প্রচ্ছদ সারাদেশ রাজশাহী বিভাগ আষাঢ়ের দাবাদহে তপ্ত বরেন্দ্রঞ্চল

আষাঢ়ের দাবাদহে তপ্ত বরেন্দ্রঞ্চল

রাজশাহী প্রতিনিধি: চলছে আষাঢ় মাস। কিন্তু রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলজুড়ে সেইভাবে বৃষ্টির দেখা নাই। ফলে বরেন্দ্রাঞ্চল রাজশাহীজুড়ে দাবদাহে তপ্ত হয়ে উঠেছে। অব্যাহত দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। যেন হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে প্রাণীকূলে। সারাদিন ঠাঁ ঠাঁ রোদ আর প্রচ- গরমে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবখানেই যেন গরম আর গরম। শান্তি মিলছে না কোথাও। দিনের বেলা গাছের পাতাও নড়ছে না কখনো কখনো। ফলে গরমের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর আবহাওয়ার তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি অথবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও উঠছে কখনো কখনো। এই অবস্থায় প্রশান্তির একমাত্র উপায় বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে বরেন্দ্রঞ্চালে।

এদিকে তীব্র দাবদাহের কারণে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। বিশেষ করে হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে যেন ধাপ ফেলার যায়গা নেই। বেডে ফ্লোরে সবখানেই গরমজনিত কারণে রোগী আর রোগী। এতো রোগীর চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর আসগার হোসেন বলেন, ‘ডায়রিয়া, শাস্বকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গড়ে প্রতিদিন এক-দেড় শ রোগী রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা কখনোই ২৩ ডিগ্রির নিচে নামেনি। গত শনিবাবার দুপুরে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ১৫ জুন রাজশাহীতে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

নজরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে মৃদু দাবদাহ বিরাজ করছে। এ কারণে গরমের পরিমাণ অনেকটা বেশি। তবে দুই-একিদেন মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।

অব্যাহত এই তাপমাত্রার পাশাপাশি ব্যাপক গরমে উত্তরাঞ্চলে দাবদাহ ছড়িয়ে পড়েছে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। একটু শীতলতার জন্য মানুষ- ও পশুপাখিদের মধ্যে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে।

সকাল ১০টার মধ্যেই রাস্তা-ঘাট রোদে খাঁ খাঁ করছে। দুপুরের দিকে অবস্থা আরও বেগতিক আকার ধারণ করছে। প্রচ- রোদের তাপে মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় যেন বের হতেও পারছেন না। গরমে বাসাবাড়িতেও যেন টেকা দায়। আবার অফিস-আদালত বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সর্বস্তরের গরমের দাপট।

নগরীর নিউ মার্কেট হকার্স মার্কেটের সেলস ম্যানেজার বাদশা বলেন, গরমের কারণে ঈদের পর থেকে তেমন বেঁচা-কেনাই নাই। মানুষ বাইরে বের হওয়ারই সাহস পাচ্ছেন না, বেঁচা-কেনা হবে কি করে?’

আরেক ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ‘এতো গরমে লোকজন দোকানে দাঁড়াতেই চাইছেন না। তাই ব্যবসাও লটো উঠেছে।

নগরীর রিকশা চালক মানিক রহমান বলেন, গরমের কারণে রিকশা চালাতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পেটের টানে বাড়ি থেকে বের হইে হচ্ছে। আবার বাড়িতেও যে শান্তিমতো ঘুমাবো, সেখানেও সম্ভব হচ্ছে। ঘরের টিনের চালা গরম হয়ে যেন নিচে আগুন নামছে। তাই কোথাও শান্তিতে নাই আমরা। গরমের খুব কষ্টে আছি।