প্রচ্ছদ রাজনীতি রাষ্ট্রপতি থেকে ‘মন্ত্রী’ হতে চান তিনি?

রাষ্ট্রপতি থেকে ‘মন্ত্রী’ হতে চান তিনি?

অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় সরকারের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ তো সব সময়ই ঐক্যমতের সরকারের মাধ্যমেই দেশ পরিচালনা করে। এখনো সংসদের বিরোধী দলও সরকারে আছে। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট যদি আগামী নির্বাচনে একটি আসনও পায়, আর আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে জয়ী হয় সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জাতীয় সরকারে যুক্তফ্রন্টকে শর্ত সাপেক্ষে নেবে। অন্যদিকে, বিএনপি জাতীয় সরকারের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেছে, এটা আওয়ামী লীগের বাকশালী ফর্মুলা।

গতকাল মঙ্গলবার যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক এবং বিকল্পধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আগামী নির্বাচনের পর অন্তত ৫ বছরের জন্য জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করেছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

তবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় ঐক্যমতের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চায়। যারা জাতির পিতাকে স্বীকার করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে, যারা স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে জোট বা আঁতাত করে না, তাদের শক্তি যত কমই হোক, আমরা তাঁদের সঙ্গে রাখি।’

তিনি বলেন, ৯৬ তে আমরা ঐক্যমতের সরকার গঠন করেছিলাম। এখনো আমরা সংসদের সব দলকে নিয়েই সরকার গঠন করেছি।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন যে সরকার দেশ চালাচ্ছে সেটা তো জাতীয় সরকারই। সংসদে নির্বাচিত সকল দল সরকারে যাচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচনেও যদি আওয়ামী লীগ জয়ী হয়, সেক্ষেত্রেও আমরা সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করবো। এমনকি বি. চৌধুরী সাহেব এবং তাঁর দল যদি সংসদে আসেন, তাদেরকেও আমরা সরকারে নিতে পারি।’

আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিলেও বিএনপি জাতীয় সরকারের আহ্বানকে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই দেখছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলছেন, ‘সরকার যখন একটা প্রহসনের নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে, তখন জাতীয় সরকারের দাবি অপ্রাসঙ্গিক।’ তিনি বলেন, জাতীয় সরকারের প্রস্তাব, আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর কৌশল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, ‘বি. চৌধুরী সাহেব দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে। এখন তাঁর একটু হালুয়া রুটি খাবার সাধ হয়েছে। এজন্য তিনি জাতীয় সরকারের আবদার করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন এবং এরশাদের মতো বিশেষ দূত হবেন।’

বিএনপির নেতারা বলছেন, ৮৮ তে যেমন আ.স.ম আব্দুর রব যেমন গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হয়েছিলেন, এখন যেমন এরশাদ, তেমনি বি. চৌধুরী গৃহপালিত নেতা হতে চান। তিনি রাষ্ট্রপতি থেকে এখন মন্ত্রী হতে চান। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিতে চান।

বিএনপির নেতারা এসব অভিযোগ করলেও অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অধ্যাপক বি. চৌধুরীর পিছু ছাড়েননি। তিনি গতকালের ইফতার পার্টিতে বিএনপির একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৯ মে) রাজধানীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিকল্পধারার এক ইফতার মাহফিলের আগে দেওয়া বক্তব্যে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি এ প্রস্তাব রাখেন।

বি. চৌধুরী বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের পর মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা এবং দেশের অগ্রগতির জন্য আগামী ৫ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হোক। তাতে নির্বাচনের পরে দেশে কোনও সহিংসতা, আগুন জ্বালানো, অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচার হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় সরকারে দেশের সব মেধাবীকে একত্রিত করলে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ আরেকটা সুযোগ পাবে। এরফলে আমরা দেশের নিরাপত্তা দিতে পারবো। আমি সব রাজনৈতিক দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ প্রস্তাবের বিষয়ে।’

বি. চৌধুরী বলেন, ‘আশা করি, জাতীয় সরকার গঠনের এ প্রস্তাব বিকল্পধার রাখবে। যুক্তফ্রন্ট ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা করতে চান তারাও বিবেচনায় রাখবেন।’

যুক্তফ্রন্ট গঠনের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা নিউক্লিয়াস গঠন করেছি, যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছি। তার মাধ্যমে আমরা একটা নেতৃত্ব দিতে চাই। যে নেতৃত্বে চরিত্র থাকবে, যে নেতৃত্বে সততা থাকবে এবং কথা বলার দাম থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আজ শক্তির উত্থান চেয়েছি। সেই শক্তির মাধ্যমে আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সরকারি দলকে সাবধান করে দিতে পারবো-দেশের ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র জনগণের হাতে চলে যাবে; আপনারা কিছুই করতে পারবেন না।’

বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে না দেওয়া, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে আটকে রাখা কোনোভাবে সহ্য করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বি. চৌধুরী বলেন, ‘মামলা করে রাজনীতিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার আগেই আমরা বলেছি। যখনই বিচার হয়, বিচারের রায় আসে। সুপ্রিম কোর্ট-হাইকোর্টের রায়কে আপনারা বুড়ো আঙুল দেখান। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় কী হতে পারে।’