প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ ঢাকার রাস্তায় বাস কম, বিপাকে মানুষ

ঢাকার রাস্তায় বাস কম, বিপাকে মানুষ

রাজধানীর ফার্মগেটে সকাল ১১টায় বিআরটিসির বাস কাউন্টারের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি। বিআরটিসি বাস ছাড়া সড়কে কোনো বাস না পেয়ে সবাই এই বাসের কাউন্টারে ভিড় করছিলেন। বিআরটিসি বাসও খুব বেশি ছিল না।

গণপরিবহনের সংকটে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে বিসিএস, ব্যাংক ও সরকারি চাকরির নিয়োগের পরীক্ষাও আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গন্তব্যের বাস না পেয়ে মানুষের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো।

মিরপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শুক্রাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে বিআরটিসি বাস ছাড়া অন্য কোনো পরিবহনের বাস নেই। মানুষ হেঁটে বা রিকশায় করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। অল্প কিছু অটোরিকশা থাকলেও তা ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না।ফার্মগেটে বিআরটিসি বাসের কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভীড়। ছবি: মোছাব্বের হোসেনফার্মগেটে বিআরটিসি বাসের কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভীড়। ছবি: মোছাব্বের হোসেনফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে বিআরটিসি বাসের যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সকালে বের হয়েছি আজিমপুর থেকে। সেখান থেকে ভিআইপি ২৭ বাসে উঠে গাজীপুর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখি সেখান থেকে ওই বাস চলছে না। পরে সেখান থেকে হেঁটে নীলক্ষেতে আসি। বাস না পেয়ে রিকশায় করে ফার্মগেটে আসি। এখানেও গাজীপুরে যাওয়ার কোনো বাস না পেয়ে বিআরটিসির আবদুল্লাপুরের বাসের জন্য রোদের মধ্যে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাস পাচ্ছি না।’ মিজানুরের সামনে আরও ৩২জন যাত্রী ছিলেন যাঁদের অনেকের অবস্থাই মিজানুরের মতো।

বিআরটিসি ফার্মগেট কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘ভাই, গত কয়েক দিনে আমাদের বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। তাই বাম কম। এ ছাড়া ফার্মগেট থেকে অন্য বাসগুলোও চলছে না। তাই ভিড় বেশি।’

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে বাসের অপেক্ষায় অনেক মানুষ অপেক্ষা করছেন। রিকশাও কম। তাই অনেকে দুজন মিলে একটি রিকশা ভাড়া করছেন। সেখানে কথা হয় আবুল মতিনের সঙ্গে। তিনি সাভার যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছেন। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাসের দেখা পাননি। মতিন বলেন, ‘মেয়ের বাসা সাভারে। সেখানে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছি। দেখি বাস নেই। বাস না পেলে বাড়ি ফিরে যেতে হবে।’কারওয়ান বাজারের রাস্তায় বাস চোখে পড়ে নি। ছবি: মোছাব্বের হোসেনকারওয়ান বাজারের রাস্তায় বাস চোখে পড়ে নি। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

শাহবাগের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, মিরপুরে যাবেন তিনি। বাসের জন্য দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। বাস না পেয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত রিকশায় যাওয়ার পর আবার সেখান থেকে রিকশায় মিরপুর গিয়েছেন।

প্রেস ক্লাব এলাকায় দেখা গেছে, সেখানে বিভিন্ন পরিবহনের বাস এমনিতেই চেকিংয়ের জন্য থামে। কিন্তু আজ সকাল থেকে সেখানে তেমন কোনো বাস দেখা যায়নি। ওই এলাকার চায়ের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বাসের আজকে রাস্তায় বাস নেই বললেই চলে।

আজিমপুরের ভিআইপি ২৭ নম্বরের এক চালক বলেন, গত কয়েক দিনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় তাঁরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাস চালাতে পারেননি। তাই আজও তারা বাস রাস্তায় নামেননি।

আজ ৩৯তম বিসিএস, ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা আছে। বিসিএসের পরীক্ষা আছে এমন একজন পরীক্ষার্থী জানান, তাঁর পরীক্ষা বিকেলে। তিনি মিরপুরে থাকেন। তাঁর সিট পড়েছে যাত্রাবাড়ী। এই পথ তিনি কীভাবে যাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত।বাসের জন্য যাত্রীর অপেক্ষা। ছবি: দীপু মালাকারবাসের জন্য যাত্রীর অপেক্ষা। ছবি: দীপু মালাকাররাজধানীর প্রধান চারটি বাস টার্মিনাল গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও ফুলবাড়িয়া থেকে গতকাল সারা দিন কোনো বাস ছাড়েনি। ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস আসেনি। রাজধানীর ভেতর এবং ঢাকার সঙ্গে আশপাশের জেলার গণপরিবহন চলাচল করেনি। মহাখালী থেকে সন্ধ্যার পর কিছু বাস চলাচল শুরু হয়। হঠাৎ বাস বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। মোটরযান আইন অনুসারে কোনো ঘোষণা ছাড়া বাণিজ্যিক যানবাহন বন্ধ রাখার শাস্তি হলো গাড়ি চলাচলের অনুমোদন বাতিল। মোটরযান আইনে বাস-মিনিবাসের অনুমতির অন্যতম শর্ত হচ্ছে গাড়ি চলাচল নিয়মিত এবং অব্যাহত রাখতে হবে

তবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ আজ সকালে সায়েদাবাদে গিয়ে শ্রমিকদের বাস চালানোর অনুরোধ করেছেন।
২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম নিহত হয়। তাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকায় চলমান ছাত্র বিক্ষোভ ঠেকাতে সরকার নানা আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীরা আস্থা পায়নি। তারা লাইসেন্স পরীক্ষা করায় নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন করছে। আন্দোলনের পঞ্চম দিনে গতকাল ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে শিক্ষার্থীরা গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র চেক করেছে। মন্ত্রী, সাংসদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বহনকারী গাড়িও এই তল্লাশি থেকে বাদ যায়নি।