সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি :
বর্ষা আসতে না আসতেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে নৌকা তৈরীর ধুম পড়ে গেছে। বর্ষার আগমণকে ঘিরে হরিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। গ্রামের চারপাশে বর্ষার থইথই পানির আগাম পূর্বাভাসের সাথে সাথে গ্রামগঞ্জের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বর্ষায় কোথাও যেতে নৌকাই একমাত্র ভরসা। তবে আগের মতো এখন আর নৌকার চাহিদা নেই। তারপরও এ উপজেলার গুচ্ছ গ্রাম এবং নিচু অঞ্চলের বাসিন্দাদের বর্ষায় যাতায়াতের ভরসা একমাত্র নৌকা।
তাইতো উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং হাটবাজারে নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। চলছে নৌকা তৈরী ও মেরামতের ধুম। কেউ কাঠ কাটছে, কেউ আবার নৌকায় আলকাতরা দিচ্ছে। হাতুড়ি-কাঠের খুটখাট শব্দে, কারিগররা নৌকা তৈরীতে পুরো সময় ব্যয় করছেন। বর্ষা শেষে এসব কারিগররা কাঠমিস্ত্রি ঘর ও আসবাপত্র তৈরীতে নিজেদের মনোনিবেশ করেন। এক সময় বর্ষা মৌসুমে হরিরামপুরে চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। বর্ষার শুরুতেই এলাকার মৌসুমি জেলেরা নৌকা দিয়ে রাত-দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। উপজেলার নিচু এলাকার বাসিন্দারা নৌকার মাধ্যমে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, স্কুল-কলেজ, হাট বাজারে পারাপার হয়ে থাকে।
প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের মানুষের চলাচলের স্থলপথের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর আগের মত নৌকার ব্যবহার নেই। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের কারণে দিনদিন নৌকার ব্যবহার কমে যাওয়ায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত কারিগরদের জন্য টিকে থাকাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন কারিগররা। হ
রিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারে দেখা যায়, নৌকা তৈরির জন্য নৌকার কারিগররা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নৌকা তৈরিতে। কেউ কাঠ কাটছেন। কেউ কেউ কাঠ সমান করছেন।
কারিগরেরা বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের অবস্থা এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে। নব্বইয়ের দশকের পর যান্ত্রিক সভ্যতা ফিরে আসায় নৌকার কদর কিছুটা কমে যায়। প্রতিবছর বর্ষায় নৌকা তৈরির ধুম চলে। নৌকার কারিগর নারু মিস্ত্রি জানান, বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তাদের তৈরি নৌকা পার্শবর্তী হাটে বিক্রি করা হয়। সপ্তাহের ৬ দিন নৌকা তৈরি করে প্রতি শনিবার ঝিটকার হাটে বিক্রি করে থাকেন তারা। কেউ কেউ আবার কারখানা থেকেও নৌকা কিনে নিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, ৮ হাতের একটি নৌকা বাজারে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ১০ হাতের নৌকা সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন। একেকটি নৌকা বিক্রি করে খরচ বাদে হাতে থাকে ৩ থেকে ৪’শ টাকা এ কথা জানান তিনি।