প্রচ্ছদ সারাদেশ রংপুর বিভাগ কুড়িগ্রাম-২ঃ জাতীয় পার্টির দুর্গ আ’লীগের দখলে

কুড়িগ্রাম-২ঃ জাতীয় পার্টির দুর্গ আ’লীগের দখলে

এ.এস.লিমন রাজারহাট( কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা কুড়িগ্রাম। ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ জেলার মোট ৯টি উপজেলা নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন।
এর মধ্যে (কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী) উপজেলা নিয়ে কুডিগ্রাম-২ আসন। এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বিরোধীদলীয় (জাতীয় পার্টি) চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি এ আসন থেকে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
একসময় গোটা কুড়িগ্রাম জাতীয় পার্টির (এ) দখলে ছিল। সময়ের পরিক্রমায় এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বলতে গেলে অনেকটা উল্টে গেছে! এ আসন এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতে। সাংগঠনিক দিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগের পরেই এখানে জাতীয় পার্টির অবস্থান। যদিও এ ব্যবধান অনেক বেশি। আর বিএনপির অবস্থা এখানে একবারেই নাজুক। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই তাদের সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।
জাতীয় পার্টির দুর্গ কি করে আওয়ামী লীগের দখলে? কেন উল্টে গেলো ভোটের পাশা? উত্তর খুঁজতে কথা হয় রাজারহাট উপজেলার সাধারণ ভোটার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে। তারা জানান,সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয়(জাতীয় পার্টি ) চিফ হুইফ তাজুল ইসলাম চোধুরী মৃত্যু বরণ করায়।পনির উদ্দিন আহমেদকে কুড়িগ্রাম জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব করেন এবং আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ঃ আসনে জাতীয়পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী পনির উদ্দিন আহমেদ। তাতে জাতীয় পার্টি সাংগঠনিকভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে । দলের নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্ত। যোগ দিচ্ছেন আ’লীগ দলে। সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে নেতৃত্বের সঙ্কট। বিপরীতে জাতীয় পার্টির এমন বিপর্যস্ত দশার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছে আওয়ামী লীগ।
এ সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী পনির উদ্দিন আহমেদ,সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও আব্দুস সালাম এদের মধ্যে কে যোগ্য নেতৃত্ব দিবে তা নিয়ে সমস্যার সঙ্কটে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, নিজের আধিপত্য ধরে রাখতেই যোগ্য ব্যক্তিকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এজন্য হতাশ হয়ে অনেক নেতাকর্মী অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির মতো বিএনপির অবস্থানও এ আসনে নাজুক। দলের কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। জাতীয় এবং দলীয় কর্মসূচিগুলোতে থাকে না কোনো তৎপরতা। আর যেসব কর্মসূচি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় সেগুলোও নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে ঠিকঠাক পালন হয় না। এ জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দুষছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বাড়িও এ আসনে। তবে এখানকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই তার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, উনি তো বিএনপির ‘দফতরের নেতা’, তৃণমূলের খোঁজ জানবেন বা রাখবেন কি করে। তাকে এখানকার কেউ তেমন একটা চেনেও না।যদিও দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো না, তার মধ্যেও দু’টি গ্রুপে বিভক্ত এখানকার বিএনপি।
তবে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু ও যুগ্ম-সম্পাদক সোহেল হোসেন কায়কোবাদ।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবার আগে উঠে আসে কুড়িগ্রাম জেলা আ’লীগের সাঃ সম্পাদক, সাবেক এমপি,জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলীর নাম। নেতাকর্মীদের কাছে তিনি দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। রাজনীতির শুরুতে সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন থেকে বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
নির্বাচনী হালচাল ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজারহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুনুর মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, কুড়িগ্রাম-২ঃ আসনের নির্বাচনে জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর আলী অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এটা তিনি গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রমাণ করে দিয়েছেন। এমনকি তার সমকক্ষ রাজনীতিবিদ অন্য দলেও নেই। সেজন্য এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও তিনি প্রতিটা উপজেলায় সপ্তাহে দু’একবার করে যান। তিনি বসে থাকার মতো লোক না। প্রতিটা নেতাকর্মীর খোঁজ-খবর রাখেন।
আর আমাদের নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা যুবলীগ নেতা এ্যাডঃরুহুল আমিন দুলালসহ আরও বেশ কয়েকজন রয়েছেন। নেএী মনোনয়ন যাকে দিবেন আমার সবাই মিলে তার পক্ষে কাজ করব।
এ প্রসঙ্গে মোঃ জাফর আলী জানান, আমার মনোনয়ন বড় কথা নয়, দলের জন্য কাজ করছি দীর্ঘদিন ধরে। মানুষের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। সারা দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই।
আমি বিগত বছর গুলোতে জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি এবং হচ্ছে। আমার বিশাস আওয়ামীলীগের প্রার্থীকেই ভোটাররা ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। আমিও মনোনয়ন চাইব। তবে নেএী যাকে মনোনয়ন দিবেন সবাই মিলে তার পক্ষে কাজ করব।