প্রচ্ছদ সারাদেশ মানিকগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

মানিকগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জ :
যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মানিকগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন করে মাছের ঘের, রাস্তা-ঘাট পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রতিটি গ্রাম। বানভাসি এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক ফারুক হোসেন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরিচা পয়েন্টে যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে তা বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পদ্মাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে। অধিকাংশ বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ফসলী জমি তলিয়ে নানা দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ১ লাখ সাত হাজার ৮৫৩ জন ভিজিএফ কার্ডধারীদের দেওয়া হচ্ছে ১০ কেজি করে চাল। তবে, এখনও অনেকেই ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, এবারের বন্যায় ৩০ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে কমপক্ষে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৫৬ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জে বন্যা

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে (১-১০ জুলাই) চার হাজার ২১৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯ হাজার ৮৭৬ জন কৃষক। আর, দ্বিতীয় ধাপের বন্যায় (১১ -২৬ জুলাই) আরও ২৬ হাজার ৩০৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক লাখ কৃষক।

সিংগাইর উপজেলায় ছয় হাজার ১০০ হেক্টর, দৌলতপুরে পাঁচ হাজার ৭১৭ হেক্টর, শিবালয়ে চার হাজার ৫১১ হেক্টর, ঘিওরে চার হাজার ৩২ হেক্টর, হরিরামপুরে তিন হাজার ৮২৬ হেক্টর, মানিকগঞ্জ সদরে তিন হাজার ৫৪২ হেক্টর এবং সাটুরিয়া উপজেলায় দুই হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

আলোকদিয়া চরের জলিল শেখ জানান, সারা বছর আমরা গরু পালন করে থাকি। তা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে হাটে বিক্রয় করে সেই টাকা দিয়ে সারা বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে চলি। এবার বন্যার কারণে পশুগুলোর সঠিক যত্ন নিতে পারি নাই। ব্যাপারীরা প্রতি গরুর ২০-২২ হাজার টাকা কম দাম করতেছে।

আরো কয়েকজন কৃষক জানান, মাঠের সকল ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাভাবিক বন্যা হলেও কমপক্ষে আমন ধান হয়। এবার অস্বাভাবিক বন্যার কারণে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান আলী বিশ্বাস জানান, দু দফায় বন্যায় জেলায় ২৫ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমির বোনা আমন, দুই হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৮৫৭ হেক্টর জমির আউশ, এক হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমির সবজি, ১০৮ হেক্টর জমির রোপা আমনের বীজতলাসহ কিছু তিল এবং ভুট্টা পানিতে তলিয়ে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন নিয়মিত বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হচ্ছে। জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর চাষের সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সার এবং বীজ সহায়তা দেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম রহুল আমিন রিমন জানান, আমরা চরাঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছি। এ ছাড়া সরেজমিনে গিয়ে বন্যা দুর্গতদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম চলমান রাখা হবে।