মুখে ভারত বিরোধিতার কথা বললেও রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ভারতের দিকেই তাকিয়ে বিএনপি। ভারতের কাছেই সমাধান চায় দলটি। আন্দোলন বা নির্বাচন নয়, বিএনপি প্রথমে চাইছে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা করতে। বিএনপির নেতারাই বলছেন, ‘ভারত না চাইলে কিছুই হবে না।’ বেগম জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের আগে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে চাইছে দলটি।
বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, ‘ভারত না চাইলে বাংলাদেশে এখন কিছুই হবে না। এই সরকারের একমাত্র ভয়ের জায়গা হলো ভারত।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘ভারত যদি শুধু বলে তারা বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। জনগণের রায়ের প্রতিফলন দেখতে চায়। তাহলেই সবকিছু সহজ হয়ে যায়।’ ওই নেতার মতে, ‘তাহলেই সরকার সমঝোতার জন্য এগিয়ে আসবে। এছাড়া এই সরকারকে কেউ এতটুকু টলাতে পারবে না ‘
বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা এখন খোলামেলা ভাবেই বলছেন, বাংলাদেশে আন্দোলনের কোনো বাস্তবতা নেই। মানুষ এখন নিজেদের কাজ, আর উন্নতি নিয়ে ব্যস্ত। দলের জন্য জীবন দেওয়ার দিন শেষ হয়েছে। তাঁদের মতে ‘এখন যদি আওয়ামী লীগও বিরোধী দলে থাকতো, তাহলে তারাও আন্দোলন করতে পারতো না। সাধারণ জনগণ তো নেই, নেতাকর্মীরাও এখন দলের জন্য জীবন দিতে রাজি নয়।’
বিএনপির নেতারা মনে করেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে আওয়ামী লীগ এখন মোটেও ঘাবড়ায় না। বরং অর্থনৈতিক উন্নতি এবং বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল না হওয়ার কারণে, আওয়ামী লীগ এখন তাদের শাসন মানে না।’
বিএনপি মনে করে, ভারতের জন্যই ২০১৪’র নির্বাচন আওয়ামী লীগ করতে পেরেছে, ভারতের জন্যই ৫ বছর ক্ষমতায় আছে। ভারত যদি বর্তমান অবস্থায় থাকে তাহলে এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জিতবে।’ বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা মনে করেন, ‘এখনো বাংলাদেশে ভারতের কাছে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের উপর ভারত পুরোপুরি সন্তুষ্টও নয়।’
ঐ নেতা বলেন,‘ভারত কখনো বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী নেতার উত্থান পছন্দ করেনি। শেখ হাসিনার যেভাবে উত্থান হচ্ছে তাতে সাউথ ব্লক খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। কিন্তু জঙ্গি দমন, বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে শেখ হাসিনা যেভাবে ভারতকে সহায়তা দিয়েছে, তা অতুলনীয়। সীমান্তে নতুন করে বিচ্ছন্নতাবাদীদের অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে চায় না ভারত। যে কারণেই তাদের সামনে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।’
ঐ নেতা স্পষ্ট করে বলছেন, ‘আমরা ভারতকে বোঝাতে চাইছি, অতীতে বিএনপি কি করেছে তা ভুলে যেতে। আগামীতে আমরা বর্তমান সরকারের ভারত নীতি অব্যাহত রাখবো।’
কিন্তু ন্যাড়া তো একবারই বেলতলা যায়, বিএনপির সেই ২০০১ এবং প্রতিশ্রুতি ভারত এত সহজে ভুলে যায় কিভাবে? তবে ভারতকে পটানোর চেষ্টায় ত্রুটি নেই বিএনপি নেতাদের।