প্রচ্ছদ রাজনীতি করোনা মোকাবিলায় সার্বজনীন চিকিৎসা দিতে সরকার ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল

করোনা মোকাবিলায় সার্বজনীন চিকিৎসা দিতে সরকার ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

বর্তমান সরকার করোনা পরিস্থিতিতে সার্বজনীন চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ মন্তব্য করে করোনায় আক্রান্ত সাধারণ মানুষ কেনো ‘সর্বোত্তম চিকিৎসা সেবা’ পাবে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার সকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রশ্ন তুলেন।

ফখরুল বলেন, একটি আইসিইউ, একটি ভেন্টিলেটর বা একটি সিলিন্ডার এখন সোনার হরিণ। যখন শুনি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হাসপাতাল হাসপাতালে আইসিইউ বেড বুকিং করে রেখেছেন। অনেককে দেখা গেছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ভালো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলোকে সাধারণ মানুষের জন্য নেই কেনো? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সিলেটের কোভিড আক্রান্ত ডা. মইন উদ্দিন চিকিৎসার জন্য একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পাননি। তিনি প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সড়কে, যানবাহনে, অ্যাম্বুলেন্সে, মর্গে এখন শুধু লাশের সারি। সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করা তো সরকারেরই দায়িত্ব। চিকিৎসা ব্যবস্থা হওয়া উচিত সার্বজনীন। সরকার তা করতে ব্যর্থ।

উত্তরার নিজের বাসা থেকে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র করোনা পর্যবেক্ষক জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও কমিটির সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনও যুক্ত ছিলেন।

দেশের হাসপাতালগুলোতে কোনো চিকিৎসা নেই অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, কোনো হাসপাতালে শুধু করোনা নয়, অন্যরোগীরাও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। চিকিৎসা করতে গেলে বলে, আগে করোনা টেস্ট করে আসেন। আর করোনা টেস্ট সোনার হরিণের মতো। কিডনি, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ জটিল রোগের চিকিৎসাও পাচ্ছে না মানুষ। এই হলো দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজনে সারাদেশ ‘এলাকা ভিত্তিক কঠোর লকডাউন’ ঘোষণাসহ সাত দফা সুপারিশও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
এর মধ্যে আছে, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পর্যাপ্ত মানসম্মত পিপিই সরবারহ নিশ্চিতকরণ ও তাদের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ, জেলায় জেলায় করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সেবা দ্রুত সম্প্রসারণ, অভাবগ্রস্থ পরিবারগুলোকে রেশন কার্ডের মাধ্যমে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রি বিতরণ, পোষাক শিল্প-কারখানার কর্মীসহ সাধারণ শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধা, খাদ্য সামগ্রি সহায়তা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, সরকারি ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেয়া এবং করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা উপস্থাপন এবং তথ্য লুকোনোর নীতি পরিহার করা।

মির্জা ফখরুল এই সঙ্কট মোকাবিলায় সব দল-শ্রেণি-পেশাকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই করোনা পরিস্থিতিকে অবহেলা না করে, উদাসীন না হয়ে দেশের সমস্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য সমস্ত শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিক দল, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং যারা চিকিৎসার সাথে জড়িত রয়েছেন তাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ মতামত নিয়ে একটি সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ‘বিশেষ বীমা’ ও ‘বিশেষ ভাতা’ প্রদানের দাবিও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে এই পর্যন্ত বিএনপির ঢাকা মহানগরের উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানসহ ৫৬ জন নেতা-কর্মী মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন।

এছাড়া দলের চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেবক্ষন সেলের তত্ত্বাবধায়নে সারাদেশে ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, ঈদ উপহার ও নগদ অর্থ পৌঁছানো হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এতে সর্বমোট দুই কোটি সাত লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ জন মানুষ উপকৃত হয়েছেন।