প্রচ্ছদ খেলাধুলা এবারের বিশ্বকাপে যত রেকর্ড

এবারের বিশ্বকাপে যত রেকর্ড

২০১৮ বিশ্বকাপটা মনে রাখার মতো উপলক্ষের অভাব নেই। একে একে প্রাক-টুর্নামেন্ট ফেবারিটদের বিদায়, ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নযাত্রা, শেষ মুহূর্তের উত্তেজনা, সেট পিস থেকে ভূরি ভূরি গোল, আত্মঘাতী গোলের মচ্ছব, ভিএআর কত-কী! রাশিয়া বিশ্বকাপকে রেকর্ড ভাঙার বিশ্বকাপও বলা যায়, রেকর্ড তো আর কম হলো না। রেকর্ড বইয়ের কোন পাতায় কী পরিবর্তন এল, একটু দেখে নিই।

পেনাল্টি

টাইব্রেকারের পেনাল্টি শুটআউট ছাড়া এবার ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে ১৬ জন খেলোয়াড় পেনাল্টি থেকে ২০টি গোল পেয়েছেন। ৩টি গোল নিয়ে যাঁদের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন। এ ছাড়া পেনাল্টি থেকে একাধিক গোল করেছেন ফ্রান্সের আঁতোয়ান গ্রিজমান, অস্ট্রেলিয়ার মিলে জেডিনাক ও সুইডেনের আন্দ্রেয়াস গ্রাঙ্কভিস্ত। এঁদের সঙ্গে যোগ হতে পারত পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, আইসল্যান্ডের গিলফি সিগুর্ডসন ও ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদরিচের নামও। একটি করে পেনাল্টি মিস করেই সুযোগটা হারিয়েছেন তাঁরা। এক বিশ্বকাপে এর আগে পেনাল্টি থেকে সর্বোচ্চ ১৭টি গোল হয়েছিল ১৯৯৮ সালে।

সেট পিস
পেনাল্টি পেলে তো কথাই নেই, কোনো দল ফ্রি-কিক, কর্নার কিংবা লম্বা থ্রোর সুযোগ পেলেই এবার দর্শকেরা নড়েচড়ে বসেছেন। কারণ, গোল দেখার এটাই যে সময়! সেমিফাইনাল পর্যন্ত ১৬১ গোলের ৭০ টিরই উৎস যে সেট পিস। শতকরা হিসাবে মোট গোলের যা ৪৩.৫ ভাগ। ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে ফিফা সেট পিসের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখা শুরু করার পর এবারই সেট পিসে সবচেয়ে বেশি গোল এসেছে। এবারের আগে ২০০৬ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪৬টি (৩১.৩ %) গোল এসেছিল সেট পিস থেকে। রাশিয়ায় সেট পিস থেকে সবচেয়ে বেশি গোল পেয়েছে ইংল্যান্ড। হ্যারি কেনদের ১২ গোলের ৯ টিরই উৎস সেট পিস।

শেষ মুহূর্তের গোল
ম্যাচের শেষ পাঁচ মিনিটে এবার ২৯টি গোল হয়েছে, যার ১৯টিই আবার যোগ করা সময়ে। আগের রেকর্ডটি ১৯৯৮ বিশ্বকাপের, ফ্রান্স বিশ্বকাপে শেষ পাঁচ মিনিটে গোল হয়েছিল ২৪ টি। এবার ১৭টি ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়েছে শেষ মুহূর্তের গোলে। যোগ করা সময়ে গোল করেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচটিকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যায় কলম্বিয়া। গ্রুপ পর্বে ৮৮ মিনিটের গোলে সুইজারল্যান্ড এগিয়ে যাওয়ার পর যোগ করা সময়ে সমতা ফেরায় কোস্টারিকা। যোগ করা সময়ের আত্মঘাতী গোলে ইরানের কাছে হারে মরক্কো। কোস্টারিকার বিপক্ষে ব্রাজিলের ২টি গোলই তো এসেছে ঘড়ির কাঁটা ৯০ মিনিট পেরোনোর পর।

আত্মঘাতী গোলেরও রেকর্ড হয়েছে এবার। ব্রাজিলের কপাল পুড়িয়েছেন ফার্নান্দিনহো। ফাইল ছবিআত্মঘাতী গোলেরও রেকর্ড হয়েছে এবার। ব্রাজিলের কপাল পুড়িয়েছেন ফার্নান্দিনহো। ফাইল ছবি
আত্মঘাতী গোল
এবারের আগে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬টি আত্মঘাতী গোল দেখেছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। এবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত সংখ্যাটা কিনা ১১! ১৫ জুন ইরানের বিপক্ষে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে দুর্দান্ত এক হেডে নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে ‘আত্মঘাতী উৎসবের’ উদ্বোধন করেন মরক্কোর আজিজ বুহাদ্দুজ। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের ফার্নান্দিনহোর আত্মঘাতী গোলের পর আপাতত স্থগিত আছে উৎসবটা।
প্রথম রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোস্টারিকার সমতাসূচক গোলটির কথা না বললে চলছেই না। গোলটিতে যে মিলেমিশে একাকার সেট পিস, শেষ মুহূর্তের গোল ও আত্মঘাতী গোল। ওই এক গোলেই মূর্ত পুরো বিশ্বকাপ। ম্যাচের যোগ করা সময়ে পেনাল্টি নিয়েছিলেন কোস্টারিকার ব্রায়ান রুইজ। ক্রসবারে লেগে বলটি আঘাত করে সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমারের পিঠে। এরপর গোল। তাতেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে আত্মঘাতী গোল করা তৃতীয় গোলরক্ষক হয়ে গেলেন সমার।

লাল কার্ড
এটাকে ঠিক রেকর্ড বলা যাবে না। তবে সর্বশেষ কবে মাত্র ৪টি লাল কার্ড দেখানো হয়েছে বিশ্বকাপে, তা খুঁজতে গবেষণাই করতে হয়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম সংখ্যাটা থেমে আছে এক অঙ্কে, সংখ্যাটা ১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর সর্বনিম্নও। সর্বশেষ ১৯৭০ বিশ্বকাপে কোনো লাল কার্ড বা বহিষ্কারের ঘটনা দেখেনি বিশ্বকাপ। হলুদ কার্ড দেখানোয় অবশ্য কৃপণতা দেখাচ্ছেন না রেফারিরা। ২১৩ বার হলুদ কার্ড বের করেছেন রেফারিরা, সংখ্যাটা ২০১৪ বিশ্বকাপের চেয়ে ৩২টি বেশি। তবে রেকর্ড করতে হলে আজ ও কাল শেষ দুই ম্যাচে আরও ৯৫টি হলুদ কার্ড দেখাতে হবে! ২০০৬ বিশ্বকাপে যে ৩০৭টি হলুদ কার্ড ছিল।

পেনাল্টি শুটআউট
চারটি ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকারে, রেকর্ড এটাও। ১৯৯০,২০০৬ ও ২০১৪ বিশ্বকাপেও চারটি করে ম্যাচ পেনাল্টি শুটআউটে গড়িয়েছিল। এক বিশ্বকাপে দুটি টাইব্রেকার জেতার রেকর্ডও ছুঁয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার পথে দুবার টাইব্রেকার-বাধা পেরিয়েছিল আর্জেন্টিনা।