বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :
করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশে এ বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে শতকরা ১.৮ ভাগ থেকে ২.৮ ভাগের মধ্যে। অর্থাৎ এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি থাকতে পারে শতকরা ৩ ভাগের নিচে। অথচ ৬ মাস আগেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল এই প্রবৃদ্ধি হবে শতকরা ৬.৩ ভাগ। এ পূর্বাভাষ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বছরে দু’বার আঞ্চলিক অর্থনীতির বিষয়ে আপডেট প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে এই পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সরকারকে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। সুরক্ষা দিতে হবে জনগণকে।
বিশেষ করে অতি দরিদ্র ও সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে এই সেবা দিতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে এখনই ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দেয়া হয়েছে এতে। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার সব সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত করোনা ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনগণকে সুরক্ষা দেয়া। বিশেষ করে অতি দরিদ্র যে জনগোষ্ঠী আছে তাদের নাজুক স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাষ যদি সত্যি হয় তাহলে এটাই হবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর গত ৪০ বছরের মধ্যে সবেচেয়ে খারাপ আর্থিক পারফরমেন্স। যদি লকডাউন দীর্ঘায়িত হয় তবে বিশ^ব্যাংকের ওই রিপোর্টে হুঁশিয়ারি দেয়া হয় যে, অর্থনৈতিক এই মন্দা অবস্থা ২০২১ সাল পর্যন্তও বিস্তৃত হতে পারে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি শতকরা ৩.১ ভাগ থেকে ৪ ভাগ অর্জিত হতে পারে। আগে এই প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল শতকরা ৬.৭ ভাগ।
এক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস মহাারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। গার্মেন্ট খাত সহ বিভিন্ন শিল্পজাত পণ্যের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে বেকারত্বের ঝুঁকি বাড়বে। তাতে আরো তীব্র হবে দারিদ্র্য। শাটডাউনের ফলে বেসরকারি পর্যায়ে মানুষের চাহিদার ওপর প্রভাব ফেলবে। যখন প্রবৃদ্ধিকে মধ্যম মানের প্রত্যাশা করা হয়, তখন ঝুঁকি রয়েই যায়। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের আভ্যন্তরীণ প্রাদুর্ভাব এবং দশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক খাতের কারণে। এই মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। বিশেষ করে সেবাখাত, খুচরা ব্যবসায়ী ও পরিবাহন খাতের মানুষ। এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা খাত বা সামাজিক নিরাপত্তা রয়েছে সীমিত অথবা একেবারেই নেই। বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেমবন বলেন, জনস্বাস্থ্য খাতে দ্রুততার সঙ্গে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে তাৎক্ষণিক গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে সহায়তা করার জন্য এ মাসের শুরুর দিকে বিশ^ব্যাংক ১০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে। করোনা ভাইরাস শনাক্ত, প্রতিরোধ এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এ অর্থায়ন। বিশ্বব্যাংক ওয়াশিংটন সদরদপ্তর থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের ওপর আজ রোববার এ প্রাক্কলন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের জিডিপি অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরে ছিল ৮.২ শতাংশ। এই বৈশ্বিক ঋণদান সংস্থার পূর্বাভাসে শুধু এ বছর নয়, আগামী অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়াবে ১.২ থেকে ২.৯ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে একটু ঘুরে দাড়াঁলেও তা ৪ শতাংশের নিচেই থাকবে। এ পূর্বাভাস এমন এক সময়ে আসলো যখন বাংলাদেশ ১০ বছরেরও বেশি সময় টানা ৭ শতাংশের প্রবৃদ্ধির কোঠা ছাড়িয়ে ৮ শতাংশের ঘর টপকে দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করেছিল।
তবে বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী করোনাভাইরাসের ধাক্কায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সাতটি দেশের অর্থনীতিতে বড় রকমের ধস নামতে পারে। এর মধ্যে পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের জিডিপি বাড়বে না বরং সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্রমবর্ধমান মানবিক ক্ষতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিণতির মধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের জনগণ, বিশেষ করে দরিদ্রতম ও হতদরিদ্র মানুষকে রক্ষা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে দক্ষিণ এশিয়ায় আটটি দেশের প্রতিটি দেশ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দেয়া, বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে আরও বেশি চাপের কারণে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত অবস্থা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস উপস্থাপন করা হয়েছে, ২০২০ সালে আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে, যা ছয় মাস আগে প্রত্যাশিত ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ৪০ বছরে মধ্যে এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর জন্য অগ্রাধিকার হলো ভাইরাসটির বিস্তার আটকে দেয়া এবং তাদের লোকদের রক্ষা করা।
হার্টউইগ শেফার বলেন, ‘কোভিড -১৯ সংকট এই জরুরি বার্তা দিচ্ছে যে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিগুলোকে সংকট শেষ হওয়ার পর ‘জাম্প স্টার্ট’ শুরু করতে হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে এ যাবৎ কালের অর্জন বিফল হতে পারে। শহুরে দরিদ্ররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে অতিরিক্ত দরিদ্রের সংখ্যা বেশি হবে। জাতীয় শাটডাউন ব্যক্তিগত ব্যবহারকে প্রভাবিত করবে। মাঝারি মেয়াদে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার হওয়ার আশা করা হলেও, কোভিড-১৯ এর অভ্যন্তরীণ প্রাদুর্ভাব ও আর্থিক খাতের দুর্বলতা থেকে ক্ষতির ঝুঁকি রয়েই যাবে।