প্রচ্ছদ খেলাধুলা আসলেই কি নির্বাচন করবেন মাশরাফি-সাকিব?

আসলেই কি নির্বাচন করবেন মাশরাফি-সাকিব?

জাতীয় ক্রিকেট দলের দুই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এমন ইঙ্গিতের পর গণমাধ্যমে বেশ শোরগোল পড়ে যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মাশরাফি নড়াইল এক্সপ্রেস। মাশরাফির তো আগামী নির্বাচনে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।’

সাকিবও আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও জানান তিনি।

তবে কোন দল থেকে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন সেটি তখন বলেননি পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি থেকে দাঁড়ালেও আপনারা মাশরাফিকে ভোট দেবেন। সে ভালো মানুষ।’

তবে ওই সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘন্টা পরেই সুর পাল্টে ফেলেন বিসিবি ও আইসিসির সাবেক এ সভাপতি।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে বা কোনো বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলিনি। তাঁরা নির্বাচন করবে কি না, আমি জানি না। মানুষের মুখে অনেক দিন থেকেই শুনে আসছি মাশরাফি নির্বাচন করবে। সে জন্যই মাশরাফির একজন ভক্ত হিসেবে আমি বলেছি, ও যদি নির্বাচন করে, তাহলে সবাই যেন তাকে ভোট দেন।’

আওয়ামী লীগ থেকে মাশরাফির মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সাংবাদিককে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনোনয়ন দেওয়ার কে? আমি তো কেউ না। মাশরাফি নির্বাচন করবে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো খবর আসলেই আমার কাছে নেই।’

মাশরাফি এবং সাকিবের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই বলেও এসময় মত দেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘সাকিব, মাশরাফি দুজনই খেলার মাঠে আছে। মাশরাফি তো নিজেই বলেছে সে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে চায়। যদি তাঁরা ক্রিকেট খেলে তাহলে নির্বাচন কীভাবে করবে?’

পরিকল্পনামন্ত্রীর বক্তব্য প্রকাশের পর মাশরাফির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে একটি গণমাধ্যমকে নড়াইল এক্সপ্রেস শুধু বলেছেন, ‘এ বিষয়ে এখন কিছু জিজ্ঞেস করবেন না, এখন এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’

মাশরাফির নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তৈরি হওয়া গুঞ্জণ তার জেলা নড়াইলের রাজনৈতিক অঙ্গণেও কিছুটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

মাশরাফি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরসরি জড়িত কিনা, পরিকল্পনামন্ত্রীর ঈঙ্গিতের বিষয়টি উল্লেখ করে জানতে চাইলে নড়াইল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, ‘মাশরাফি রাজনীতি করেছে, তা হলো খেলার রাজনীতি। সে নড়াইলের গর্ব। সে শুধু নড়াইল নয়, পুরো বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে বাংলাদেশকে সম্মান এনে দিয়েছে, তার মতো আর কেউ পারেনি। সে এলকার জন্যও অনেক কিছু করছে।’

তবে জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণই নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু মাশরাফিই নয়, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন তার বিরোধীতা করার কোন সুযোগ নেই।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, নড়াইলের দু’টি আসনের যে কোনো একটি থেকে আমি মনোনয়ন পাব বলে আশাবাদি। মাশরাফির মনোনয়নের ব্যাপারে বলেন, এটা দলীয় সিদ্ধান্ত।

এদিকে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজা স্বপন গণমাধ্যমকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে মাশরাফির না বলার সুযোগ নেই।

এদিকে আগামীকাল বুধবার গুলশানে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সাকিব আল হাসান। সেখানেই হয়তো গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ বিষয়ে নিজের মতামত জানাবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী জানুয়ারিতে হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। আর ২০১৯ সালের ৩০ মে থেকে ১৫ জুলাই ইংল্যান্ডে হবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা আছে মাশরাফির।

উপমহাদেশের রাজনীতিতে ক্রিকেটারদের পদার্পণের ঘটনা বহু আছে। ভারত এবং পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের নির্বাচনে অংশ নেয়ার উদাহরণ আছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবসর নেয়ার পর রাজনীতিতে জড়িয়েছেন তারা।