প্রচ্ছদ হেড লাইন পাপিয়ার অবৈধ আয়ের উৎসের সন্ধানে দুদক ও সিআইডি

পাপিয়ার অবৈধ আয়ের উৎসের সন্ধানে দুদক ও সিআইডি

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার আয়-ব্যয়, অভিজাত হোটেলে বিপুল পরিমাণ টাকার বিল পরিশোধসহ তার অবৈধ আয়ের উৎসের সন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের করা মামলাটির ফাইল এত দিন র্যা বের হাতে থাকলেও এখন তা সিআইডির হাতে এসেছে। সিআইডিও মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। গত ২২ জানুয়ারি পাপিয়ার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা থানায় দু’টি মানিলন্ডারিংয়ের মামলা হয়। মামলাটি র্যা বের পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ দিকে পাপিয়ার দুই সহযোগীর ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন, সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। গতকাল রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম দিদার হোসাইন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ দিন শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে এ মামলায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানার মামলায় পাপিয়াসহ চারজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই সাথে ওই দিন শেরেবাংলা নগর থানার মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুই মামলায় পাপিয়া ও তার স্ত্রীর মতি সুমনের পাঁচ দিন করে ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সিআইডির সূত্র জানায়, পাপিয়ার মানিলন্ডারিংয়ের ফাইলে তার আয়-ব্যয়, অভিজাত হোটেলে বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধ, গাড়ি, বাড়ি ও ফাটের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার ফার্মগেটে থাকা দু’টি ফাটের কথাও রয়েছে। এসব নিয়ে র্যা ব পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সুমন র্যা বকে জানিয়েছে, তিনি ওই ফাটে ভাড়ায় থাকেন। তার পক্ষেও কোনো তথ্য দিতে পারেনি সুমন। এ দিকে সুমন ও পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের এক সদস্য জানান, র্যা ব সম্প্রতি তাদেরকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে পাপিয়ার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানিলন্ডারিংয়ের মামলা তদন্ত করার জন্য বলেছে। তারা প্রাথমিক কাজও শুরু করেছেন। শিগগির সব কিছু বেরিয়ে আসবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।

এ দিকে জেলার একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে রাজধানীতে বিলাসী জীবনযাপনের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। তারা তার আত্মীয়স্বজন, জমিজমা, বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ির খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার সাথে কার কার সখ্যতা ও কারা কারা তার পার্টিতে যেতেন তাও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। যুবলীগ থেকে বহিষ্কার হওয়া পাপিয়াকে আটকের পর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। মুখ খুলতে শুরু করেছে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন ভুক্তভোগী ব্যক্তি। পাপিয়া নরসিংদী যুব মহিলা লীগের পদ বাগিয়ে নিয়ে নানা অপকর্ম করতেন। মাদক, নারীদের দিয়ে দেহব্যবসাসহ তার বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ এনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব ব্যবসা করে পাপিয়া টাকার পাহাড় গড়েন। যার প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পাপিয়া কয়েক বছরও আগেও সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। তারা কাপড়-চোপড় অতি সাধারণ ছিল। কয়েক বছর থেকে তিনি উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন করছেন। রাজধানীর ফার্মগেটে তার একটি ফাটের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও নরসিংদী শহরে নামে-বেনামে তিনি অনেক জমি কিনেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্নজনকে চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।