প্রচ্ছদ হেড লাইন ফেরি রজনীগন্ধা ডুবির কারণ ‘স্টাফদের গাফিলতি’ বরখাস্ত ১১

ফেরি রজনীগন্ধা ডুবির কারণ ‘স্টাফদের গাফিলতি’ বরখাস্ত ১১

নিজস্ব সংবাদদাতা  : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পদ্মানদীতে ফেরিডুবির ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ব্লাকহেডকে দায়ী করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ব্লাকহেডের ধাক্কায় নয় স্টাফদের গাফলতি ও অবহেলার কারণে পদ্মায় ফেরি রজনীগন্ধা ডুবির ঘটনা ঘটেছে।

ফেরিডুবির তিন মাসের মাথায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় ১১ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি চাকরি থেকে একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে- রজনীগন্ধা ফেরিটির বাউন্ডারি রেলিং এবং ডেকের নিচে হালের অংশ অন্য ফেরির সঙ্গে সংঘর্ষ বা পন্টুনে ভেড়ানোর সময় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। ফেরিটি পরিচালনার ক্ষেত্রে মাস্টাররাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি।

তদন্ত প্রতিবেদনে ফেরির প্রায় সব স্টাফকে শাস্তির আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ।

সংস্থার চিফ পার্সনাল ম্যানেজার মো. ফজলে রাব্বি স্বাক্ষরিত বরখাস্তের ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্ত কমিটি সার্বিক বিষয়টি তদন্ত করে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ইনচার্জ মাস্টারের বিধি লঙ্ঘন এবং অন্যান্য কর্তব্যরত স্টাফদের চরম গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে ফেরিটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। তাই এহেন আচরণ ও কার্যকলাপ চাকরি নিয়ম শৃঙ্খলাপরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা-১৯৮৯ এর ৪৬(১) ধারা মোতাবেক চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। বিধিমোতাবেক তারা খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন। যথা সময়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হবে।

আরিচা ফেরি সেক্টরের ডিজিএম শাহ্ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, বিআইডব্লিউটিসির ওয়েবসাইট থেকে রজনীগন্ধা ফেরির স্টাফদের বরখাস্তের কপি সংগ্রহ করা হয়। তাদের গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বরখাস্ত করা হয়েছে। ৩ মার্চ বরখাস্তের আদেশ বিআইডব্লিউটিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন- ফেরির সেকেন্ড মাস্টার মো. আঞ্জুমান, ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার মেহের আলী, লস্কর মো. মুরাদ, মানিক রায়, আরিফুর রহমান, মনির আহমেদ, গ্রিজার মামুন সিকদার, এনায়েত হোসেন, মাছুম শিকদার ও হুইল সুকানী সবুজ মিয়া। এ ছাড়াও শোকজ করা হয়েছে এজিএম (মেরিন) মো. আহম্মেদ আলীসহ কয়েকজনকে। মিথ্যাচার ও দায়িত্ব পালনে চরম গাফিলতির কারণে ফেরিটির অস্থায়ী গ্রীজার মামুন সিকদারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

পাটুরিয়া প্রান্তিকে এজিএম (মেরিন) মো. আহাম্মদ আলীকে করা শোকজে বলা হয়েছে- গত ১৭ জানুয়ারি আনুমানিক সকাল ৮ ঘটিকায় ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা ৫নং ফেরিঘাটের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, রজনীগন্ধা ফেরির বাবুর্চি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ দুর্ঘটনায় সময় ফেরিতে উপস্থিত ছিলেন না এমন ৪ জন ছাড়া বাকি সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে এ জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনেকগুলো নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ছেড়ে যাওয়ার আগেই প্রতিটি ফেরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যাত্রী ও পরিবহণ ধারণক্ষমতা ফেরির সামনে লিখে রাখা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো প্রতি ট্রিপেই পালন করা হচ্ছে।

গত ১৭ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটের কাছে পদ্মা নদীতে ৯টি যানবাহন নিয়ে ডুবে যায় ‘রজনীগন্ধা’ নামে ইউটিলিটি ফেরি। এতে প্রাণ হারান ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবীর। ৮ দিনের মাথায় ফেরিটি উদ্ধার করে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। ফেরি ডুবির সময় ফেরি সেক্টরের চেয়ারম্যান বলেছিলেন বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ফেরিটি ডুবি হয়েছে!

উদ্ধারের পর ফেরিটি মেরামতের জন্য নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিসি ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।