প্রচ্ছদ খেলাধুলা যে কারনে হারতে হল বাংলাদেশকে

যে কারনে হারতে হল বাংলাদেশকে

ওয়েস্ট ইন্ডিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ওয়ানডের সিরিজ জিতে নেয়ার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। বৃহস্পতিবার সকালে শেষ ওভারের ব্যর্থতায় মাত্র ৩ রানের জন্য জয়টি হাতছাড়া করেছে সফরকারীরা। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানে জিতে এগিয়ে ছিল মাশরাফীর দল। শনিবার ১-১এ সমতায় থেকে নামবে দুদল।

দিবা-রাত্রির ম্যাচ। ম্যাচের আগের রাতভর বৃষ্টি। ব্যাট-বলের লড়াই মাঠে গড়াতে গড়াতে রোদ-বৃষ্টির আসি-যাই খেলা চলেছে। উইকেটে আর্দ্রতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে ভাবনায় টস জিতে বোলিং নেয়া মাশরাফীর।

অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপঅর্ডারকে ভালোই চেপে ধরলেন বোলাররা। পাল্টা প্রতিরোধে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে দলকে লড়ার পুঁজি এনে দেন হেটমায়ার। কিন্তু বাংলাদেশ টপঅর্ডারের পাল্টা আঘাত আর মিডলঅর্ডারের দায়িত্বশীলতার কাছে জয় ধরা দিচ্ছি লাল-সবুজদের। শেষের না পারায় যেটি অধরা।

গায়ানায় শুরুতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে ৪৯.৩ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার সময় ২৭১ রান জমা করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ২৬৮ পর্যন্ত যেতে পেরেছে বাংলাদেশ।

জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ঝড় তোলেন বিজয়। ফিরেও যান দ্রুতই। পরে দলকে পথে রাখতে ঝড়টা ধরে রাখেন তামিম-সাকিবও। ইনিংসের মাঝামাঝি রানের গতিতে খানিকটা লাগাম আসে। তামিমের পর সাজঘরে ফিরে যান সাকিব। পরে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ দারুণ জুটিতেও হার এড়ানো যায়নি।

এদিন ৪.৪ ওভারে আসে দলীয় অর্ধশতক। ১৫তম ওভারেই একশ ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। উদ্বোধনীতে তামিমের সঙ্গে যোগ করা ঝড়ো ৩২ রানের ২৩-ই তুলে দিয়ে যান এনামুল হক বিজয়। উইকেট ছেড়ে এসে পাগলাটে শট খেলতে যেয়ে পেসার জোসেপের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন এ ডানহাতি ওপেনার। ২টি করে চার ছক্কায় ৯ বলে ২৩ রানের ইনিংস তার।

বিজয় ফিরলেও ঝড়ো গতিতে রান তোলা থামাননি তামিম ইকবাল। সঙ্গে যোগ হন সাকিব আল হাসান। দুজনে জুটিটা ৯৭ রান পর্যন্ত টেনে নেন। শেষদিকে একটু স্লথ হয়ে আসে জুটির রান তোলার গতি। তামিম ফিফটি পেরিয়ে আরেকবার পাল্টা আঘাতের জন্য তোড়জোড় করেন। শেষপর্যন্ত উইকেট দিয়ে ফেরেন।

২৫তম ওভারের শেষ বলে দেবেন্দ্র বিশুকে উইকেট ছেড়ে মারতে যেয়ে স্টাম্পড হন তামিম। আগের ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। এদিন থামলেন ৫৪ রানে। তবে এদিনও বলের সঙ্গে পল্লা দিতে পারেননি। খেলেছেন ৮৫ বল, ইনিংসে ৬টি চারের মার।

ফিফটি ছোঁয়ার পর রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া সাকিবও রানের জন্য তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে উইকেট ছুঁড়ে এসেছেন। পলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন নার্সের বলে। ফেরার আগে ৫ চারে ৭২ বলে ৫৬ রানের অবদান তার।

শুরুতেই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পরে ১৭ রানে থাকার সময় স্লিপে গেইলের কল্যাণে বেঁচে গেছেন বিশুর বলে ক্যাচ দিয়েও। সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন নিজস্ব ঢংয়েই। মুশফিককে নিয়ে গড়েছেন ৮৭ রানের জুটি। মুশির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতেই জুটিটা বড় হয়নি। ২ ছক্কায় ৫১ বলে ৩৯ রানে থামতে হয় রিয়াদকে।

রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন দারুণ খেলতে থাকা মুশফিকুর রহিমও। সেই সুযোগে সিরিজ জয়ের পথ উন্মুক্ত করার কাছাকাছি যাচ্ছিলেন। পথে তুলে নেন ২৯তম ওয়ানডে ফিফটিও। কিন্তু ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। কিন্তু রিভিউতে লেগ বিফোরের ডিসিশনে বাংলাদেশের বাউন্ডারি হলেও চার রান বাতিল হয়ে যায়।

৪৯তম ওভারের শেষ বলে সাব্বির(১২) ক্যাচ দিয়ে ফিরলে শেষ ওভারে ৮ রান দরকার পড়ে। হোল্ডারের করা প্রথম বলে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। ৫ চার ও এক ছয়ে ৬৭ বলে ৬৮ রানের ইনিংস থামে। পরের দুই বলে মোসাদ্দেককে ডট করান হোল্ডার। তৃতীয় বলে ২ নেন মোসাদ্দেক। চতুর্থ বলে এক নিতে পারেন। শেষ বলে ৫ লাগে বাংলাদেশের। ব্যাটিংপ্রান্তে মাশরাফী। অধিনায়ক নিতে পেরেছেন কেবল ১ রান। ৩ রানে হার!

এর আগে প্রথম ম্যাচে চার উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার মাশরাফী এ ম্যাচে যেনো সেখান থেকেই শুরু করন! ব্রেক থ্রু এনে দেন এদিনও, ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে। বাঁহাতি এভিন লুইসকে রাউন্ড দ্য উইকেটে করা অফস্টাম্পের বাইরের ভেতরে ঢোকা লেন্থ বলটি খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সাড়া দিয়ে লাইন মিস করেন ক্যারিবীয় ওপেনার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। এলবিডব্লিউ হয়ে সোজা সাজঘরে। একটি করে চার-ছয়ে ১৮ বলে ১২ রানের ইনিংসের ইতি।

পরের সাফল্যটি মিরাজের। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে থাকা গেইলকে ফেরত পাঠান এ অফস্পিনার। অফস্টাম্পে থাকা বলটি সুইপ করতে গিয়েছিলেন বাঁহাতি তারকা। ব্যাটে নিতে পারেননি, প্যাডে আঘাত হানে বোলারের চাওয়ামত জায়গাতেই! আম্পায়ার সোজা আঙুল তুলে দেন। ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৯ রানের ইনিংসটি থামে।

শাই হোপকে ফিরিয়ে তৃতীয় সাফল্য আসে সাকিবের করা ১৮তম ওভারে। শট খেলি-খেলি না করে ব্যাট চালিয়ে সাকিবের নিরীহদর্শন একটি বলে কাভারে সাব্বিরের ক্যাচ হন ৪৩ বলে ২৫ রান করা হোপ।

আগের ম্যাচে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন রুবেল। এদিন লাগল পঞ্চম বল পর্যন্ত। জেসন মোহাম্মেদকে মুশফিকের গ্লাভসে জমা করেন এ পেসার। ভেতরে ঢুকতে থাকা বলটি ১৫ বলে ১২ রান করা জেসনের ব্যাটে চুমু দিয়ে উইকেটের পেছনে যায়। তখন ২৪তম ওভারের খেলা।

স্বাগতিকদের সেসময় চেপেই ধরেছিল টাইগাররা। তবে মাটিকামড়ানো এক জুটি গড়ে সেই চাপ ফেরত দেন শিমরন হেটমায়ার ও রোভম্যান পাওয়েল। দুজনে যোগ করেন ১০৩ রান। পঞ্চম উইকেটটি ফেলতে তাই ৪৩তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় সফরকারীদের। রুবেল ৬৭ বলে ৪৪ রান করা পাওয়েলকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠালে ভাঙে জুটি। প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে পঞ্চম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ জুটি।

খানিকপরেই অধিনায়ক হোল্ডারকে(৭) স্টাম্পড করেন মুশফিক, বোলার সাকিব। একে একে অ্যাশলে নার্সকে তামিমের ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ, কিমো পলকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দী করেন রুবেল, আর দেবেন্দ্র বিশুর স্টাম্প এলোমেলো করেন ফিজ।

নিয়মিত উইকেট নেয়ার এই সময়টাতেই দারুণ এক শতক তুলে নেন হেটমায়ার। প্রথম ওয়ানডেতে ফিফটি তোলার পর এবার ১২৫ রানের ইনিংস। ৮৪ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে শেষপর্যন্ত থামেন ৯৩ বলের ইনিংস খেলে। যাতে কেবল ৩টি চার থাকলেও ছক্কার মার ৭টি। ২১ বছর বয়সী এ বাঁহাতির ১১ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় তিনঅঙ্ক ছোঁয়া।

অবশ্য ক্যারিবীয় মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান ৭৯ রানেই ড্রেসিংরুমে ফিরতে পারতেন, যদি রুবেলের করা ৪৩তম ওভারের চতুর্থ বলে সাকিবের হাত ছুঁয়ে বল সীমানার ওপারে চলে না যেত। পরে তাই উইন্ডিজের হয়ে ক্যারিবিয়ানদের সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি তুলে ফেলেন গায়ানিজ এ তরুণ। ২১ বছর ২১১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি। ১৯৭৮ সালে ডেসমন্ড হেইন্সের ২২ বছর ৭ দিন বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন দুইয়ে। হেটমায়ারকে রানআউটেই থামে স্বাগতিক ইনিংস। তার আগে ৪৯তম ওভারে রুবেলকে বিশাল দুটি ছক্কা হাঁকানোর সঙ্গে নেন মোট ২২ রান।

রুবেল ৯ ওভারে ৬১ রান খরচ করলেও ৩ উইকেট নিয়ে সেরা এদিন! ৯ ওভারে ৪৫ রানে সাকিব এবং ৮.৩ ওভারে ৪৪ রানে মোস্তাফিজ ২টি করে উইকেট নিয়ে তারপরই আছেন। ৯ ওভারে ৪৪ রানে এক উইকেট দখল মাশরাফীর। আর অফস্পিনে দারুণ প্রদর্শনী দেখানো মিরাজ ১০ ওভারের ৩টিই মেডেন করেছেন, ৪০ রানে উইকেট পেয়েছেন একটি।