প্রচ্ছদ খেলাধুলা মাশরাফির নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা

মাশরাফির নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

রোববার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে নড়াইল-২ আসনে প্রার্থিতার জন্য মাশরাফির মনোনয়নপত্র কেনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা। এতে মাশরাফির ভক্ত-সমর্থক এবং ক্রিকেট অনুরাগী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

অনেকেই তার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় বেশিরভাগ মানুষই তাঁর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ক্ষোভ, দুঃখ বা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

খেলার সময় ফেসবুক পেজে মাশরাফির এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতামত চেয়ে একটি পোল তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আওয়া‌মী লীগ থে‌কে ম‌নোনয়ন ফরম সংগ্রহ ক‌রে‌ছেন জাতীয় ক্রি‌কেট দ‌লের ওয়ান‌ডে অধিনায়ক মাশরা‌ফি বিন মুর্তজা। তাঁর এ‌ সিদ্ধান্ত সঠিক ব‌লে ম‌নে ক‌রেন কি?

প্রায় ১৩ হাজার ভোটারের মধ্যে ‘হ্যাঁ’ রায় দিয়েছে মাত্র ৩৩ শতাংশ ভোটার। আর বাকি ৬৭ শতাংশ ভোটার ‘না’ রায় দিয়েছেন। অর্থাৎ বেশিরভাগই মাশরাফির এ সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মানছেন না।

যদিও পেশাদার খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্থাতেই সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার উদাহরণ বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে নতুন নয়। ক্রিকেটারদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর না নিয়েই শ্রীলঙ্কার ২০১০ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন; তিনি ওই নির্বাচনে বিজয়ীও হন। তথাপিও নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি ‘অবসর’ নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেয়া উচিত ছিল মাশরাফির।

নির্বাচনে মাশরাফির প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনার ঝড়:

খেলার সময় ফেসবুক পেজে মুহায়মিনুল ইফতিহাদ রাহমিম নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘করলে করুক, কিন্তু ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে করুক
রাজনীতি করা সবার অধিকার। মাশরাফি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রাজনীতি করতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক, এখনো অবসর নেয়নি, সামনে বিশ্বকাপ, এই মুহূর্তে কি তার রাজনীতিতে জড়ানো খুব দরকার? সেই প্রশ্নের উত্তর হলো আমরা সেই পুরোনো অধিনায়ক মাশরাফিকেই চাই, খেলার মাঠে রাজনীতিবিদ মাশরাফির কোনো দরকার নাই।’

ফারুক মেহেদীর মন্তব্য, ‘তুমি নীরব (ম্যাশ), রাজনীতির ব্যবসায়ীরা হাসছে—-আর ১৬ কোটি ক্রিকেট প্রেমী যারা আবেগ ও ভালবাসায় তোমাকে ক্রিকেটীয় সম্পর্কে লালন করে তারা নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছে। আজকে সময় টিভির লাইভে তোমাকে দেখছিলাম তখন কেন জানি মনে হলো আবেগী বাঙালীর অমূল্য ভালবাসার পাহাড় ধসে পড়ছে— সামান্য একটি ক্ষণস্থায়ী রাজনীতির পদের ছোবলে। সর্ব মহলের নিখাদ ভালবাসা আপনার জন্য শুধুমাত্র ক্রিকেট মাঠের এক দুর্বার যোদ্ধা বদৌলতে তবে রাজনীতিক হিসেবে তার নুন্যতম পাবেন বলে আমার মনে হয় না! কারণ বাংলার রাজনীতিতে অপনীতির চর্চাই বেশী। সবশেষে (ক্রিকেট ভক্ত)আবেগী ভালবাসার জাতি মেনে নিয়েছে যে, আমাদের প্রিয় ক্রিকেটার মাশরাফি মরে গেছে। রাজনৈতিক মাশরাফি’র সূচনা হচ্ছে—-নির্বাচন, রাজনীতি, ও ক্রিকেট এক সাথে চলতে পারেনা হয় ক্রিকেট না হয় রাজনীতি একটা ধরুন। আপনাকে আর জাতীয় দলে মানায় না please অবসর নিয়ে রাজনীতি করুন আর অন্যকে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিন। মনে হয় ক্রিকেট ভক্ত সাধারণ, অতি সাধারণ দর্শক বাংলাদেশে ক্রিকেট বা কোন ক্রীড়া দলেই রাজনীতিক ব্যক্তিবর্গের বিচরণ চায় না, সকল খেলোয়াড় হউক নিরপেক্ষ মতের আদর্শের অনুসারী অন্তত খেলোয়াড় জীবনে।
প্রীতি শুভেচ্ছা রইলো # ম্যাশ#’

অনেকেই মাশরাফির আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।

আলী মোহাম্মদ হোসেন লিখেছেন, ‘নেতা যদি হতেই চাও ইমরান খানের মত আলাদা দল গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হও, আমরা আছি তোমার সাথে।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমির বিচারে রাজনীতিবিদদের ভাবমূর্তি এবং সাধারণ মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন সময়ে।

অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাজনীতি যোগদান করলে মাশরাফির যেই ভাবমূর্তি সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে তা অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রমজান রাজ নামের একজন লিখেছেন, ‘আমি চাইনা মাশরাফি বুড়ো বয়সে জেলে যাক, আমি চাই না দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার,ক্লিন ইমেজের মানুষটির দিকে আংগুল তাক করে কেউ কটু কথা বলুক! দেশের রাজনীতি তোমার মত ব্যক্তির জন্য না ‘বস’। প্লিজ ফিরে এসো ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে।’

তবে মাশরাফির নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো মানুষের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, তার মতো নেতৃত্বের দ্বারাই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের চেহারা বদলে যাবে।

আরমান মালিক লিখেছেন, ‘মাশরাফির মত ভাল লোকগুলো রাজনীতিতে আসা উচিত, এরাই দেশকে বদলাবে!’

আশরাফুল ইসলাম আমান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভারতে শচীন টেন্ডুলকার অবসর নেওয়ার ২/৩ বছর আগেই রাজ্যসভার এমপি হন। মোহাম্মদ কাইফ, ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন, শ্রীলংকার অর্জুনা রানাতুঙ্গা বর্তমানে সে দেশের তেলমন্ত্রী। সনাথ জয়সুরিয়া অবসর নেওয়ার দুই বছর আগে ইলেকশান করে নির্বাচিত হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশেই এমন নজির আছে। কিন্তু সমস্যা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে…।’

মো. নাফিস রহামন লিখেছেন, ‘একটা মানুষ রাজনীতি করবে।সংসদ নির্বাচন করবে এটা তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা।’

তাজ সিকদার লিখেছেন, ‘মাশরাফির মতো তরুণরা এগিয়ে না আসলে বর্তমান প্রজন্ম কখনোই রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হবে না। ৩০০ আসনে ৩০০ মাশরাফি চাই।’ শুভ কামনা কেপ্টেন।’

শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ক্রিকেটার মাশরাফি যা দিয়েছে বাংলাদেশকে রাজনীতিবিদ মাশরাফি তার চেয়েও বেশি দিবে বলে বিশ্বাস করি।’