প্রচ্ছদ জাতীয় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো একাদশ সংসদ

বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো একাদশ সংসদ

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম : 

মাত্র সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী ছিলো একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন। এর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে স্বল্পতম সময়ের সংসদ অধিবেশনের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো এই সংসদ। সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে আজ শনিবার বিকাল ৫টার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অধিবেশন শুরু হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় শেষ হওয়া এই অধিবেশন প্রধান ইস্যু ছিলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সতর্কতা।

করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও সাধারণ ছুটির মধ্যে আহুত এই অধিবেশনে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্বল্প সংখ্যক সংসদ সদস্য অংশ নেন। তবে সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও উপনেতা গেলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ সিনিয়র সংসদ সদস্যরা অনুপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত সংসদ সদস্যরা বিগত দিনের আসন বন্টন এড়িয়ে করোনা সতর্কতা মেনে আসন গ্রহণ করেন। অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দু’টি আসন পর পর তারা বসেছিলেন।

অধিকাংশের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথায় ক্যাপ ছিলো। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিরাও একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সংসদ ভবনের প্রবেশমূখে সকলকেই জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের তাপমাত্রা মাপা হয়। এছাড়া নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংসদ অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি শুরুতেই বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকসহ মৃত্যুবরণকারী অন্যান্যদের জন্য শোক প্রকাশ করেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অধিবেশন ডাকার কারণও ব্যাখ্যা করেন। সম্ভাব্য সকল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্পিকার। এরপর তিনি স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ পরিচালনার জন্য সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, আবুল কালাম আজাদ, এবি তাজুল ইসলাম ও মেহের আফরোজ চুমকিকে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সরকারি কর্ম কমিশনের বার্ষিক রিপোর্ট উত্থাপন করেন।

স্বল্প সময়ের অধিবেশনের প্রধান কার্যসূচি ছিলো শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা। চলতি সংসদের সদস্য শামসুর রহমান শরীফসহ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশিষ্টজনদের মৃত্যুতে এই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা একইসঙ্গে শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা ও অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরো অংশ নেন প্রবীণ সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী ও শাহাজান খান। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। এরপর প্রয়াতদের স্মরণে নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট মো. মুজিবুর রহমান।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশটি পড়ে শোনান। সংবিধানে এক অধিবেশন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আবার সংসদ বসার বাধ্য-বাধকতা থাকার কারণে এই অধিবেশন আহ্বান করা হয়। সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রয়ারি। তাই করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে এই অধিবেশন আহ্বান করা হয়। অতীতের মতো এই অধিবেশনে কোন প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিলো না। কোন বিল উত্থাপন ও পাস হয়নি। অধিবেশন চলাকালে সংসদ ভবনে সমাগম এড়াতেও নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। গণমাধ্যম কর্মীদের অধিবেশন কাভার করতে না যাওয়ার জন্য সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। দর্শণাথীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া অধিবেশনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারি ব্যতীত অন্যদের উপস্থিত না হতে নির্দেশনা দেয়া হয়।