প্রচ্ছদ খেলাধুলা প্রতিটি আইপিএল মুস্তাফিজের প্রতিভাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে

প্রতিটি আইপিএল মুস্তাফিজের প্রতিভাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে

একটি করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) আর মুস্তাফিজুর রহমানের অনেকখানি পিছিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসারের এবারের পিছিয়ে যাওয়া মাস খানেকের। এটা পুষিয়ে নেওয়ার মতো। কিন্তু প্রথম আইপিএল অভিজ্ঞতায় সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতা মুস্তাফিজ সেবার পিছিয়ে যান কয়েক বছর। এমনকি যে ছন্দ আর গতিতে ছুটছিলেন, তা হয়ে উঠেছে কেবলই স্মৃতি। মুস্তাফিজের আর অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা হয়নি।

সময়টা তখন কেবলই কাটার মাস্টারের। বাংলাদেশ দলে পা রেখে ২২ গজে এঁকে যাচ্ছিলেন মুগ্ধতার ছবি। পাকিস্তান, ভারত কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা—কোনো দলের ব্যাটসম্যানই মুস্তাফিজকে সামলে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই পেসারের একেকটি ডেলিভারি কুপোকাত করেছে রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, ডি কক, মোহাম্মদ হাফিজদের মতো ব্যাটসম্যানদের। মুস্তাফিজ তখন এক বিস্ময়ের নাম। আর তার একেকটি ডেলিভারি আরও বড় বিস্ময়।

এমন বিস্ময় বালককে চিনতে সময় লাগেনি ক্রিকেট দুনিয়ার। মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন মুস্তাফিজ। তাকে নিয়ে আগ্রহেরও শেষ নেই। সেই আগ্রহ থেকেই ২০১৬ সালে আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ মুস্তাফিজকে দলে ভেড়ায়। তরুণ পেসার মুস্তাফিজও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন প্রায় প্রতি ম্যাচে। ২২ গড়ে ত্রাস ছড়িয়ে হায়দরাবাদের জয়ে রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। যার স্বীকৃতিস্বরূপ পান সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার।

কিন্তু ওই পুরস্কার নিয়ে দেশে ফেরা মুস্তাফিজ সঙ্গে নিয়ে আসেন ইনজুরিও। কাঁধের সেই ইনজুরি প্রাথমিকভাবে সাধারণ পর্যায়ে থাকলেও পরবর্তীতে হয়ে ওঠে প্রধান বাধা। ওই ইনজুরি নিয়েই কাউন্টি খেলতে যাওয়া মুস্তাফিজ ইনজুরির ছোবলে মাঠ থেকে ছিটকে যান লম্বা সময়ের জন্য। ফিরতে তাকে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে। তবুও মেলেনি চেনা ছন্দ। হয়ে উঠেছেন আর দশটা বোলারের মতো। যে কারণে আইপিএলে নিজের দ্বিতীয় আসরে হায়দরাবাদের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় মুস্তাফিজের। তবুও স্বস্তি যে, ওই আসর শেষে তাকে ইনজুরিতে পড়তে হয়নি।

একটু একটু করে যখন চেনা রূপে ফিরছেন মুস্তাফিজ, তখনই আবার ডাক আসে আইপিএল থেকে। এবার লড়াই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। এবার অভিজ্ঞতাটা ভালো যায়নি। প্রথম দিকে টানা ম্যাচ পেলেও পরের দিকে দর্শক সারিতে থাকতে হয় তাকে। সাত ম্যাচে ২৭.৩ ওভার বল করেছেন মুস্তাফিজ। রান খরচা করেছেন ৮.৩৬ গড়ে। কিন্তু উইকেট পেয়েছেন মাত্র সাতটি। খারাপ অভিজ্ঞতার পাশাপাশি খারাপ সময়ও দেখতে হচ্ছে বাংলাদেশ পেসারকে। এবারও ইনজুরি বাঁধিয়ে ফিরেছেন তিনি। পায়ের পাতার ইনজুরির কারণে আফগানিস্তান সিরিজ খেলা হচ্ছে না তার। উইন্ডিজ সফরও নিশ্চিত নয়।

একটি করে আইপিএল মানেই যেন মুস্তাফিজের ইনজুরি। আর তাতে জাতীয় দলের জন্য তাকে লম্বা সময়ের জন্য না পাওয়া। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগের জন্য জাতীয় দলকে ঠিকভাবে সার্ভিস দিতে পারছেন না বাঁহাতি এই পেসার। বারবার এমন হওয়াতে বিসিবি ব্যাপারটি নিয়ে ভাবছে। মুস্তাফিজকে আগামী আইপিএল খেলতে দেওয়ার অনুমতি নাও দেওয়া হতে পারে। কিন্তু মুস্তাফিজ যে দুইবার পিছিয়ে গেলেন, হয়ে উঠলেন ধারহীন, এর দায় কি কেবল তারই?

বাংলাদেশ পেসার যখন প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে যান, তখন কেবল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখানোর পর্ব শেষ হয়েছে তার। বল হাতে আলো ছড়ালেও অনেক কিছুই মুস্তাফিজের তখন অজানা। এমনকি অনেক ক্রিকেটারের নামও জানা ছিল না তার। আর ইংরেজি বলতে পারাটা ছিল প্রায় অসাধ্য। হায়দরাবাদের বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে অনেকটা ইশারায় কথা বলতে হয়েছে তাকে। এমন এক ক্রিকেটারকে খেলতে পাঠিয়ে দেওয়ার আগে কতটা ভেবেছিল বিসিবি?

বিসিবি সেভাবে ভাবেনি। এর নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের সাবেক এক ক্রিকেটার বলেন, ‘এ দায় বিসিবিরও নিতে হবে। আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের মাসিক বেতন কি আর সব দলের মতোই? মনে হয় না। ক্রিকেটাররা কেবল টাকার কারণেই এসব লিগে খেলতে যায়। ভারতের কি ক্রিকেটার কম? তারা তো পৃথিবীর কোনো লিগে খেলে না। বিসিসিআই তাদের খেলতে দেয় না। এ জন্য তারা তাদের ক্রিকেটারদের বেতনও সেভাবে নির্ধারণ করেছে। বিসিবিরও বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। তাহলে এভাবে ক্রিকেটার হারাতে হবে না।’

সাবেক ক্রিকেটার বা বোর্ডের বাইরে থাকার কারণেই তিনি এমন বলছেন, সেটা ভাবার অবকাশ নেই। বর্তমান সময়ের ক্রিকেটাররাও তাদের বেতন নিয়ে মনোপূত নন। বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থেকে জাতীয় দলে খেলেছেন এমন একজন ক্রিকেটার বলছেন, ‘ধোনি-কোহলিদের বেতন কত, আর আমাদের কত? ওরা বড় দেশ, ওদের বেতন বেশি হবে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের বেতন এত কম হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। যতটুকু জানি বিসিবির আয় কম নয়।’

ক্রিকেটারদের কেবল জাতীয় দলের দিকেই মনোযোগ রাখতে বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মা, হার্দিক পান্ডেদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত। অধিনায়ক বিরাট কোহলি মাসিক বেতন পান এক কোটি রুপিরও বেশি। সেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটাদের বেতন পাঁচ লাখও ছাড়ায়নি। যে কারণেই মুস্তাফিজ-সাকিবদের খেলতে যেতে হয় বাইরের লিগে। মাঠে লড়তে হয় ইনজুরির ঝুঁকি নিয়েও।- প্রিয়