প্রচ্ছদ লাইফস্টাইল বাংলাদেশের ‘গভীর সামাজিক বৈষম্য’ তুলে ধরেছে করোনা

বাংলাদেশের ‘গভীর সামাজিক বৈষম্য’ তুলে ধরেছে করোনা

বিডি রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর ডটকম :

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন কয়েক ডজন মানুষ। মৃতের সংখ্যা এখন সহস্রাধিক। উপসর্গ নিয়ে অথবা চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কিছু। তবে উলটো চিত্র রয়েছে এদেশেই। অভিযোগ রয়েছে, ভিআইপি হিসেবে পরিচিতরা করোনায় আক্রান্ত হলে তারা ঠিকই পাচ্ছেন উন্নত চিকিৎসা। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে লন্ডনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।

উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রতিবেদনে করোনায় আক্রান্ত সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি কামরানকে বহনকারী হেলিকপ্টার ঢাকায় নামতেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ছোট একটা জটলা লেগে যায়। সেখান থেকে এই নেতাকে তড়িঘড়ি করে ঢাকার একটি উন্নত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এতে বলা হয়েছে, প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। কোভিড-১৯ মহামারি এসে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছে। পাশাপাশি লকডাউনের কারণে লাখ লাখ মানুষ দরিদ্রে পরিণত হয়েছে। মহামারি থেকে বাঁচতে তারা সামাজিক দূরত্ব মানছে না। সরকার বাধ্য হয়েছে মানুষদেরকে কাজে ফেরত পাঠাতে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য অংশেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণ বাড়ছে ঝড়ের গতিতে। অর্থনীতি এখনো ফিরতে শুরু করেনি। দাতব্য সংস্থাগুলো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এরমধ্যেই। কাজে ফিরলেও মানুষকে সামাজিক দূরত্ব মানতে উতসাহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশিদের বাইরে বেরুলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানভিত্তিক লকডাউন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দিয়েছে সরকার। তবে এতে আক্রান্তের সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এ মাসের শেষ দিকে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশে খুবই অল্প সংখ্যক পরীক্ষা হচ্ছে। গড়ে ১০ হাজারের মত স্যাম্পল দেখা হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু আরো হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন টেস্টের অপেক্ষায় থাকছেন। ঢাকায় পরীক্ষা করা প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের করোনা ধরা পড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাইরে পরীক্ষার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রশিক্ষণের অভাবকেই এ জন্য দায়ি করছেন তারা। তারা মনে করছেন, দেশে আক্রান্তের মোট সংখ্যা প্রকাশিত সংখ্যার থেকে অনেক বেশি। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মৃতের সঠিক সংখ্যা পাওয়া কঠিন। তাদের দাবি এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮০০ মানুষ মারা গেছে কিন্তু তার সব সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ঢাকা আজিমপুর গোরস্থানের কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, গত দুইমাস ধরে তারা স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় দুইগুন বেশি কবর খুঁড়ছেন। বনানি কবরস্থানেও দেখা গেছে একইচিত্র। আগে যেখানে প্রতিদিন একটি বা দুটি কবর দেয়া হতো সেখানে এখন প্রতিদিন ৫ জনকে কবর দেয়া হচ্ছে। রায়েরবাজার কবরস্থানকে তৈরি করা হয়েছে করোনা ভাইরাসে মৃতদের কবর দেয়ার জন্য। সেখানে এখন পর্যন্ত ৩০০ কোভিড আক্রান্তের লাশ দাফন করা হয়েছে।

এখানকার কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ ছাড়া সাধারণ মৃত্যুতে লাশ দাফনের পরিমানও বেড়েছে এই সময়ে। বাংলাদেশে চিকিৎসা খাত দীর্ঘদিন অবহেলিত হয়ে এসেছে। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের চিকিৎসা খাতে ব্যয় জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। ফলে এখানে বড় ধরণের ফাঁকা রয়ে গেছে। এতদিন এটি ধারণা করা হলেও, কোভিড-১৯ মহামারি সেটি স্পষ্ট করে দিয়েছে। দেশে মাত্র কয়েক হাজার ভেন্টিলেটর রয়েছে। আইসিইউ সংকট চরমে উঠে গেছে। চিকিৎসা খাতে দেখা যাচ্ছে বড় ধরণের বৈষম্যতা।

রিপোর্টে বলা হয়, কেউ সংক্রমিত হলে চিকিৎসা করাচ্ছেন দেশসেরা হাসপাতালে। আবার কেউ হাসপাতালে ঠাঁই না পেয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছেন। কেউ সংক্রমিত হলে তাকে হাসপাতালে নিতে এগিয়ে আসছেন একাধিক মানুষ। আবার কারো ক্ষেত্রে লাশ নেয়ার জন্যও কেউ আসছে না। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের এমন গভীর সামাজিক বৈষম্যর চিত্র লক্ষ করা গেছে বলে এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে দ্য টেলিগ্রাফ।

গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ‘ভঙ্গুর’। করোনাকালীন এই সময়ে এখানে সামাজিক বৈষম্য এতটাই প্রকট যে, অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। বিপরীতে করোনায় আক্রান্ত ভিআইপিদের দেয়া হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা।