প্রচ্ছদ সারাদেশ ঢাকা বিভাগ মাদারীপুরে আবারও ১০ টাকা চাল ও কার্ড বিতরণে অনিয়ম

মাদারীপুরে আবারও ১০ টাকা চাল ও কার্ড বিতরণে অনিয়ম

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে আবারও ১০ টাকা চাল ও কার্ড বিতরনে অনিয়ম, বাজিতপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৭৫০ কার্ড, দুইটি ডিলারের একটি ডিলার মোটামোটি ভাবে চাল দিলেও চেয়ারম্যানের শাশুড়ীর ডেইজি আফরোজ নামের ডিলারের রয়েছে চাল ও কার্ডের স্বাক্ষর নিয়ে জালিয়াতির একাধিক অভিযোগ। তাছাড়া চেয়ারম্যানের আত্মীয়-স্বজনের নামে এক একটি পরিবারে একাধিক কার্ড থাকলেও কার্ডধারীরাই জানে না তাদের নামে ১০টাকা চালের কার্ড রয়েছে। ইউনিয়নে যারা কার্ড পেয়েছে তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ লোককে ৬ বারের স্বাক্ষর দিয়ে এক বার চাল দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত ধনী ও নিজের সমর্থকদের নামে তালিকা প্রনয়ণে কারনে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রধীকার এই কর্মসূচীর সুফল পাচ্ছে না দরিদ্ররা। এতে করে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বঞ্চিত ও এলাকবাসীদের মাঝে।

রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নে মোট কার্ড পেয়েছে ৭৫০টি। চালের ডিলার চেয়ারম্যানের বড় আত্মীয় হওয়ায় গরীবদের বাদ দিয়ে, নিজিস্ব ও লোকদের নামে তালিকা করেছেন। এছাড়াও এক ব্যাক্তির নামে একাধিক কার্ড রয়েছে। এই ইউনিয়নের হত দরিদ্রদের চাল বিতারনের ডিলার ডেইজি আফরোজের নামে রয়েছে চাল বিতরণে নানা অভিযোগ। ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের লোকমান হাওলাদার সহ তার স্ত্রী, মেয়ের নামে রয়েছে কার্ড কিন্তু তারা কেউ জানে তাদের নামে ১০টাকার চালের কার্ড আছে। পরিমল চন্দ্র বৈদ্য, সেলিম হাওলাদার, হারুন হাওলাদার ও তার ছেলের নামে ১০টাকা চালের কার্ড রয়েছে। অথচ ৭বার এই ডিলার চাল বিতরণ করছে। সেই চাল তারা কেউ পাইনি। তাছাড়া হারুন হাওলাদারের নামে বয়স্কভাতা কার্ড করা হয়েছে সেটাও সে জানে না। তাছাড়া অনেকেই কার্ড দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে বিত্তবান, বাড়িতে পাকা ঘর/ টিনসেট বিল্ডিং আছে। আধাপাকা বাড়ি, টিভি ফ্রিজ এবং জমিজমা রয়েছে । মাদারীপুর এর আগেও দুটি ইউনিয়নে ১০টাকার চাল বিতরনে অনিয়ম করায় তাদের ডিলারশীপ সহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যেভাবে নেয়া হয়েছে। সেভাবেই যেন বাজিতপুর ইউনিয়নকে ১০টাকা দামের চাল বিতরণের অনিয়ম থেকে মুক্ত করা হয়।

বাজিতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভাই ৬নং ওয়ার্ডের সেলিম হাওলাদার বলেন, আমার নামে কার্ড আছে আমিতো জানি না। আমি ছাড়া আরও শাতাধিক কার্ডধারীরা জানেই না তাদের নামে কার্ড আছে। তারপর ৭ বার চাল দেয়া হয়ে গেছে সেই চাল গুলো নিলো কে? সব ঐ ডেইজি আফরোজ ডিলারের কাজ।

শাহানাজ নামে এক মহিলা সে জানতে পেরেছে ৭বার চাল নেয়ার পর তার নাম সহ তার পরিবারের তিন জনের নামে ১০টাকার চালের কার্ড আছে। এই জালিয়াতির সঠিক বিচার চাই।

নিপা নামে এক কলেজ ছাত্রী জানায় আমি ছাত্রী মানুষ আমার নামে কেন কার্ড করা হয়েছে। আর কেন আমাকে না জানিয়ে। এই চাল কোন গরিব মানুষকে দিলে সে পরিবার নিয়ে ভাল থাকতো। এই ৭বারের চাল গেল কোথায়? আমি প্রশাসনের কাছে জানতে চাই?

হারুন হাওলাদার নামে এক ব্যাক্তি জানায়, আমিসহ আমার ছেলের নামে কার্ড করা হয়েছে। আমার নামে বয়স্কভাতার কার্ড করা হয়েছে। আমি এর কিছুই জানি না। এখন এটা নিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনের কাছে দরখস্ত পড়ায় ৭বার চাল ও বয়স্কভাতার কয়েকবার টাকা উঠানোর পর এখন আমি জানতে পারলাম আমার ও আমার ছেলের নামে কার্ড আছে। এই দুর্নিতিবাজ ডিলার বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা চাই। শুধু ডিলার বাদ দিলে হবে না। তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

পরিমল চন্দ্র বৈদ বলেন আমি গরিব মানুষ আমি প্রথম যখন কার্ড হয় তখন তাদেও কাছে গেলে আমাকে জানিয়ে দেয় আমার নামে কোন কার্ড হবে না। তবে কেন ৬ বার চাল নেয়ার পর আমার বাড়ীতে ১০টাকা চালে কার্ড গেল এবং ৭বারের বার আমাকে কেন চাল দিলো এখন আমার নামে কার্ড আসলো কোথা থেকে? ৬ বারে টিপতো আমি দেই নাই।

এতো অনিয়ম হাতনাতে ধরা পড়ার পরও সবকিছু অস্বিকার করে বাজিতপুর ইউনিয়ন ডিলার ডেইজি আফরোজ বলেন, আমরা কোন প্রকার অনিয়ম করছি না। সকল প্রকার নিয়ম মেনেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া চেয়ারম্যান কি বলদ যে সবকিছু আমার হাতে ছেড়ে দেবে? আমি চালে কম দেই কিনা সেটা দেখবেন।

বাজিতপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, নিয়মে আছে এক কার্ডে নাম থাকলে অন্য আর একটি কার্ড পাবে না। আমি কি আর বলবো, আমি মসজিদে গিয়ে বলতে পারি আমার ভাইদের আমি চাল দেই। তাছাড়া অনেক নেতাকর্মি আছে যাদের ১০কেজি চাল দেয়া যায় না, তখন এদিক সেদিক করেই দিতে হয়।

মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, মো. সেফাউর রহমান বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। শুধু তাই নয় অভিযোগ প্রমানিত হলে ডিলারশীপ বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে মামলাও হতে পারে।

মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মো. আজাহরুল ইসলাম বলেন, ১০টাকা দামের চাল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগের বিষটি তদন্ত করা ও ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন আমি উপজেলা নির্বাহীকে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দেবো। যাতে সরকারের কোন প্রকার বদনাম ও গরিব , অসহায়রা বাদ না পড়ে।