প্রচ্ছদ রাজনীতি নির্বাচন রাত পোহালেই সিঙ্গাইর পৌর নির্বাচন : শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে শংকিত ভোটাররা

রাত পোহালেই সিঙ্গাইর পৌর নির্বাচন : শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে শংকিত ভোটাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জ :

পঞ্চম ধাপে আগামীকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর পৌরসভা নির্বাচন। এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দেশের বড় দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত দুজন প্রার্থী। তারা হলেন, বিএনপির বর্তমান মেয়র অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয় ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু নাঈম মো. বাশার। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে ৯ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। বহিরাগতদের আনাগোনায় ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে পৌর এলাকায়। ৯টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে পুলিশ প্রশাসন। এমন অবস্থায় ভোট আদৌ সুষ্ঠু হবে কি না, জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি না, এ নিয়ে পৌরবাসীর মাঝে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তবে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর হবে। কোনো অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা হবে না।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট দ্বিতীয় শ্রেণীর সিঙ্গাইর পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ হাজার ৬৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ১২০ জন এবং নারী ভোটার ১১ হাজার ৫৬৫ জন।

পৌর নির্বাচন নিয়ে কথা হয় পৌর এলাকার বিনোদপুর, আজিমপুর, গোবিন্দল, গোলড়া, আঙ্গারিয়া ও ঘোনাপাড়া এলাকার অন্তত ২০-২৫ জন ভোটারের সঙ্গে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।

পৌরসভার ঘোনাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পৌর এলাকায় বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিএনপি প্রার্থী খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয় বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু নাইম মো. বাশার উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলীয় নেতাকর্মী পৌর এলাকায় জড়ো করে সভা-সমাবেশ করেছেন। দলবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন নির্বাচনী মাঠ। অথচ আমরা প্রচারণা চালাতে ও ভোট চাইতে পারিনি। পৌরসভার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় পাহারা বসানো হয়। মারধর করা হয় আমার কর্মী-সমর্থকদের। ভাঙচুর করা হয়েছে প্রচারকাজে ব্যবহৃত মাইক। ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে পোস্টার। বহিরাগত লোকজনের আনাগোনায় পৌর এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরপরও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হলে জনগণ ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়ে এবারও আমাকে বিজয়ী করবে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু নাঈম মো. বাশার তার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপি প্রার্থী খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয়ের দশ বছরের শাসনামলে পৌরসভার কোনো উন্নয়ন হয়নি। টেক্স দিলেও ন্যূনতম সেবা পায়নি পৌরবাসী। ভোটাররা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন তিনি। উন্নয়নের লক্ষে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন পৌরবাসী। নৌকা বিজয়ী হলে উন্মোচন হবে সিঙ্গাইর পৌরসভার উন্নয়নের দ্বার। পূরণ হবে পৌরবাসীর সব আশা আকাঙ্খা।

থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রকিজ্জামান বলেন, সবগুলো ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভোট শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো প্রার্থী যেন ভোট কেন্দ্র দখল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর মানিকগঞ্জ কম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) উনু মং বলেন, ভোট সুষ্ঠু করতে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রের বাইরে কেউ যেন গোলযোগ সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে র‍্যাব সদস্যরা তৎপর থাকবে। এদিন পৌর এলাকায় বহিরাগতের চলাচলের ওপর কঠোর নজরদারি করা হবে। যেখানেই বহিরাগতদের পাওয়া যাবে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না।

সহকারী পুলিশ সুপার (সিঙ্গাইর সার্কেল) মো. রেজাউল হক বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। কোনো পক্ষ ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও গোলযোগ করতে চাইলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোট শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিপি ও র‍্যাব সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় টহল দেবে। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।