প্রচ্ছদ রাজনীতি দুর্ঘটনায় মৃত্যু, হাসিমুখে মন্ত্রীর জবাবে তুমুল সমালোচনা

দুর্ঘটনায় মৃত্যু, হাসিমুখে মন্ত্রীর জবাবে তুমুল সমালোচনা

রাজধানীতে বাসচাপায় দুই কলেজছাত্রের মৃত্যু আর বাসের দরজার ধাক্কায় রক্তাক্ত তরুণকে মৃত ভেবে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া নিয়ে প্রশ্ন নৌমন্ত্রীর কাছে। আলোড়ন তোলা মর্মান্তিক দুটি প্রশ্নে মন্ত্রীর জবাব এলো হাসিমুখে।

মন্ত্রী বললেন বটে, যার যেটুকু অপরাধ, তার শাস্তি হবে ততটুকু। কিন্তু মন্ত্রীর মুখে চওড়া হাসি নিয়ে এই বক্তব্যের কারণে উঠেছে তুমুল সমালোচনা।

ফেসবুকে এখন মন্ত্রীর সমালোচনা করে বহুজন নানা কথা লিখছেন। তুষার খান নামে একজন লেখেন, ‘মৃত্যুর কথা শুনেও একজন মন্ত্রী কী করে হাসতে পারে?’

মামুন আল জিহাদ বলেন, ‘আমার কিছু বলার ভাষা নেই । এগু‌লো শুধু আমার দে‌শের মা‌টি‌তেই দেখা যায়।’

রিজওয়ান হোসেন বাপ্পী লেখেন, ‘আসলে কিছু বলার ভাষা আমি পাচ্ছি না…আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি……এতো ভয়াবহ ঘটনার পর একটা মানুষ এইভাবে হাসতে হাসতে উত্তর দিতে পারে?’

রবিবার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা কলেজ ছাত্রদের গায়ে বাস তুলে দেন এক চালক। এক ছাত্রী আর নিহত দুই জন এবং আহত অন্তত ১০ জন রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র। তাদের মধ্যে ছয় জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি।

একই দিন সচিবালয়ে একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন নৌমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, তিনি পরিবহন শ্রমিক নেতা বলে।

মন্ত্রী শুরুতে বলবেন না বলেও পরে শুরু করেন কথা। এ সময় তিনি পুরোটা সময় হাসতে থাকেন। হাসতে হাসতেই তিনি বলেন, এ প্রোগ্রামের সঙ্গে কি এটা রিলেটেড? আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, যে যতটুকু অপরাধ করবে, সে সেভাবেই শাস্তি পাবে।’

শাজাহান খান আরও বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন ভারতের মহারাষ্ট্রে গাড়ি দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছেন। এখন সেখানে কি…আমরা যেভাবে এগুলোকে নিয়ে কথা বলি? এগুলো কি ওখানে বলে? আমি মনে করি এ বিষয়ে যদি আপনারা আলোচনা করতে চান, এটা নিয়ে পরে আলোচনা হবে।’

এ সময় এক সাংবাদিক বলেন, মহারাষ্ট্রে এক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা যাওয়া, আর রেগুলার দুর্ঘটনা ঘটা….’। তখন নৌমন্ত্রী তাকে শেষ করতে না দিয়ে বলেন, ‘আপনি কী জানেন ভারতে প্রতি ঘণ্টায় কত লোক দুর্ঘটনায় মারা যায়? ১৬ জন। আপনারাই রিপোর্ট করেছেন।’

শাজাহান খানের পরিবহন ব্যবসাও আছে। আর চালকদের পক্ষে কথা বলে তিনি নানা সময় সমালোচিত হয়েছেন।

মন্ত্রীকে এই দুর্ঘটনার পাশাপাশি গত ২১ জুলাই হানিফ পরিবহনের যাত্রী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়েও জানতে চান সাংবাদিকরা।

নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হলেও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বরাবর প্রশ্নের মুখে পড়েন ২০১১ সালে চালকদের পক্ষ নিয়ে তার মন্তব্যের কারণে। লাইসেন্সে কড়াকড়ির বিষয়ে আর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের সাজার দাবিতে নাগরিক সমাজের একটি অংশ নানা কর্মসূচি পালন শুরু করলে মন্ত্রী সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাস্তবতা হলো দেশে চালকের সংকট আছে। আর এই বাস্তবতার ভিত্তিতে অশিক্ষিত চালকদেরও লাইসেন্স দেওয়া দরকার। কারণ, তারা সিগনাল চেনে, গরু-ছাগল চেনে, মানুষ চিনে। সুতরাং তাদের লাইসেন্স দেওয়া যায়।’

এই বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা মন্ত্রী কখনও দেননি।–ঢাকাটাইমস