প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয়’

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে নয়’

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়।

রোববার বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক; ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় সংসদে ১৯ সেপ্টেম্বর পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আরো আলোচনার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সাথে তিন মন্ত্রীর বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। পাশাপাশি শীর্ষ সাংবাদিক সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজে এবং ডিআরইউর নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আইনটির বিষয়ে আলোচনা করেছেন মন্ত্রীরা।

সম্পাদক পরিষদকে আলোচনার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সংবিধান সমুন্নত রাখা, গণতন্ত্রের প্রসার ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। এ অবস্থায় আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও কতিপয় ধারা সম্পর্কে আপত্তি সরকার আমলে নিয়েছে। সেজন্যই এ আলোচনার সূত্রপাত।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারই তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন গঠন করেছে, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে ডিজিটাল আপদ-বিপদ-উৎপাত থেকে জনগণ ও দেশকে রক্ষার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিকল্প নেই। কারো বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো মিথ্যা অপবাদ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার মতো জঘন্য অপরাধ বা ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এমন কিছু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার মতো ঘৃণ্য কাজের শাস্তির বিধান থাকতেই হবে। এজন্যই এ আইন, গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়।’

‘তারপরও এ বিষয়ে ভিন্নমত বা আপত্তি-উদ্বেগ থাকলে আলোচনার মাধ্যমেই তা নিষ্পত্তির জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে’ বলেন হাসানুল হক ইনু।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এ আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা সবাই একমত। কিন্তু এ আইন যেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন  না করে সেটিও দেখতে হবে। আইনের ৮, ২১ এর অংশ বিশেষ, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ যে উদ্বেগ জানিয়েছেন, তা আগামীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করা হবে।’

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম তথ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীবর্গ ও তথ্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এ আইনের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ লিখিতভাবে জানিয়েছি। সবাইকে আইনটি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। তথ্যমন্ত্রীর আহ্বানে আমরা আমাদের মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজনের বিষয়েও আমরা একমত। কিন্তু সংসদীয় কমিটির সাথে সম্পাদক পরিষদের তৃতীয় বৈঠকটি না হওয়া দুঃখজনক। আইনটি সংশোধনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সম্পাদক পরিষদের সদস্যের মধ্যে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মতিউর রহমান, মতিউর রহমান চৌধুরী, নুরুল কবীর, ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজাম, এ এম এম বাহাউদ্দিন, এম সামসুর রহমান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, জাফর সোবহান ও মুস্তাফিজ শফি বৈঠকে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

এদিন, বিকেলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠকে তথ্যমন্ত্রীর সাথে ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী যোগ দেন।

বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, ডিইউজের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজের সহ-সভাপতি খন্দকার মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী এবং ডিআরইউর সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সহ-সভাপতি গ্যালমান শফি এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে তাদের খোলামেলা মতামত তুলে ধরেন।  পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর এর অপপ্রয়োগ যাতে না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব মো. আবুয়াল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভা দুটিতে উপস্থিত ছিলেন।