প্রচ্ছদ অর্থনীতি দেশে সাড়ে ১৬ লাখ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার কারণ কী?

দেশে সাড়ে ১৬ লাখ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার কারণ কী?

দিন দিন গ্রাহকদের আস্থা কমছে ব্যাংকগুলোর প্রতি। ফলে ব্যাংকিং সেবায় অসন্তুষ্ট গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়ছেই। ২০১৭ সালে ব্যাংকের সেবায় অসন্তুষ্ট হয়ে সাড়ে ১৬ লাখ গ্রাহক তাদের হিসাব বন্ধ করে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘সাসটেইনেবিলিটি ইন সার্ভিস কোয়ালিটি অ্যান্ড কাস্টমার্স কনফর্মিটি: ড্রাইভার্স অব কাস্টমার্স লয়েলিটি টু ব্যাংকস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়: ব্যাংকিং সেবায় অসন্তুষ্ট গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৪ সালে মোট গ্রাহকের ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ অসন্তুষ্ট হয়ে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দিয়েছেন। ২০১৫ সালে এ ধরনের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৮১টি ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে অসন্তুষ্টিজনিত কারণে। যা দেশের মোট ব্যাংক হিসাবের সাড়ে ১২ শতাংশ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন ও প্রভাষক লামিয়া রহমান, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অ্যাক্টিং হেড অব রিটেইল এম খোরশেদ আনোয়ার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি ও কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জহির হোসেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়: প্রতিবছর গ্রাহকরা ব্যাংক হিসাব বন্ধ করলেও ৫৬ শতাংশ ব্যাংকে এ বিষয়ে গ্রাহকদের কোনো সাক্ষাৎকার নেয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব ব্যাংক হিসাবধারীর কোনো রেকর্ডও সংরক্ষণ করা হয় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকদের আরও ভালো সেবা দিতে হবে। একই সঙ্গে কেন ব্যাংক হিসাব বন্ধ হচ্ছে তা জেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন: ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণেই ব্যাংকিং খাতে কর্মীদের কিছু সৌজন্যতা শিখিয়ে দিতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ গ্রাহকদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করে না। ব্যাংকারদের গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে হবে। একজন ভালো ব্যাংকার হবেন একজন ভালো জনসংযোগ কর্মকর্তা।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন: অর্থনীতিতে গ্রাহক সন্তুষ্টি সাফল্য অর্জনের অন্যতম নিয়ামক। ব্যাংকিং খাতে ভালো পণ্যের সঙ্গে ভালো সেবা প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কোনো অভিযোগ আসলে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় দাবি করে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন: ব্যাংকিং খাতের গ্রাহকদের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। গ্রাহকদের মধ্যে ক্যাটাগরি করে পরিকল্পনা করলে সেটি ইতিবাচক ফল নিয়ে আসবে।

অনুষ্ঠানে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি এবং দ্রুত সেবা দেয়ার জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক মঈনুদ্দিন আহমেদ।

ব্যাংকগুলো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ছে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন: যে ব্যাংকের কৌশল যত উন্নত তারা বেশি মুনাফা করে। গ্রাহককে উত্তম সেবা দিয়েই কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীরর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী প্রমুখ।