প্রচ্ছদ সারাদেশ টাঙ্গাইলের মধুপুরে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কলা,খাচ্ছে বানর ও হনুমান

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কলা,খাচ্ছে বানর ও হনুমান

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে করোনার প্রভাবে কোটি-কোটি টাকার উৎপাদিত কলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে এসব কলা কলা। যাচ্ছে বানর ও হনুমানের পেটে। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের সহস্রাধিক কলাচাষী।

কলার রাজধানী খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুরের গড়াঞ্চল। লালমাটি কলা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী বিধায় এ এলাকার উৎপাদিত কলা ঢাকা, রাজশাহী, কক্সবাজার, টেকনাফ, সিলেট, নাটোর, ভৈরবসহ দেশের নানা জেলায় মধুপুর গড়াঞ্চলের কলার সমাগম ঘটে থাকে।

এ অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলো কৃষি। আনারস ও কলা মূলত এ অঞ্চলের মানুষদের অর্থনীতি সচল রাখে। প্রতি বছর কোটি-কোটি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। সারা বছর কলা উৎপাদিত হয়। এখানে কলাকে কেন্দ্র করে চাষী, শ্রমিক, কুলি, পরিবহণ ও পরিবহণ শ্রমিকসহ নানা মানুষের রুটি-রুজি হয়। কলা চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ বেশি হয়। প্রতিটি কলা গাছে কলা বিক্রি পর্যন্ত গাছ প্রতি খরচ হয় এক থেকে দেড়শ টাকা। ১ বিঘা জমিতে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ কলা গাছ লাগানো যায়। এতে পরিচর্যা করতে প্রতিবিঘা খরচ হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

এজন্য এলাকার কৃষকরা ব্যয়বহুল কলা চাষের অর্থের যোগানের জন্য বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও এবং গ্রাম্য মহাজনদের নিকট থেকে বড় সুদে ঋণ নিয়ে কলা চাষে বিনিয়োগ করে থাকে।

তবে চলতি বছর সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনার প্রভাব পড়ায় কলা কেনা-বেচা থমকে গেছে। এজন্য কলার ক্রেতা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে কলা চাষীদের ব্যয়বহুল অর্থে উৎপাদিত কলা নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন চাষীরা। কী দিয়ে তাদের ধার-দেনা, ঋণ পরিশোধ করবে এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাগানে কলা গাছেই কলা পাকতে শুরু করায় কৃষদের চিন্তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

শামছুল আলম, নজরুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেনসহ আরও অনেক কলাচাষী জানান, ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৩০ থেক ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ রয়েছে তাদের। এবার কলার বাজার ও বিক্রি থমকে থাকায় প্রতি কৃষকেরই ব্যাপকভাবে লোকসান গুনতে হবে। সার, বিষ, মেডিসিন, ভিটামিনসহ নানা কৃষি পণ্যের দোকানে বাকি, শ্রমিকের মজুরী, বড় সুদের ঋণের বোঝা রয়েছে মাথার উপর। এ নিয়ে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

কলার ব্যাপারী আব্দুল জলিল জানান, এই এলাকা থেকে কলা কিনে চট্টগ্রাম, ঢাকা, সাতকানিয়া, কক্সবাজার, সিলেট, টেকনাফ, ভৈরবসহ নানা জেলায় কলা কিনে পাঠাতাম। এখন সব মোকাম বন্ধ। এ বছর কৃষক, পাইকার, চাষী প্রত্যেকেরই লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কলা চাষী রিপন মিয়া জানান, প্রতি বছর তিনি প্রায় কোটি টাকার কলা বিক্রি করেন। এ বছর কলা চাষের খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান বলেন, উপজেলার কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে কলা চাষীদেরও প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।