প্রচ্ছদ জাতীয় জাবালে নূরের ৩ চালকের কারও বাস চালানোর লাইসেন্স নেই

জাবালে নূরের ৩ চালকের কারও বাস চালানোর লাইসেন্স নেই

বাসচাপায় প্রাণ হারায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম ও আবদুল করিম।

প্রাইভেট কার চালানোর লাইসেন্স রয়েছে তাঁদের। আর এই লাইসেন্স দিয়ে দিব্যি ৪০ আসনের বাস চালিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছাড়াই জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস চালিয়ে আসছিলেন মাসুম বিল্লাহ, জুবায়ের ও সোহাগ নামের তিন চালক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি করেন এই তিন চালক।

গত রোববার রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় প্রাণ হারায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম (১৬)।

এ ঘটনার পর মিরপুর ও বরগুনা জেলায় অভিযান চালিয়ে জাবালে নূরের তিনটি বাসের এই তিন চালক এবং তাঁদের দুই সহযোগী এনায়েত ও রিপনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১)। গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে ক্যান্টনমেন্ট থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর এই চারজনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হতে পারে। আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত চালক মাসুম বিল্লাহ র‍্যাব হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আবদুল্লাহপুর থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহনের বাসটির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে দুই শিক্ষার্থী। ছবি: প্রথম আলোআবদুল্লাহপুর থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহনের বাসটির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে দুই শিক্ষার্থী। ছবি: প্রথম আলো

ক্যান্টনমেন্ট জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তাপস কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাব দুজন চালকসহ চারজনকে থানায় হস্তান্তর করেছে। ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ভারী যান চালানোর লাইসেন্স নেই
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া জাবালে নূরের তিন বাসচালক মাসুম বিল্লাহ, যুবায়ের ও সোহাগের কাছে পাওয়া গেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) অপেশাদার চালকের লাইসেন্সের তিনটি কার্ড। এসব কার্ডে ইংরেজি বর্ণে লেখা ছিল এলসি (হালকা যান)। এই লাইসেন্স ব্যবহার করে পেশাদার চালক হিসেবে ভারী যান চালিয়ে আসছিলেন মাসুম, যুবায়ের ও সোহাগ। তাঁদের লাইসেন্সগুলো যাচাই করতে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, অপেশাদার লাইসেন্সধারী চালকেরা কখনোই ভারী যানবাহন চালাতে পারবেন না। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা দিয়ে পেশাদার চালকের লাইসেন্স নিতে হবে। অপেশাদার লাইসেন্সধারী একজন চালক সর্বোচ্চ ১২ আসনের বেশি কোনো যানবাহন চালাতে পারবেন না।

শিক্ষার্থীদের ওপর বাস, ক্ষেত্র তৈরি হয় যেভাবে
জাবালে নূরের যে তিনটি বাসের রেষারেষিতে এ ঘটনাটি ঘটে, সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। এই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাসুম বিল্লাহ। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ নম্বর বাসের চালক ছিলেন জুবায়ের এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০ নম্বরধারী বাসটির চালক ছিলেন সোহাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, তিন চালকের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু আগে মাটিকাটা হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে উড়ালসড়কের ঢালুতে আড়াআড়ি করে বাস থামিয়ে ফেলেন চালক জুবায়ের। জুবায়ের তাঁর বাসটিকে ডান দিকে মুখ করে এমন করে থামান যে অন্য কোনো যানবাহন যেন তা অতিক্রম করতে না পারে। আড়াআড়ি করে মিনিট দু-এক সময় নিয়ে জুবায়েরের বাস থেকে যাত্রী নামানো হয়। বেশ কয়েকজন যাত্রী নেমে গেলে আবার যাত্রী তুলতে থাকেন বাসটির সহকারী (পলাতক)।

কুর্মিটোলা থেকে যাত্রী পাওয়ার আশায় মাটিকাটায় ২৩ ফুট চওড়া উড়ালসড়কে নিজেদের বাস নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করেন দুই চালক মাসুম ও সোহাগ। কিন্তু উড়ালসড়কের ঢালে আরেকটি জাবালে নূর বাস দেখতে পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে অতিক্রম করার চেষ্টা করেন মাসুম বিল্লাহ। তবে নিজের বাসের গতি আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি মাসুম। সরাসরি বাঁ দিকে ফুটপাতে বাসটি তুলে দেন তিনি। সেখানে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম, দিয়া খানমসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।