প্রচ্ছদ রাজনীতি দেশে চিকিৎসা বৈষম্য ভয়াল রূপ ধারণ করেছে : রিজভী

দেশে চিকিৎসা বৈষম্য ভয়াল রূপ ধারণ করেছে : রিজভী

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

দেশে চিকিৎসা বৈষম্য ভয়াল রূপ ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুধুই ‘ভিআইপি লাইভস ম্যাটার’ করছে। রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধুই তার দলের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, নেতা ও ভিআইপিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাদের জন্য দ্রুততার সাথে সিএমএইচ, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, হেলিকপ্টার, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করছেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষগুলো চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তাতেই মারা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের কোনো খবর নিচ্ছেন না। তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে শুধুই ‘ভিআইপি লাইভস ম্যাটার’। গরীব মানুষের জীবন উপেক্ষিত।

বর্তমান দেশে ‘চিকিৎসা বৈষম্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে’ বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। ঢাকায় কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ বেড খালি নেই, কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে করোনার ওয়ার্ড খুললেও আইসিইউ বেড ও চিকিৎসার জন্য গলাকাটা দাম নিচ্ছে। তিন মাসে করোনা উপসর্গ নিয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে-যাদের মধ্যে সিংহভাগ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি। বেঁচে থাকাবস্থায় নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারেননি তারা করোনা আক্রান্ত কিনা।

তিনি বলেন, সরকারের অবহেলার কারণে বাংলাদেশে করোনা শনাক্তকরণও সঠিকভাবে হচ্ছে না। করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কিটও ত্রুটিপূর্ণ। জাপানে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাটার্ড ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাপান সরকার। কারোনাভাইরাসের নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়েও চার বাংলাদেশীর শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটি। এই চার বাংলাদেশীর হেলথ সার্টিফিকেটে বলা ছিলো, তারা করোনায় আক্রান্ত নন এবং ভ্রমণে তাদের নিষেধাজ্ঞা নেই। এভাবে বাংলাদেশর করোনা টেস্ট নিয়ে যদি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই ধরনের নেতিবাচক বার্তা যায় তাহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অথচ যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার মধ্যেই নিজেদের রাজনীতির সাফল্য মনে করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে সরকার।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যয় বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, করোনাত্তোর অর্থনৈতিক মন্দাকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশে সরকারি ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী নিজেদের ব্যয় কমিয়ে দৃষ্টান্ত করার চেষ্টা করেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সরকার হাঁটছে উল্টোদিকে। এই করোনা ভাইরাসের সঙ্কটের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি অফিসের ব্যয় বাড়িয়েছেন ৯৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের খরচের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। গত বছর তিন হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখার পর ব্যাপক সমালোচনা হলেও সরকার এতে কর্ণপাত করেনি।

করোনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিদিন মৃত্যুর বিভীষিকা হানা দিচ্ছে সর্বত্রই। পরিচিত মানুষের মৃত্যুর খবর শুনে ঘুমোতে যাচ্ছি, আবার ঘুম থেকে উঠেও শুনছি অসংখ্য দুঃসংবাদ। কিন্তু সরকারের হিংসা-বিদ্বেষ ও নির্মমতা থেমে নেই। করোনা ভয়ের পাশাপাশি গ্রেফতার, গুম আর মিথ্যা মামলার আতঙ্কে দিন কাটছে দেশবাসীর। সামান্য সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার খড়গ নেমে আসে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা ভুলে গেছে যে, যেকোনো অন্যায়েরই মাশুল দিতে হয়।

রিজভী জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৪ মার্চ সুস্পষ্টভাবে কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের কাজকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা এবং তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি শ্রমিক, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা।

এদিকে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও গাবতলী শহীদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন ও জিয়ার নামফলক মুছে ফেলা ও মাগুরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কৌশিক আহমেদ সোহাগের ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানান রিজভী। তিনি বলেন, এই করোনাকালেও শহীদ জিয়ার জন্মভূমিতে পর্যন্ত থেমে নেই সরকারের ঘৃণ্য প্রতিহিংসাপরায়ণতা। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। নামফলক থেকে নাম মুছে ফেলা সহজ, কিন্তু মানুষের হৃদয় ও ইতিহাসের পাতা থেকে স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের অবিস্মরণীয় নাম মুছে ফেলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসায়ীরা একজন শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকেই অবমাননা করলো। এই সরকার স্বাধীনতার মূল চেতনার বিরোধী বলেই তাদের মন মহান মুক্তিযোদ্ধা-জিয়া ভীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সরকার বিএনপ ‘র জনপ্রিয়তায় আতঙ্কিত হয়ে সবকিছু থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে চাইলেও এদেশের মানুষ যুগে যুগে জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করেই তার নামকে অমর করে রাখবে।