প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ খেজুরের গুড় তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন যশোরের মনিরামপুরের গাছিরা

খেজুরের গুড় তৈরিতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন যশোরের মনিরামপুরের গাছিরা

মো:মনোয়ার হোসেন, যশোর জেলা প্রতিনিধি: খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য মনিরামপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় গাছিরা এখন মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলার সর্বত্রই খেজুরের গাছ তৈরি শেষ হলেওশুরু হয়েছে এখন রস সংগ্রহের পালা। ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতিক মধু বৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসব মুখর পরিবেশ।উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের খেজুরের গাছ ঝুঁকি নিয়ে গাছিরা গাছের তোলা কাটা শেষ করেছে। কোমরে মোটা রশি বেঁধেগাছে ঝুঁলে ঝুঁলে রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে গাছিরা। পেশাদার গাছিদের তেমন কোন সমস্যা না হলেও রস সংগ্রহের এক শ্রেণির উৎসুকমানুষও পিছিয়ে নেই। তারা দূঃসাহসিক শক্তি নিয়ে গাছে ওঠা নামা করেছে রস সংগ্রহের জন্য। আশ্বিনের শুরুতেই গাছের তোলা ও পরিচর্যা করেআসছেন গাছিরা। খেজুরের রসের গুড় ও পাটালি উৎপাদনের জন্য উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের সুখ্যাতি রয়েছে। এই এলাকার খেজুর গুড়দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রয় হচ্ছে প্রতিনিয়িত। আবার খেজুরের গুড়ের জন্য মুলত যশোর জেলা বিখ্যাত।উপজেলার গ্রাম্য মেঠো পথের ধারেরয়েছে খেজুরের গাছের সারি। এছাড়া মাঠের বিভিন্ন আইলে এবং ক্ষেতের মাঝেও খেজুর গাছ দেখা যায়। বাণিজ্যিক ভাবে মনিরামপুরের  অনেককৃষক খেজুর গাছের বাগান গড়ে তুলেছেন। খেজুর রস সংগ্রহ করে আমন ধানের নতুন পিঠা, পুলি ও পায়েশ তৈরির ধুম পড়ে গেছে গ্রামে গ্রামে।তাছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিরার মোয়া ও মুড়ি খাওয়ার জন্য কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে শীতের মৌসুমঅতি প্রিয় হয়ে উঠেছে। গাছিরা খেজুরের গুড় তৈরি করে যশোরের পাইকারি বাজারে ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এই উপজেলারগাছিরাচার মাস ব্যাপি খেজুরের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বিক্রি করার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে জোরে সোরে। রস জালিয়ে গুড়তৈরি করার পর বাজারে খেজুর গুড় বিক্রি করছে গাছিরা। তারা প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে যে অর্থ যোগায় তা দিয়ে সারা বছরচলে অনেকের সংসার। এখন ভরা মৌসুমে শীত জেঁকে না আসলেও গাছিরা তোলা তৈরি, ঠুঙ্গি, দড়ি, মাটির হাঁড়ি কেনার কাজ সেরে নিয়েছে। বাড়িরউঠানে, বাগানে ও রাস্তার ধারে চুলা তৈরি করে সেখানে গুড় বানানোর কাজ করে চলেছে উপজেলার গাছিরা।যশোর মনিরামপুরের উপজেলার বিভিন্নগ্রামের গাছি মো জাহাঙ্গীর হোসেন, আমজাদ হোসেন, ইসলাম প্রামানিক, শাজাহান আলী, রফিকুল ইসলাম, হাসানুর রহমান জানান, গাছ কাটারকাজ কষ্টের হলেও রস সংগ্রহে মজা রয়েছে। তৈরি খেজুর গুড় গাছের মালিককে দেয়ার পর এবং নিজের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের চাহিদামিটিয়ে গুড় বিক্রি করে যে অর্থ আসে তা দিয়ে সংসার বেশ ভালোই চলে। তবে শীতের তীব্রতা বাড়লে খেজুর রস বেশি পাওয়া যায় এবং রস আরওবেশি মিষ্টি হবে সেই সঙ্গে গুড়ও ভাল হবে।যশোর মনিরামপুরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হীরক কুমার সরকার দৈনিক সকালের সময়য়ের প্রতিনিধি মো মনোয়ার হোসেনকে বলেন, খেজুরের গুড় তৈরিতে কোন প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার না করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। শিশুদের মেধাবিকাশে খেজুরের রস এবং গুড় অতুলনীয়। পিঠা-পুলি, পায়েশ, মুড়ি ও চিড়ার মোয়া তৈরিতে গ্রামবাংলায় খেজুরের গুড় ব্যবহার হয়ে আসছে।আমাদের দেশের গাছিরা প্রায় চার মাস ব্যাপি খেজুরের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে তা বিক্রি করে থাকে।