প্রচ্ছদ সারাদেশ বৃষ্টিতে ডুবে যচ্ছে হাওরের পাকা ধান

বৃষ্টিতে ডুবে যচ্ছে হাওরের পাকা ধান

বালাগঞ্জ (সিলেট) :

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় বোরো ধান কাটার শ্রমিক সংকটে এ অঞ্চলের কৃষকদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। উচ্চ মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কৃষক-কৃষাণীরা। এমনিতেই এবছর বৃষ্টিপাতের অভাবে ফসল নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ পরিস্থিতিতে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের। হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হয় ১৫ এপ্রিলের পর। ১৬এপ্রিল রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আর ঢলের কারণে হাওরগুলো ডুবে যাচ্ছে। শিলা বৃষ্টিতে পাকা ফসলের ব্যাপক হচ্ছে।

কোনো কোনো বছর মার্চেই অকালবন্যা দেখা দেয়। তবে এবার মার্চে বৃষ্টি না হলেও এপ্রিলের শেষের দিকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। সময়মতো সোনালি ফসল ঘরে তুলতে না পারলে পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যান্য বছর বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় অধিক শ্রমিক দিয়ে তড়িঘড়ি করেই ধান কাটিয়ে নিলেও এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চলমান ‘লকডাউন’।
এদিকে ২০১৭ সালে অকালবন্যায় ফসল হারিয়েছিলেন কৃষকরা। ঠিক সেভাবে এবার হয়তো করোনা আর অকাল বন্যায় সোনালি স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারে বলে আতঙ্কগ্রস্থ তারা। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বালাগঞ্জ এলাকায় মৌসুমী শ্রমিকরা আসতো। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের শঙ্কায় এবং লকডাউন থাকায় যারা অন্যান্য বছর ধান কাটতে আসতেন, তারাও আসতে পারছেন না। এতে সময় মত অধিকাংশ কৃষক পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবেন কী না? এনিয়ে সন্দিহান রয়েছেন। সঠিক সময়ে বোরো ধান ঘরে তুলতে হলে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষি প্রণোদনার টাকা দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি এনে দ্রæত ধান কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে সরকারি এই প্রণোদনা কৃষকের কোনো উপকারে আসবে না। তকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন ধান কাটার আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কৃষকরা ব্যায়ভার বহন করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

অপর দিকে বৃষ্টিপাতের অভাবে অধিকাংশ জমিতে মড়ক ধরে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সেচ সুবিধার আওতায় থাকা জমিতে মোটামুটি ফলন হয়েছে উপজেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কৃষকরা জানিয়েছেন এবার আশাতীত ফলন হয়নি। শতভাগ ধান পাকতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। ধান কাটার শ্রমিকও মিলছে না। তারা অভিযোগ করে বলেন সারা বছর পানির জন্য হাহাকার করেছি। গত বছর উপজেলার বিভিন্নস্থানে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছিল। সেগুলো যদি চালু করা হত তাহলে ফসলের এতো ক্ষতি হতো না।
বালাগঞ্জ ইউনিয়নের রিফাতপুর গ্রামের কৃষক বিলাল মিয়া বলেন, সময় মত বৃষ্টি না হওয়ায় প্রায় ৫কেদার জমির (১৫০ শতক) ফসল এমন ভাবে নষ্ট হয়েছে নিড়ানি লাগাতে পারিনি। ফসল উৎপাদন ও শ্রমিকদের বাড়তি টাকা দেয়ায় এবার অনেক টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।
বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মুনায়েম জায়গীরদার বলেন বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর উপজেলার প্রায় দশ-বারোটি গ্রামের কৃষক পরিবারের ভাতের যোগান দেয় রউয়া হাওর। এই হাওরের পেকুয়া খালে বাঁধ না দেয়ায় অধিকাংশ জমি অনাবাদি থেকে যায়। আর যেটুকু জমি চাষাবাদ করা হয়েছিল সেচের অভাবে এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের মারত্মক বিপর্যয় হয়েছে। পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের সারসপুর গ্রামের কৃষক সদরুল হাসান নবীন বলেন আমাদের এলাকার হাওরগুলো অনেক দূরবর্তী। তুলনামূলকভাবে বড় এসব হাওর আগাম বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাই শ্রমিক সংকটের বিকল্প হিসেবে সরকারিভাবে উন্নত প্রযুক্তির আধুনিক যন্ত্র আনা হলে কৃষককুল উপকৃত হবেন।

বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে এবার সাড়ে ৭হাজার হেক্টর বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার্থে একটি কম্বাইন হারভেস্টর (ধান কাটার মেশিন) আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।