প্রচ্ছদ রাজনীতি নির্বাচন নীলফামারী -১ : আসন রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে মাঠে লড়ছে আ’লীগ-বিএনপি-জাতীয়পাটি

নীলফামারী -১ : আসন রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে মাঠে লড়ছে আ’লীগ-বিএনপি-জাতীয়পাটি

বখতিয়ার ঈবনে জীবন,ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি ঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী -১ (ডোমার-ডিমলা) আসনটি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে প্রধান তিন রাজনৈতিক দলসহ জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। কেন্দ্রীয় গ্রীন সিংনাল না পেলেও মনোনয়নের প্রতাশায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমে দলীয় নেতার্কমী খোজ খবর ও গণসংযোগে মেতে উঠেছে। তবে বিএনপি ও জাতীয় পাটিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির একক প্রার্থী প্রাচারে নেমেছে।
আসনটিতে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা আব্দুর রউফ নির্বাচিত হন। এই আসন থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মত প্রবীন নেতাও নেতৃত্বে ছিলেন। বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনও এই আসনে নেতৃত্ব দিতেন। তবে আসনটি সবচেয়ে বেশী সময় ছিল জাতীয় পাটির সাবেক মন্ত্রী শফিকুল গাণি স্বপন, এমপি মনছুরা মহির উদ্দীন মুক্তি, এন.কে আলম চৌধুরী ও শিল্পপতি জাফর ইকবাল সিদ্দিকীর হাতে। এই আসনটির দাবিদার প্রাধান তিনটি রাজনৈতিক দলের। তাই আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয়পাটি আসনটি রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নেমে পড়েছে। গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দীন সরকার এমপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর কয়েকদিন বাকি থাকতেই আরও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর তৎপরতায় নিজ দলের প্রার্থীতা নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতার মুখে পড়েছেন তিনি। তবে তিনি দলীয় কোন্দল দূর করে আসনটি রক্ষা করার চেষ্টায় আছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে একাধিক নেতা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে পোষ্টার ফেষ্টুন লাগিয়ে গণসংযোগ করে চলেছেন তারা। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্যদের তালিকায় রয়েছেন ,এ্যাডঃ মনোয়ার হোসেন, লেফ্টেন্যান্ট কর্ণেল(অবঃ) তছলিম উদ্দিন, ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সরকার ফারাহানা আক্তার সুমি, গণপরিষদের সদস্য মরহুম আব্দুর রহমান চৌধুরীর উত্তরসুরী ব্যারিস্টার ইমরান কবির চৌধুরী জনি। বিএনপি থেকে পুত্র শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের অনুপস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে এই আসনে একক প্রার্থী হিসাবে ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলাম বিউটি। ইতি মধ্যে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাকে মেনেও নিয়েছে।
আফতাব উদ্দীন সরকার এমপি-নির্বাচনী এলাকায় ২০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শক্ত অবস্থানে দাড়িয়ে আছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আসনটি ধরে রাখতে পারবেন বলে নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা।
এ্যাডঃ মনোয়ার হোসেন-গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিল। দল তাকে মনোনয়ন না দিলেও তিনি নৌকা প্রতিকের পক্ষে নির্বাচনের সমস্ত কাজ করে গেছেন। নির্বাচনের পর থেকে তিনি তৃর্ণমুলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রচার প্রচারনা অব্যহত রেখে নিজেস্ব উদ্দেগে তার নির্বাচনী এলাকায় সুখে-দুঃখে সব মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। এবার তিনি এলাকায় হেবীওয়েট প্রার্থী হিসাবে আতœপ্রকাশ পেয়েছে। দলীয় ভাবে তাকে মনোনয়ন দিলে তিনিও আসনটি ধরে রাখতে পারবেন।
লেঃ কর্ণেল(অবঃ) তছলিম উদ্দিন- ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে জেন্টেলম্যান ক্যাডেট হিসাবে যোগদান করেন এবং ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে স্বাভাবিক অবসর গ্রহন করেন। দীর্ঘ কর্ম জীবনের পর এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সেবায় নিজেকে জড়াতে চান। তাই তিনি ডোমার-ডিমলার বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন ও প্রচারনা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।তিনি ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সবার সমর্থন কামনা করেন।
খায়রুল ইসলাম বাবুল- ১৯৬৯ সাল থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে।৯৬ সাল থেকে দলীয় ভাবে মনোনয়ন চেয়ে আসছে ডোমার উপজেলার আওয়ামীলীগের এ সভাপতি। আওয়ামীলীগের সভাপতির পাশাপাশি বণিক সমিতি,ধীরাজ পাঠাগার ও নাট্য সমিতির সভাপতিসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তার সাথে নির্বাচনী এলাকায় তৃর্ণমুল পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছে।
সরকার ফারহানা আক্তার সুমি-কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সংসদের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় একাধিক বার তাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার মানুষ তাকে নেত্রী হিসাবে দেখতে চায়। একাদশ সংসদ নির্বাচন থেকে এলাকায় প্রচার-প্রচারনা গণসংযোগ অব্যহত রেখে সরকারের কাছ থেকে এলাকায় উন্নয়নের কাজ অব্যহত রেখেছে। একাদশ সংসদ নির্বচনে তিনিও যোগ্য প্রার্থী হিসাবে আতœপ্রকাশ পেয়েছে।
ইমরান কবির জনি-গণ পরিষদের সদস্য মরহুম আব্দুর রহমান টৌধুরীর উত্তরসূরী হিসাবে দীর্ঘ দিন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। মাঠ পর্যায়ে প্রচার-প্রচারনার পাশাপাশী গণ সংযোগ চালিয়ে আসছে। মহাজোটের প্রার্থী হলে তিনি নতুন চমক দেখাবেন বলে অনেকের প্রত্যাশা।
জাফর ইকবাল সিদ্দিকী-গত নির্বাচনে আসনটি আওয়ামীলীগকে ছেড়ে দেওয়ায় জাতীয়পাটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ে। আসনটি এবার মহাজোটের অন্যতম শরীকদল জাতীয়পাটিকে ছেড়ে দিলে জয় নিশ্চিত হবে বলে তৃর্ণমুলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
সেলিনা ইসলাম বিউটি- হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে বিএনপি এবারও নির্বাচনে যাবে কি-না? দল নির্বাচনে গেলে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন দলীয় কোন্দল দূর করে সকল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করলে আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবেন বলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
আব্দুর রশিদ-হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচন। দীর্ঘদিনের ঝিমিয়ে থাকা নেতাকর্মীরা তার জবাব দিবে ব্যালোটে। এই আসনটি এবার জোটের জয় নিশ্চিত।
জেবেল রহমান গাণি-প্রবীন রাজনৈতিক পরিবারের অন্যতম সদস্য যাদু ও পিতার নাম সামনে রেখে বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন থেকে প্রচার-প্রচারনা অব্যহত রেখেছে। তিনি গণ সংযোগ চালিয়ে সবার মন জয় করতে চায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাশীলদল আওয়ামীলীগের বেশ কয়েক জন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী মাঠ ঘাট চষে বেড়াচ্ছে। একে অপরের চেয়ে নির্বাচনী এলাকায় নিজেকে পাওয়ার হিট প্রার্থী হিসাবে গড়ে তুলার জন্য প্রাণপন প্রচারনা অব্যহত রেখেছে। কারণ এবার হাইকমান্ড তৃর্ণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন দিয়ে প্রার্থীতা নির্বাচন করবে। ওই সব মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা নৌকা পেলে প্রার্থী হবেন আর প্রতিক না পেলে যিনি নৌকা প্রতিক পাবেন তার পক্ষে ভোট করবেন বলে ঘোষনা দিলেও তাদের পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গড়ে উঠেছে পক্ষ-বিপক্ষের টিম। এই সুযোগ হাতিয়ে নিচ্ছে মহাজোটের অন্যতম শরীকদল জাতীয় পাটির সাবেক এমপি জাফর সিদ্দিকী। এবার তিনি মহাজোটের প্রার্থী হলে আসনটি দক্ষলে রাখতে তার পক্ষে বেশী কষ্ট করতে হবে না। জোটের প্রার্থীরা প্রচারে না নামলেও তারা কেন্দ্রীয় নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে তাদের অবস্থা এবার অনেকটা শক্ত অবস্থান গড়ে উঠেছে। জোট থেকে হেবিওয়েট প্রার্থী হলে আসনটি তাদের পুনরুদ্ধার করতে সম্ভব হবে বলে তৃর্ণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতাশা।