প্রচ্ছদ রাজনীতি ওবায়দুল কাদেরের কথায় তিন সিটিতে ভোট কারচুপির সুস্পষ্ট আভাস রয়েছে: রিজভী

ওবায়দুল কাদেরের কথায় তিন সিটিতে ভোট কারচুপির সুস্পষ্ট আভাস রয়েছে: রিজভী

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘খুলনা ও গাজীপুরের মতো তিন সিটিতেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী বলেছেন, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেব সুষ্ঠু ভোট কারচুপির সুষ্পষ্ট আভাস দিলেন। তিন সিটিতেই চলছে নৌকা মার্কার পক্ষে নির্বাচনী অনাচার আর ক্ষমতাসীনদের অবৈধ দাপট। গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারের হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য প্রচণ্ড মহড়া।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চলছে শাসক দলের পক্ষে আওয়ামী নেতাদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক। এমনকি জেলা প্রশাসক নৌকা মার্কার অনুকূলে চরম পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন।

মঙ্গলবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন: ‘নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের অফিস ভাংচুর, নেতাকর্মী-সমর্থকদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আওয়ামী ক্যাডাররা এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরী করেছে। পাশাপাশি পুলিশও বসে নেই, খুলনা ও গাজীপুরের মতো আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে পুরোদমে নেমে পড়েছে। রাজশাহী মহানগরীর হাদির মোড় এলাকায় খাদেমুল ইসলাম স্কুলের সামনে ধানের শীষের প্রচার অফিস আওয়ামী ক্যাডারদের কর্তৃক ভাংচুর হওয়ার পর পুলিশ এসে তালা লাগিয়ে দেয়। বরিশাল ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে চলছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে হুমকি-ধামকি।’

তিনি আরো বলেন: ‘মন্ত্রীর পদমর্যাদায় দায়িত্বে থাকার পরও আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তার ছেলেকে বিজয়ী করার জন্য নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি কোনো নির্বাচনী আচরণবিধিই মানছেন না, তাছাড়া তিনি ভোটারদের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। মোট কথা তিন সিটিতেই সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বিদ্যমান নেই, নিরাপদে ভোট দিতে পারবে কী না সেটি নিয়ে ভোটারদের মধ্যে এখনও শঙ্কা কাটেনি। নির্বাচন কমিশনের কাছে উল্লিখিত বিষয়ে ধানের শীষের প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হলেও সেগুলো আমলে নেয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো মানে অরণ্যে রোদন।’

রিজভী বলেন: ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের নামে কিছু হচ্ছে কী না জানতে হবে। নিজ দলের অনাচার ও অপকর্ম তার না জানারই কথা, চোখে না পড়ারই কথা। ছাত্রলীগকে রক্তের নেশা পাইয়ে দিতে উৎসাহিত করেছে আওয়ামী নেতারাই। সুতরাং তাদের রক্তাক্ত আক্রমণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাহেবের দৃষ্টিগোচর না হবারই কথা। আপনারা যদি জনসমর্থিত সরকার হতেন তাহলে বুঝতেন যে দেশের সর্বত্র ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে জনগণের কী পরিমাণ ধিক্কার উঠেছে। নির্যাতিত ছাত্রীদের মুখ থেকে মর্মস্পর্শী বর্ণনা আক্রমণকারীদের সম্পর্কে জনগণের ঘৃনার প্রকাশ তীব্র মাত্রা লাভ করেছে। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর ছাত্রলীগের পৈশাচিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে কতটুকু গুরুতর সে খবর কারা কর্তৃপক্ষ জানতেও দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন রিজভী৷

বলেন: ‘গত পরশু দিন পরিবারের সদস্যরা তার সাথে দেখা করতে গেলে কারাকর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। অসুস্থতার খবর জানতে পারার পরও তার পরিবারের সদস্যদের কারা ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়নি। কারা কর্তৃপক্ষ দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে শুধু উদাসীনই নয়, সরকারের নির্দেশে কোন ভয়ঙ্কর মাষ্টারপ্ল্যানের দিকে এগুচ্ছে কী না তা নিয়ে জনমনে এক বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নি:শর্ত মুক্তি এবং সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে আগামী ২০ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় অথবা প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি’র উদ্যোগে বেলা ৩টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান রিজভী। এছাড়া একই দাবিতে ঐদিন দেশব্যাপী সকল জেলা, মহানগর ও উপজেলা সদরে বিএনপি’র উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সমাবেশ সফল করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।