প্রচ্ছদ সারাদেশ রংপুর বিভাগ শীতের স্নিগ্ধতায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল

শীতের স্নিগ্ধতায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল

এ.এস.লিমন, রাজারহাট(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ- কুড়িগ্রামের রাজারহাটে হিমালয় ছুঁয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস যখন শরীরে কাঁপন ধরাচ্ছে তখন বলার আর অপেক্ষা থাকে না যে, মাঘ মাস চলছে। প্রবাদ আছে ‘মাঘের শীতে বাঘও কাঁদে’। আর শীতের দাপটে সেই প্রবাদ যেন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রাজারহাটের কর্মজীবি খেটে খাওয়া তৃন্নমুলের মানুষ।
বিশেষত মাঘ এই মাসের শেষেই আম গাছে মুকুল আসে। কিন্তু খানিকটা হলেও ব্যত্যয় ঘটেছে এবার। মাঘের শুরুতেই রাজারহাটে অনেক আম গাছে আসতে শুরু করেছে আগাম মুকুল। পৌষের শেষেই আগাম মুকুলে তাই আমচাষিদের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠেছে।
আর এমনটি হবেই বা না কেন? আমপ্রধান এই উপজেলার আমগাছিদের এখন ব্যস্ত সময় কাটাছে আম গাছ ও মুকুলের যত্ন নিয়েই। এজন্য মাঘের হিমেল হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁকে দোল খাওয়া স্বর্ণালি মুকুলেই স্বপ্ন বাঁধেন চাষিরা।
আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে এরই মধ্যে মৌ মৌ করতে শুরু করছে চারিদিক। বনফুল থেকে মৌমাছির দল গুনগুন করে ভিড়তে শুরু করেছে আম্রমুকুলে। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাস আনন্দে ভরে উঠছে চাষির মনও। গাছের কচি শাখা-প্রশাখায় ফোটা স্বর্ণালি ফুলগুলোর উপরে সূর্যচ্ছটা পড়তেই চিকচিক করে উঠছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ যেন আসছে আম উৎসবেরই জানান দিচ্ছে।আমের মুকুল ও কৃষকের স্বপ্ন তাই একই সুতোয় গাঁথা। বছরের নির্দিষ্ট এই সময়জুড়ে তাই চাষি তো বটেই চলতে-ফিরতে কমবেশি সবশ্রেণীর মানুষেরও নজর থাকে চির সবুজ আমগাছের মগডালে। আমের গাছে সদ্য মুকুল ফোটার এ দৃশ্য এরই মধ্যে ছেয়ে যেতে শুরু করেছে শহরে ও প্রত্যন্ত গ্রাম।
রাজারহাটের আম ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, এই আম বিক্রি করেই অনেক চাষি মেয়ের বিয়ে দেন, নিজের চিকিৎসা খরচ জোগাড় করেন, বড় ঋণ পরিশোধ করেন।তাই গাছ, মুকুল আর আম অনেকেরই বেঁচে থাকার মূল অবলম্বন।
একবার ফলন হলেও বছরের প্রায় পুরোটা সময়টা জুড়েই আম বাগানের পরিচর্যাতেই চলে যায়। সাধারণত মাঘের শেষে ফেব্রয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমের মুকুল আসে। তবে এবার প্রায় এক মাস আগে মধ্য জানুয়ারিতেই কিছু কিছু গাছে আমের আগাম মুকুল চলে এসেছে। এখন ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া না হলেই ভালো হয় বলে জানান আম ব্যবসায়ী মিজানুুর।
টানা শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে মাঘ মাসজুড়ে যদি আবার ঘনকুয়াশাও স্থায়ী হয় তাহলে মুকুলের ক্ষতি হবে। পাউডারি মিলডিউ রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব মুকুলের অধিকাংশই ঝরে যাবে। ফলে আক্রান্ত বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই শেষ পর্যন্ত না দেখে বলা খুবই কঠিন যে, কী হবে। এখন যদি ঘন কুয়াশা পড়ে এবং তা যদি স্থায়ী হয় তবে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আবহাওয়া যদি রৌদ্রজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু বাড়ে তবে সমস্যা হবে হবে না।
ফল চাষীরা বলেন টানা কয়েকদিন ঘন কুয়াশা না পড়লেই ভালো। তাহলে এসব গাছে আগাম ফলন পাওয়া যাবে। আর মুকুলগুলো প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়লে ফলন খারাপ হবে। তবে নিয়ম মেনে মাঘের শেষদিকে যেসব গাছে মুকুল আসবে, সেসব গাছে মুকুল স্থায়ী হবে। ফলনও ভালো হবে তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
তবে এবারও জাত আম খ্যাত গোপালভোগ ও ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা এবং মোহনভোগ আমই বেশি চাষ হয়েছে।