প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক ইরাকে ৩ ফরাসি আইএস জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড

ইরাকে ৩ ফরাসি আইএস জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড

জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়ার অপরাধে ফরাসি তিন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ইরাকের আদালত। তারা হলেন কেভিন গনোট, লিওনার্দ লোপেজ এবং সেলিম মাচৌ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ৩০ দিন পাবেন তারা। সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যোদ্ধারা ১২ জন ফরাসি নাগরিককে আটক করেছে। দন্ডপ্রাপ্তরা তাদের অন্তর্ভুক্ত। ফেব্রুয়ারিতে তাদেরকে ইরাকের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

ফরাসি কোনো নাগরিককে আইএসে যোগ দেয়ার সন্দেহে অভিযুক্ত করে এটাই প্রথম শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ঘটনা। রোববার বাগদাদের আদালত এ রায় দিলেও ফ্রান্স সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয় নি। যদিও ফেব্রুয়ারিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছিলেন, বিষয়টি সার্বভৌম ইরাকের ব্যাপার। ওদিকে আইএস যোদ্ধা সন্দেহে ইরাকে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। তাদের অভিযোগ, আদালত শুধু উপস্থিত প্রমাণ অথবা জোর করে আদায় করা স্বীকারোক্তির ওপর নির্ভর করেছে।

অভিযুক্তদের পরিচয়
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রান্সের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী গনোট। আল কায়েদার একটি শাখা আল নুসরা ফ্রন্টে যোগ দিতে তিনি তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করেন বলে মনে করা হয়। তারপর তিনি আল নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মা, স্ত্রী ও দুই সৎভাই সহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয় সিরিয়ায়। ওদিকে ফরাসি একটি আদালত তার অনুপস্থিতিতে তাকে ৯ বছরের জেল দিয়েছে।

ইউরোপিয়ান যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা আইএসের একটি সেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাচৌ (৪১)। তিনি ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছেন। প্যারিস এবং ব্রাসেলসে তিনি অন্য সব হামলার পরিকল্পনা করেছেন। এ তথ্য ফ্রান্সের থিংক ট্যাংক সেন্টার ডি’অ্যানালাইসি ডু টেরোরিজম (সিএটি)-এর।

প্যারিসের যুবক লোপেজের বয়স ৩২ বছর। ফরাসি তদন্তকারীদের উদ্ধৃত করে সিএটি বলছে, সিরিয়া প্রবেশ করার আগে তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আইএস নিয়ন্ত্রিত ইরাকের মসুলে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে চলে যান সিরিয়ায়। তার আইনজীবী নাবিল বোউডি এ বিচারের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি একে ‘সামারি’ ট্রায়াল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাগদাদের জেলে ধারাবাহিক জিজ্ঞাসাবাদের ওপর ভিত্তি করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
কেন তারা ইরাকে গিয়েছিলেন?

সিরিয়া থেকে ইরাক পর্যন্ত বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল আইএস। কয়েক বছরের যুদ্ধের পর ২০১৭ সালের শেষের দিকে ইরাক আইএসের বিরুদ্ধে বিজয়ী ঘোষণা করে নিজেদের। অন্যদিকে সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আরব ও কুর্দি যোদ্ধারাÑ সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। এই গ্রুপটি জিহাদিদের সর্বশেষ ও শক্তিশালী ঘাঁটি দখল করে মার্চে। ফলে এসডিএফ আটক করে প্রায় ১০০০ বিদেশী যোদ্ধাকে। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এসডিএফ যাদেরকে আটক করেছে সেইসব বিদেশী যোদ্ধাদের সবার বিচার করার প্রস্তাব দেয় ইরাক। ফলে কয়েক শত জঙ্গিকে ইরাকে নেয়া হয়েছে বিচারের জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো ফাঁসি কার্যকর করা হয় নি।

আইএসে যোগ দেয়া বিদেশীদের পরিণতি
সিরিয়া ও ইরাকে আইএসে যোগ দিয়েছে কয়েক ডজন দেশের কমপক্ষে ৪১০০০ যোদ্ধা। তাদের এক চতুর্থাংশই নারী ও শিশু। এর মধ্যে প্রায় ৬০০০ সদস্য যোগ দিয়েছে পশ্চিম ইউরোপ থেকে। এর মধ্যে প্রায় ৮৫০ জনই বৃটিশ নাগরিক। এর মধ্যে ১৪৫ জন নারী ও ৫০ জন শিশু। আইএস যোদ্ধাদের বেশির ভাগই হয়তো নিহত হয়েছেন অথবা তাদেরকে আটক করা হয়েছে। তবে ঠিক কি পরিমাণ আইএস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন সে হিসাব নিশ্চিত করে বলা যায় না। গবেষকরা বলেন, কমপক্ষে ৭০০০ সদস্য তাদের দেশে ফিরে গেছেন। এসব দেশকে তাদের আইএস যোদ্ধাকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।