প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা বললেন মাহাথির মোহাম্মদ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা বললেন মাহাথির মোহাম্মদ

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ১৪ মাসের মাথায় অবশেষে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। তবে রাখাইনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রত্যাবাসন পেছানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন। আর প্রত্যাবাসন করা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে রাখা হলে মিয়ানমারকে সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা। সিঙ্গাপুরে আসিয়ান সম্মেলনে রোহিঙ্গা অধিকার ও এ-জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বিষয়ে কথা বলেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনে যোগ দিতে এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। তবে এ-সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্যর্থতার দায়ে ভর্ৎসনা করা হয়েছে মিয়ানমার নেত্রীকে। রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর নির্মমতায় অং সান সু চির নিশ্চুপ ভূমিকা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সু চির ব্যর্থতায় তিনি ‘ভীষণ হতাশ’ বলেও জানান।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজে আগে আটক ছিলেন, ভোগান্তিটা তার বোঝা উচিত এবং দুর্ভাগা রোহিঙ্গাদের সেই দশায় ফেলা তার উচিত নয়। কিন্তু সু চি আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করছেন, যেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়া যখন স্বাধীন হয়, তখন আমাদের দেশেও অন্য জাতির লোকজন ছিল। কিন্তু আমরা তাদের সবাইকে গ্রহণ করেছি। তারা এখন মালয়েশিয়ার নাগরিক। দেশের রাজনীতিতে তারা পূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন।’

একই দিন আসিয়ানের প্রতি ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতি, আইন ও নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী উইরান্তো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোট-সংগঠনটিকে আরো বেশি ভূমিকা রাখার সুপারিশ করেন।

এদিকে বুধবার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি এ-সময় তার উদ্বেগের কথা সু চিকে জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর যেভাবে নির্যাতন হয়েছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। যে কোনো মার্কিন নাগরিক এ-নিয়ে চিন্তিত। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের স্বীকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে এ-সব বিষয়ে লেখা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। আমি আশা করবো, দেশটিতে শান্তি আসবে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।’

গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতনের জেরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।.। তবে সব জেনে-শুনেও নিরব ভূমিকা পালন করেছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি। তার এমন আচরণ বিশ্বাসঘাতকতার শামিল বলে আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনটি বলছে, বিশ্বজনমত ও আস্থা দুটোই হারিয়েছেন সু চি।

ইউকের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক কেট অ্যালেন বলেন, ‘সু চি যখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছিলেন, কারারুদ্ধ ছিলেন- তখন আমরা তার মুক্তির দাবি জানিয়েছি। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি যা করলেন তা নিতান্তই আবাক করার মত। তিনি তার সেনা বাহিনীর কোন দোষ দেখতে পাননি, বরং রোহিঙ্গাদের ওপরই দোষ চাপিয়েছেন। যাতে করে তিনি আস্থা ভঙ্গ করেছেন। অ্যামনেস্টি যে ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনসায়েন্স’ পুরস্কার ম্যান্ডেলা, মালালার মতো ব্যক্তিদের দিয়েছে সেই পুরস্কার সু চির মতো ব্যক্তির ঝুলিতে মানায় না। তাই তা প্রত্যাহার করা হল।’

সু চির এমন কঠোর সমালোচনা হলেও মিয়ানমারের এক মুখপাত্র বলেছেন, তাদের এ-পুরস্কারের কোনোই প্রয়োজন নেই।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নাইপিদোর সমালোচনার মধ্যেই প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদে আশ্রয় শিবিরে রাখা হলে মিয়ানমারকে মানবিক সহায়তা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরাণার্থী বিষয়ক সংস্থা-UNHCR। অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও সহায়তা না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা। UNHCR-এর মত, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা যেন রাখাইনে স্বাধীনভাবে চলাফেরার নিশ্চয়তা পায়। তবে রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এক বিবৃতিতে পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াই পেছানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। এদিকে, অস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য ট্রানজিট সেন্টার নির্মাণ করেছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হলে প্রাথমিকভাবে সেখানেই রাখা হবে তাদের।