প্রচ্ছদ রাজনীতি ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত আরোগ্য কামনা রিজভীর

ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত আরোগ্য কামনা রিজভীর

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

গতকাল সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আল্লাহ যেনে তাঁকে দ্রুত সুস্থ করে দেন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার কথা শুনছি। আমরা আগেই বলেছি বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) উন্নত চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট নয়।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ৬ মার্চ মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে রিজভী বলেন, গতকাল রোববার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালতে এসে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। খুবই অসুস্থ আমি। চিকিৎসকরা দরকারি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না। মাত্র একবার এসে চিকিৎসকরা দেখে গেছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রক্ত নেওয়া হয়নি। ডায়াবেটিসের রোগী হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। থেরাপি ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না। আমি সত্যিই অসুস্থ।’

রিজভী বলেন, ‘দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় নেত্রী নিজের মুখে এই প্রথম এমন ভয়াবহ অসুস্থতার কথা বললেন। তাঁর স্বাস্থ্যের চরম ক্রমঅবনতিতে দেশবাসীর মতো আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এক পয়সাও তসরুপ না হলেও দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি রেখে আর কত প্রতিহিংসার জ্বালা মেটানো হবে?’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন নানাভাবে আহ্বান এবং দাবি করে আসছি- খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাঁকে জামিনে মুক্তি দিন। তাঁকে জেলে নেওয়ার পর থেকে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ। দেশবাসী জানেন, তিনি হাঁটতে পারছেন না। পা ফুলে গেছে। হাত অবশ। পুরোনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তাঁর পূর্বের অসুস্থতা এখন আরো গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা, হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচণ্ড। ঝুঁকিপূর্ণ শরীর। প্রতি মুহূর্তে আমরা তাঁকে নিয়ে আশঙ্কায় থাকি।’

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলব-তিনবার সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুধু প্রতিহিংসাবশত এমন নিষ্ঠুর বর্বরতম আচরণের অবসান ঘটান। তাঁকে মুক্তি দিন। জামিনে আর বাধা দিবেন না। ঔপনিবেশিক আমলেও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের রাজবন্দির প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করা হয়নি। অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখতে গিয়ে সভ্যতা-ভদ্রতা-ন্যায়নীতি-মানবতা আর বিসর্জন দিবেন না।

ক্ষমতা মানুষের জীবনে স্থায়ী নয়। সময় অসময় হতে সময় নেয় না! আপনাদের ক্ষমতার দম্ভ চিরদিন থাকবে না। অমানবিকতা পরিহার করুন, এখনো সময় আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। বেগম জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে চাননি, শুধু চেয়েছেন বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে। অথচ সেই সুযোগটুকুও তাঁকে দেওয়া হয়নি। লোক দেখানোর জন্য তাঁকে কদিন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে প্রচণ্ড অসুস্থ বেগম জিয়াকে সুস্থ বলে ফেরত পাঠিয়েছে অন্ধকার কারাগারে।’ বলছিলেন রুহুল কবির রিজভী।

‘ভোটের প্রতি এখন মানুষের কোনো আগ্রহই নেই’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর মিডনাইট নির্বাচনের পর বাংলাদেশের দিকে সারাবিশ্বের নজর কাড়ছে এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবিশ্বাস্য উত্থানে। ভোট ডাকতির নির্বাচনে তথাকথিত নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও মাঝেমধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বলে ফেলেন। তাদের মধ্যে মহাজোটের শরিক কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলছেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থাকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে এখন গণতান্ত্রিক কোনো স্পেস নেই, গণতান্ত্রিক স্পেস তৈরি করতে হবে। আগের রাতে ভোট দেওয়ায়, প্রার্থীদের বাধা দেওয়ায়, মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলায়, ঊর্ধ্ব মহলের ক্লিয়ারেন্স আছে কি না প্রার্থীদের নিকট এমন প্রশ্নও করেছে পুলিশ, টাকা ছড়ানো হচ্ছে-এই হলো বর্তমান ভোটের অবস্থা, ভোটের প্রতি এখন মানুষের কোনো আগ্রহই নেই।

এই বক্তব্যগুলো বিএনপি বা জোটের কোনো নেতার বক্তব্য নয়, এই বক্তব্য গতকাল জাতীয় সংসদের আওয়ামী জোটের একজন বড় নেতার বক্তব্য। এখন প্রধানমন্ত্রী কী বলবেন? আমরা বারবার যে বলেছি, দুঃশাসনের কুয়াশা এসে ঢেকে দিয়েছে জনগণের শাসনকে-সেটি কি মিথ্যে? এখন আপনাদের ভেতর থেকেই কেউ কেউ বিবেকের তাড়নায় আসল সত্যটি প্রকাশ করে ফেলছেন।’

কর্মসূচি

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী ৬ মার্চ বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।