প্রচ্ছদ সারাদেশ মানিকগঞ্জে কলেজ ছাত্রী পিংকি হ*ত্যাকাণ্ডের র*হস্য উদঘাটন

মানিকগঞ্জে কলেজ ছাত্রী পিংকি হ*ত্যাকাণ্ডের র*হস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, মানিকগঞ্জ :
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী পিংকি আক্তার ওরফে মিথিলা হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। নিহত পিংকি (২৫) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম সেওতা গ্রামের মো: আব্দুল মান্নানের কন্যা। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে হৃদয় নামে নিহতের কথিত প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), মানিকগঞ্জ।
বুধবার (২০ মার্চ) সকাল ৯ টায় শিবালয় উপজেলার কাতরাশিন গ্রাম থেকে ইয়াসিন হাসান হৃদয়কে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। সে শিবালয় উপজেলার উথুলী ইউনিয়নের বাড়াদিয়া গ্রামের মৃত বাবুল মিয়ার পুত্র। মায়ের নাম সুফিয়া বেগম।
পুলিশ জানায়, গত ১৮ মার্চ সকাল পৌনে নয়টার দিকে শিবালয় উপজেলার ইছাইল গ্রামের জনৈক তমসের শেখের বাড়ির দক্ষিণ দিকের আম বাগান থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধার করে শিবালয় থানা পুলিশ। এ বিষয়ে শিবালয় থানার এসআই জাহিদ হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা রুজু করে।
পরবর্তীতে লাশের পরিচয় শনাক্ত ও তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই হিরন চন্দ্র মজুমদার জানান, অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার (বিপিএম, পিপিএম) এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিপিআই মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার এম কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম এর সার্বিক সহযোগিতায় পিবিআই মানিকগঞ্জের একটি চৌকশ টিমের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন, আলামত উদ্ধার ও মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত রোববার ১৭ মার্চ রাত আটটার দিকে তারাবি নামাজ পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় পিংকি। পরের দিন অর্থাৎ ১৮ মার্চ সকালে ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে পিংকির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় সনাক্ত, আলামত উদ্ধার ও প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, আসামী ইয়াছিন হাসান হৃদয় ও ভিকটিম পিংকি উভয়ই মানিকগঞ্জ সরকারী দেবেন্দ্র কলেজে বিএ (পাস) ডিগ্রীর ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে তাদের পরিচয়। সেই সূত্র ধরে কলেজ এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে ভিকটিমের সাথে আসামীর নিয়মিত কথা হতো। ভিডিও কলেও কথা হতো। ভিকটিমের সাথে আসামীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক এক পর্যায়ে দৈহিক সম্পর্কে গড়ায়। দিন দিন ভিকটিম ও আসামীর মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে ওঠে। এরপর থেকে ভিকটিম পিংকি আক্তার আসামী হৃদয়ের সাথে শুধু দেখা করতে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইতো। মাঝে মাঝে উভয়ের মধ্যে ঝগড়াও লাগতো। তখন ভিকটিম পিংকি আক্তার ঘুমের ঔষধ খাওয়ার ভয় দেখিয়ে আসামীকে ব্ল্যাকমেইলিং করতো। ফলে আসামী হৃদয় হতাশায় ভুগছিল। এরই মাঝে হৃদয় জানতে পারে পিংকির পূর্বে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পূর্বেও তার বয়ফ্রেন্ড ছিল। এসব শুনে ভিকটিমের প্রতি আসামীর প্রচন্ড রাগ ও অভিমান হয়।
তিনি আরো জানান, ১৭ মার্চ ভিকটিম পিংকি আসামী হৃদয়কে দেখা করতে বলে। হৃদয় দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করায় ভিকটিম একাকী আসামীর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাধ্য হয়ে হৃদয় পিংকির সাথে উথলী বাসস্ট্যান্ডে দেখা করে। আসামী ভিকটিমের আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে ভিকটিম আসামীকে দেখার জন্য এসেছে বলে জানায়। একপর্যায়ে পিংকি হৃদয়ের সামনে একটি ওষুধের পাতা থেকে ৪ টি টেবলেট সেবন করে। বাকিগুলো আসামী ফেলে দেয়। ভিকটিম পিংকি আক্তার আসামীর সাথে সিনক্রিয়েট শুরু করে। ভিকটিম বারবার বলতে থাকে এই অনৈতিক সম্পর্কের কথা আসামির বড় ভাইকে বলে দেবে। পারিবারিক মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে ভিকটিমকে বুঝিয়ে বাস যোগে মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে ফেরত নিয়ে আসে। আসার পথে বাসে বসে আসামী কৌশলে ভিকটিমের মোবাইল নিজ হাতে নিয়ে মোবাইলে সংরক্ষিত ভিকটিম ও আসামীর আপত্তিকর অন্তরঙ্গ ছবি, ভিডিও ও মেসেজ ডিলিট করে। ভিকটিম বাসায় ফেরার পথে বিষয়টি বুঝতে পেরে আসামীর প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সে নিজ বাড়িতে না ফিরে আসামীর সাথে আসামীর গ্রামের বাড়িতে যেতে চায়। তখন আসামী ভিকটিমের হাত পা ধরে সিনক্রিয়েট করতে নিষেধ করে। পরবতীর্তে নাছোরবান্দা ভিকটিমকে নিয়ে পাটুরিয়া ফেরীঘাটে চলে যায় হৃদয়।
ভিকটিম বারবার বিয়ের প্রস্তাবে আসামীকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেও আসামী ভিকটিমকে বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দেয়। কথামতো পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে দুজনে রিকশা যোগে ইছাইল গ্রামের আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে উথলীর দিকে রওনা হয়। পথিমধ্যে অন্ধকারাচ্ছন্ন আমবাগানে নেমে রিক্সা বিদায় করে দেয়। তখন আসামী মনে মনে ভাবতে থাকে ভিকটিমকে মেরে ফেলার এখনই সুযোগ। হৃদয় দৈহিক মিলনের কথা বলে সুকৌশলে আম বাগানের ভিতরে নিয়ে যায় পিংকিকে। এরমধ্যে ভিকটিম দুই হাত দিয়ে আসামীকে জড়িয়ে ধরে। আসামীও ভিকটিম পিংকি আক্তারকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটি চুমো দেয়। একপযার্য়ে আসামী হৃদয় ভিকটিম পিংকি আক্তারকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় গাছের সাথে ঠেকিয়ে ভিকটিমের গলা চেপে ধরে একটু উচু করে। পরে আসামী ভিকটিম পিংকি আক্তারকে মাটিতে বসিয়ে ভিকটিমের মুখে থাকা হিজাবের কিছু অংশ দিয়ে ভিকটিমের গলায় গিট দেয় এবং হিজাবের বাকি কিছু অংশ মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। এভাবে আসামী হৃদয় ভিকটিম পিংকি আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পিংকি আক্তারের সাথে থাকা মোবাইল ও পার্স নিয়ে ঘটনাস্থ্য ত্যাগ করে। পরে আসামী ভিকটিমের ব্যবহৃত ভ্যানিটি ব্যাগ (পার্স) সামান্য দূরে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্বাস আলীর বাড়ির পাশে ফেলে দেয়। ভিকটিমের মোবাইল, সিমকার্ড ও মেমোরি কার্ড পরের দিনে সকালে অথার্ৎ সোমবার আসামীর বাড়িতে শামুক ভাঙ্গার স্থানে খবরের কাগজের উপর ইট দিয়ে টুকরো টুকরে করে ভেঙ্গে টয়লেটে ফেলে দেয়।