প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ মাদক গ্রাম দেবিদাসপুরকে মাদকমুক্ত ঘোষনা করলেন এলাকাবাসি

মাদক গ্রাম দেবিদাসপুরকে মাদকমুক্ত ঘোষনা করলেন এলাকাবাসি

মনোয়ার হোসেন, মণিরামপুর থেকে: যশোরের মণিরামপুরে মাদক গ্রাম খ্যাত দেবিদাসপুরকে এবার মাদকমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এলাকাবাসি। মাদক গ্রামের দূর্ণাম ঘোচাতে আনোয়ারকে সভাপতি করে ২৫ সদস্যের মাদক নির্মূল কমিটি ঘোষনা। অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্থির নিঃশ^াস। প্রশাসনসহ সর্বস্তর মানুষের অভিনন্দন।
জানাযায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের দেবিদাসপুর গ্রামটি মাদক ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতাধর কিছু অসৎ রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও প্রশাসনের দূর্নীতিগ্রস্থ সদস্যদের সহযোগিতায় অত্র এলাকার মৃত মুহাম্মদ সরদারের পুত্র আয়ুব আলী (৪৫), তৈয়েব আলী (৪০), তৈয়েব আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫) মৃত আবুল হোসেন বক্সের পুত্র ওমর ফারুক রনি (৩০), হাসান আলীর পুত্র জুলফিক্কার আলী (৩০) সহ চিহ্নিত কিছু মাদক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইনসহ নেশাজাতীয় ইনজেকশনের মত ভয়ংকর মাদকদ্রব্য খুব সহজে পাওয়া যেতো। এছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও সাতক্ষীরা জেলা কলারোয়া উপজেলার সাথে মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর উপজেলাসহ খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের অন্যাতম প্রধান সড়কটি এই গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়ায়-মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের মাদকদ্রব্য আনা-নেয়া, ক্রয়-বিক্রয় খুব সহজতর হয় এ গ্রামটিতে। এখানে এমন কোন মাদকদ্রব্য নেই যা পাওয়া যায়না। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এলাকার উঠতি বয়সের তরুণরাও মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। যে কারণে গ্রামটি মাদক গ্রাম হিসেবে সমাধিক পরিচিতি লাভ করে।
মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের সেন্টিকেটের ভয়ে এতদিন এলাকাবাসির ইচ্ছা থাকা সত্বেও প্রতিহত করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। সম্প্রতি সরকার ও প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ ও কঠোর অবস্থান নিয়ে তা নির্মূলের ঘোষনা দিয়ে ব্যাপক ধড়-পাকড় শুরু করেছেন। এতে মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট্যরা কোন ঠাসা হয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় মণিরামপুর সদর ইউনিয়নের ৪নং দেবিদাসপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন, প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তি মাষ্টার নূর মোহাম্মদ, সমাজ সেবক ওহাব আলী, কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থীসহ এলাকার সূধীজন এলাকাটির মাদক গ্রামের দূর্ণাম ঘোচানোর জন্য গ্রামটিকে মাদক মুক্ত করার ঘোষনা করেন। এ কাজে তারা গ্রামটির সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করলেন। এগিয়ে আসার লোকের অভাব হলো না। বিশেষ করে এলাকার যুবক শ্রেণি তাদের এই এলাকাটির মাদক গ্রামের দূর্নাম ঘোচানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শতষ্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসলেন। প্রশাসন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সর্বস্তর মানুষের সহযোগিতার আশ^াসের ভিত্তিতে দেবিদাসপুর গ্রামটিকে মাদক নির্মূল ও প্রতিহত করার জন্য ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি, ওয়ার্ড পুলিশিং কমিটির সদস্য হাদিউজ্জামানকে সম্পাদক এবং এলাকার তরুণ ও যুবকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি তৈরী করা হয়। সে অবধি এ কমিটি দৃঢ়তার সাথে মাদক সেবনকারী, পাচারকারী ও বহনকারীদের প্রতিহত করতে দিনরাত নানা মুখী কাজ করে যাচ্ছেন। তারা প্রতি সপ্তাহে এলাকাবাসিকে নিয়ে মতবিনিময় সভাসহ নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি আনোয়ার হোসেন কমিটির সদস্যদের নিয়ে ওই এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতাদের বাড়ী-বাড়ী গিয়ে মাদক কারবার থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছেন। তিনি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে, মাদক ব্যবসা লাভ হলেও কাজটি ধর্ম, সমাজ আইন বিরোধী একটি ঘৃণ্য কাজ এবং অনিশ্চিত জীবন। অভিশপ্ত এ পথ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে তাদেরকে চাষাবাদ করার জমি, ভ্যানগাড়ী ক্রয়ের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন রকমের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হবে। ফলে কমে আসছে ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীসহ সেবনকারীদের আনাগোন্।া কমছে মাদকের সহজ লব্যতা, ফিরছে জনমনে শান্তি। এতে অত্র এলাকার অভিভাবকরা কিছুটা হলেও স্বস্থি অনুভব করছে। ইউপি সদস্যের এ উদ্যোগকে স্বগত জানিয়েছে প্রশাসনসহ এলাকাবাসি। ইতিমধ্যে এলাকাবাসির সহযোগিতায় মাদক নির্মূল কমিটি ওই এলাকা থেকে মহিলাসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক জানান, সরকারের মাদক নির্মূলের অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীরা কোন ঠাসা হলেও অভিনব পদ্ধতিতে এ এলাকার কিছু মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণ একটি ভাল উদ্যোগ। মাদকের মত ভয়াবহ জিনিষ এ রকম সামাজিক ভাবে নির্মূলের সিদ্ধান্ত যতেষ্ঠ কাজ হবে বলে আমার মনে হয়। ফলে জনসাধারনের মাঝে মাদক বিরোধী মনোভব সৃষ্টি করে জনসচেতনাতা সৃষ্টি ইউপি সদস্যের এ পদক্ষেপ অবশ্যই প্রসংসার দাবী রাখে। তার মতে, যারা মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, সৎ পথে ফিরে আসতে চাইলে তাদেরকে আমার পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হবে। থানার অফিসার ইনচার্জ মোর্কারম হোসেন জানান, মণিরমাপুরের প্রত্যেকটি এলাকায় যদি এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতো তবে মাদক উচ্ছেদে করতে প্রশানেরও সহজ হতো। তাদের এ কাজকে আমি স্বাগত জানায়, মাদক নির্মূলে যে কোন ধরণের সহযোগিতা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের দেয়া হবে।