প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য নয়: নৌমন্ত্রী

স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য নয়: নৌমন্ত্রী

সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বলছেন, স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনো জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি না দেওয়ার। একইসাথে যারা সরকারি চাকরিতে আছেন, তাদের বরখাস্ত করারও দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি  লন্ডনে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। অপরদিকে বিরোধী দলের সদস্যরা দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম নিয়ে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। জাতীয় পার্টি সদস্যরা বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হরিলুট বন্ধ করতে না পেরে উল্টো বাজেটে তাদেরকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদের শেষ বাজেট অধিবেশনে আজ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। বেলা সোয়া ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। পরে অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অধিবেশন পাঁচ দিনের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৮ জুন বিকাল তিনটায় আবার বাজেট অধিবেশন বসবে।

বাজেট আলোচনায় অংশ নেন নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান, সরকারি দলের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী, ইসরাফিল আলম, মোহাম্মদ নোমান, কবি কাজী রোজী, জাসদের নাজমুল প্রধান ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী ।

বাজেট আলোচনায় নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান ছিলেন নির্বাচনী মেজাজে। তিনি বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জাতীয় ঐক্য গড়ার  আহ্বানের সমালোচনা করে বলেন, কাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য হবে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সঙ্গে? বিএনপি-জামায়াত তো স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না।

এসময় তিনি বিকল্প ধারার জাতীয় ঐক্য গড়ার  আহবানে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বদরুদ্দোজা নয়, এর পেছনে আরো অনেকে আছে। এর সঙ্গে রয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা কি ছিলো আমার জানা নাই। তবে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল করেছেন। আবার একজন শিল্পপতিও বটে। তাঁর পোশাক তৈরি কারখানায় শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই ব্যক্তি এখন বিভিন্ন ছবক দিচ্ছে। আসলে এরা ষড়যন্ত্র করছে? তবে এদেশের মানুষ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সঙ্গে আছে, স্বাধীনতা বিরোধীদের কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না।

মন্ত্রী আরও বলেন, কোটা সংস্কারের নামে যারা আন্দোলন করতে গিয়ে ভিসি’র বাসায় হামলা করেছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের ও তাদের উত্তরসূরিদের সরকারিতে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। এমনকি স্বাধীনতা বিরোধীদের যারা এখনো সরকারি চাকরিতে বহাল আছেন তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিলে ওরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করবে, বঙ্গবন্ধুর  আদর্শকে ধ্বংস করবে। তিনি স্বাধীনতার চেতনা বিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন, সেদিকে মনোযোগী না দিয়ে বিএনপি এখন বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। তারা বাংলাদেশের  বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। এসময় লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকের সমালোচনা করে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে তিনি শুধু বৈঠকই করেননি, ভূরিভোজও করেছেন। ওখানে বসে উনি কি ষড়যন্ত্র করছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। একজন সাজাপ্রাপ্ত পালাতক আসামির সঙ্গে সাক্ষাত করায় আইনের ব্যতয় ঘটেছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজেনে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ব্যাকিং খাতের সমালেচনা অব্যাহত
এদিকে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাকিং খাতের অনিয়ম নিয়ে সমালেচনা অব্যাহত ছিল। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদের নাজমুল হক প্রধান বলেন, ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। কোন প্রতিকার নেই। অর্থমন্ত্রী একবার ব্যাংকে টাকা দিয়েছেন, একবার করের ছাড় দিয়েছেন, এবার ভর্তুকি দিচ্ছেন। একটা সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিবার এরকম করে ব্যাংককে হয়তো রক্ষা করা যাবে কিন্তু অর্থনীতি রক্ষা হবে না। ব্যাংক থাকবে কিন্তু অর্থনীতি কলুষিত হবে। এক মন দুধে এক ফোটা টকই যথেষ্ট। এসময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের করপোরেট কর আড়াই শতাংশের জায়গায় এক শতাংশ কমানোর দাবি করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান বলেন, ব্যাংক খাতে লুটপাট নিয়ে কথা বলা যাবে না। চুরি করলে চোর বলা যাবে না। এটা কোন মহারাজার দেশে বাস করছি? তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি হয়ে গেল। কোন হদিস নাই, জবাবদিহিতা নাই। তদন্ত কমিটি হলো রিপোর্ট প্রকাশ করলেন না। তাহলে তদন্ত কমিটি কেনো করলেন? যাদের নাম প্রকাশ করতে পারলেন না তারা কি রাষ্ট্র চালায়? তারা কি রাষ্ট্রের চাইতেও ক্ষমতাধর? তিনি আরো বলেন, আমরা ছোট বেলায় ডাব খেতাম, রস খেতাম। তখন বলতো চুরি করেছি। আর এখন হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে,অথচ লুট বলা যাবে না। ব্যাংক কাদের টাকা দিচ্ছে? রাষ্ট্র ব্যাংককে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। কেন জবাবদিহি করা হচ্ছে না? জনগণের টাকায় কেন ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে? লুট করেন, লুট করার সুযোগ দিচ্ছেন। শাস্তি না দিয়ে টাকা দিয়েছেন। আবারও একই অবস্থা হবে।

বাজেটকে ব্যাংক খাতের রক্তক্ষরণের বাজেট আখ্যায়িত করে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, দেশের কয়েকটি ব্যাংকে রীতিমত হরিলুট হয়ে গেল। সাগরচুরির মতো হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হলো। কিন্ত অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বাজেটে এসব ব্যাংকগুলোকে পুরস্কৃত করলেন। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাংক খাতে করপোরেট কর আড়াই ভাগ কমানো হয়েছে। কিন্তু অন্য করপোরেট খাতে ৪০ শতাংশ রেখে দিয়েছেন। যে খাত ভালো করছে, সেখানে কর কমালেন না। যে খাতে লুটপাট হচ্ছে, কমালেন সেখানে। তিনি আরো বলেন, আমার এক সহকর্মী (কাজী ফিরোজ রশিদ) সুলতান মাহমুদ গজনীর সময়ে সোমনাথ মন্দির লুটের কথা বলেছেন। আমি বলছি, নাদির শাহের দিল্লি লুটের সময়ও এত টাকা লুট হয়নি। তিনি বলেন, এই বাজেট ব্যুরোক্রেটিক বাজেট।যখন এ ধরনের বাজেট হয়, তখন বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে আমি বলি, ‘এটি গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার, নাকি গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের সরকার।’

ব্যাংক ডাকাতি নয় সাফাই গাইলেন তাহজীব
এদিকে হঠাৎ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ব্যাংকিং খাতে চলা আর্থিক কেলেঙ্কারিকে ব্যাংক ডাকাতি বা লুটপাট না বলে অনিয়ম বলার আহ্বান জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্যরা ব্যাংক খাতের ডাকাতি নিয়ে কথা বলে বেশ আলোচনায়। আসলে ব্যাংক ডাকাতি নয়, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সম্পূর্ণরূপে ব্যাংকিং নিয়ম নীতির ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে ব্যাংকিং খাতে চাপ সৃষ্টি করেছেন। ব্যাংকিং খাত, সত্যিকার অর্থে যতটা না নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কিছু অযাচিত মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ ব্যাংকিং খাতকে আরো দুর্বল এবং অস্থিতিশীল করছে। আমি জানি না এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না? ব্যাংকিখাতের পক্ষ নিয়ে তাহজীব বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ না বুঝে সেনশনালিজি করবেন না।তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা সংসদেএমন  উত্তেজনা ছড়ানো মন্তব্য নিশ্চয়ই লাভের চেয়ে আরো বেশি ক্ষতি করলো।

সংসদে গত তিনদিন ধরে যখন লাগাতর ব্যাকিংখাত নিয়ে সরকারের সমালোচানয় সরব স্বতন্ত্র, সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা, তখন তিনি লুটপাট ডাকাতি শব্দ প্রয়োগে কার্যত আপত্তি জানালেন। তবে বিষয়টি পয়েন্ট অব অর্ডারে বলার মতো বিষয় নয় বলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে থামিয়ে দেন। যে কারণে মাত্র দেড় মিনিটেই তার কথা বলা শেষ করতে বাধ্য হন। এরআগে বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে তিনি একজন নীতিবান ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি। তার সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের অনিয়মে জড়িতদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জাপা এমপিরা অর্থমন্ত্রী প্রসঙ্গে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, আমি অনুরোধ করবো তার সম্পর্কে করা মন্তব্য প্রত্যাহার করতে এবং এখানে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইতে।