প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ নড়াইলসহ পাঁচ জেলার অন্তত ১৩ হাজার কৃষক বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায়!

নড়াইলসহ পাঁচ জেলার অন্তত ১৩ হাজার কৃষক বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায়!

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি : শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের একের পর এক বোরো বীজতলা। এরই মধ্যে নড়াইলের যশোর খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট, ১০ শতাংশ বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, আগামী ১০ জানুয়ারির পর বয়ে যেতে পারে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থায় বীজতলা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পাঁচ জেলার অন্তত ১৩ হাজার কৃষক। পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে। এর মধ্যে খুলনার দীঘলিয়ার কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, উপজেলার পানিগাতি গ্রামের দুই কেজি ধানের একটি বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া মুরগির বর্জ্য ব্যবহার করায় অনেক বীজতলা লাল হয়ে যাচ্ছে। ফুলতলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রিনা খাতুন বলেন, ছাতিয়ানি গ্রামের কয়েকটি বীজতলা এরই মধ্যে লাল হয়ে গেছে। কোল্ড ইনজুরি প্রতিরোধে কৃষকদের করণীয় বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যশোরের মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, তীব্র শীতের কারণেই মূলত বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। এ উপজেলার জলকর রহিতা, খেদাপাড়া, চাঁদপুর, দীঘিপাড়, হানুয়া, মহাদেবপুর ও খানপুর গ্রামের বেশকিছু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকদের ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বীজতলায় বিকালের দিকে গরম পানির প্রবাহ ঢুকিয়ে সকালে বের করারও পরার্শ দেয়া হচ্ছে। মণিরামপুরের জলকর রহিতা গ্রামের চাষী আবুল খায়ের জানান, তার তিন কাঠা জমির বীজতলা লালচে হয়ে শুকিয়ে গেছে। একই অভিযোগ ওই গ্রামের কৃষক গোলাম হোসেন ও জয়নালেরও। গোলাম হোসেন জানান, তার তিন কাঠা জমির বীজতলা নষ্ট হয়েছে। আর ১০ কাঠা জমির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জয়নাল। এদিকে সাতক্ষীরার আশাশুনির বুধহাটা, কুল্যা, কাদাকাটি, দরগাহপুর, বড়দল ও শোভনালীসহ অন্য ইউনিয়নেও বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ১৫-২০ দিন আগে যারা তৈরি করেছিলেন, তাদের বেশির ভাগেরই বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত ঠা-া ও কিছু জমিতে লোনার প্রভাবকেই বীজতলা নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে। ফলে বীজতলা রক্ষায় প্রতিদিন ঠা-া পানি বের করে দিয়ে নতুন পানি দেয়া ও ভোরে চারার কুয়াশা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। দাউদ হোসেন, আবুল হাসেম মোড়ল, হারুন সরদার, ছাইদুর, বিল্লাল, সহিদ ও জালালসহ আশাশুনির বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, এ বছর এমনতিইে চড়া দামে বীজ কিনতে হয়েছে। তার ওপর বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এখন তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। নিরুপায় হয়ে এখন তারা চড়া দামে চারা কিনে রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একই কথা জানান নড়াইলের খারারিয়া গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, এ মৌসুমে খুলনা অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮৯১ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা হয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এ থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টন।