োচার সম্পর্কে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। কৃষক বজলুর রহমান বলেন, গত বছর ৩০ শতাংশ জমিতে বরো ধানের চাড়ায় সেচ দিতে ২৫ লিটার ডিজেল খরচ হয়। আর এবার সেই জমিতে বায়োচার দিয়ে আবাদ করায় ডিজেল খরচ হয়েছে মাত্র ১২ লিটার।
লাভলু হোসেন বলেন, এবার আমি ৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ২৫ শতাংশ বায়োচার দিয়ে বাকী ২৫ শতাংশ বায়োচার ছাড়া পেঁয়াজের আবাদ করেছি। বায়োচার প্রয়োগকৃত জমির পেঁয়াজের চাড়া ভাল দেখা যাচ্ছে। এ জমিতে ভাল ফলন পাবো বলে আশা করছি।
কৃষকদের উদ্দেশ্যে জেসমিট সিং বলেন, বায়োচার কোন সার নয়, এটি হচ্ছে মাটির ভিটামিন। যা মাটিতে পানি ধরে রাখার ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ উর্ব্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। মানুষের শরীরের যেমন ভিটামিনের প্রয়োজন হয়, তেমনি মাটির উর্ব্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ভিটামিনের দরকার হয়। আর মাটির ভিটামিন হচ্ছে এ বায়োচার। তাই কৃষকদেরকে রাসয়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে, বায়োচার ব্যাবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ছোট বোয়ালী এলাকায় কাশাদহ পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি লিমিটেড কার্যলয়ে উপস্থিত সাম্ভাব্য আঁখা ব্যবহারকারী স্থানীয় গৃহীনিদের সাথে আলোচনা করেন ভারতের জেসমিট সিংসহ বায়োচার প্রজেক্টের কর্মকর্তাগণ। এ আলোচনা সভায় অংশ নেন স্থানীয় সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক বিলকিস আরা, আফরোজা আক্তার ও কাশাদহ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি মো. জহুরুল ইসলাম পান্নু।
ছোট বোয়ালী গ্রামের নাজমা বেগম, নাদিরা বেগম ও আফরোজা আক্তারের বাড়িতে প্রচলিত মাটির চুলায় কিভাবে রান্না করা হয়, তা পরিদর্শন করেন জেসমিট সিং।
এরপর ছোট বোয়ালী গ্রামের গৃহীনিদের আঁখা ব্যবহার ও বায়োচার উৎপাদন পরিদর্শন। বিকালে দশচিড়া গ্রামের দুর্গার বাড়িতে কিভাবে আঁখা সেটিং এবং মেরামত করা হয় সে বিষয়ে আঁখা ব্যবহারকারীদের সাথে আলোচনা করেন জেসমিট সিং। সবশেষে টেপড়া সিসিডিবি’র কার্যালয়ে মাইকো ফাইন্যান্স ও স্থানীয় সংস্থা পার্ড এর কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন জেসমিট সিং ও বায়োচার প্রজেক্টের কর্মকর্তাগণ।