প্রচ্ছদ অর্থনীতি ব্যাংক ঋণের সুদ আরো বাড়ছে

ব্যাংক ঋণের সুদ আরো বাড়ছে

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার আরো বাড়ানো হয়েছে। এই দফায় সুদ সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ বাড়বে। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদ হার বেড়ে যাবে। একই সাথে বাড়বে আমানতের সুদ হারও। ঋণের সুদহার বাড়ার কারণে ব্যবসা খরচ বাড়বে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ার সাথে দামও বাড়বে। ফলে বিপাকে পড়বেন দেশের উদ্যোক্তারা। পণ্যের দাম বাড়ার কারণে ভোক্তার ভোগান্তি আরো বাড়বে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হচ্ছে। এতে বাড়ানো হচ্ছে সুদহার। এ হার বাড়ানোর ফলে পণ্যের মূল্য আরো বেড়ে যাবে। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশল কতটুকু কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় দেখা রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত জুলাই থেকে সুদ হার নির্ধারণ করা হচ্ছে সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হারের ভিত্তিতে। সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে এর সুদহার ক্রমেই বেড়ে চলছে। ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সাথে নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসেই সুদ হার বাড়ছে। গত জানুয়ারিতে গড় ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার বাড়ে শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সর্বশেষ বিদায়ী মার্চে তা শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগে ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সাথে সাধারণত ঋণের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন শতাংশ যোগ করা হতো। গতকাল থেকে এ খাতে দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে যোগ হবে ৩ শতাংশ। ফলে সাধারণ ঋণের সুদহার বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মার্চে এ হার ছিল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এ খাতে সুদহার বাড়বে দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত জুনে এসব ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। গত ৯ মাসে এ হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পল্লী ও কৃষি ঋণের সুদহার গত জুনে ছিল ৮ শতাংশ। এখন ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সাথে ২ শতাংশ যোগ করে নতুন সুদ নির্ধারিত হবে। ফলে এ খাতে সুদ হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মার্চে ছিল ১২ দশমকি ১১ শতাংশ। ৯ মাস এ খাতে সুদ হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। একইভাবে রফতানি খাতের প্রিশিপমেন্ট ক্রেডিটের ক্ষেত্রে ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সাথে আড়াই শতাংশ যোগ করতে হবে। ফলে এ খাতে সুদ হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত মাসে ছিল ১২ দশমিক ১১ শতাংশ।

ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সাথে সাড়ে ৪ শতাংশ যোগ করে ভোক্তা ঋণের সুদনির্ধারণ করা হয়। এ হিসাবে এ খাতে সুদ হার হবে ১৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আগে যা ছিল ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ।

আজ থেকে যেসব ঋণ ছাড় করা হবে সেসব ঋণের সুদের বাড়তি হার আজ সোমবার থেকে কার্যকর করা হবে। তবে আগে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে সেগুলোর সুদহার ছয় মাস পর বাড়ানো যাবে। এর আগে বাড়ানো যাবে না।
এ দিকে ঋণের সুদহার বাড়ানোর সাথে আমানতের সুদহারও বাড়বে। ব্যাংকের আমানতের সুদহার বাড়ানোর কোনো সীমা নেই। ব্যাংকগুলো আয়ের সাথে ব্যয়ের তুলনা করে তা বাড়াতে পারবে। ইতোমধ্যে আমানতের সুদহার অনেক ব্যাংক বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত নিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকেই এ হার ডাবল ডিজিটে রয়েছে।

উদ্যোক্তারা বলেছেন, ঋণের সুদহার যেভাবে বাড়ছে তাতে ব্যবসা খরচ আরো বেড়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে ডলারের দামও চড়া। সব মিলে আমদানি পণ্যের দাম আরো বাড়বে। এতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার থেকে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলোর সুফল কতটুকু মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ দিকে সুদহার বাড়ানোর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কিছুটা কমেছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। তবে এতে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি কমে গেছে। নতুন শিল্প স্থাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।